প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ০৯:৫৫ এএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩ ১০:০৭ এএম
ইউক্রেনের সেনাদের একটি সাঁজোয়া যুদ্ধ গাড়িতে করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে ভিন্নমত পোষণকারী রুশ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত দুটি আধাসামরিক বাহিনী। সম্প্রতি নিজ দেশে হামলা চালিয়ে তারা ইউক্রেনে ফিরেছে এক রুশ সাঁজোয়া যান নিয়ে। সেটিকে নিজেদের লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার স্মারক হিসেবে তুলে ধরেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে রুশ সীমান্ত পার করে বেলগোরোদ অঞ্চলে রাশিয়ার শহরে হামলা চালিয়েছে তারা। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দাবি, ওই যোদ্ধারা নিজেদের ইচ্ছাতেই লড়াই করেছে। এতে তাদের কোনো হাত নেই। কিন্তু এ দাবি সত্য নয়। কারণ ফ্রিডম ফর রাশিয়া লিজন এবং রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কর্পস নামের ওই দুটি বাহিনীর সদস্যরা রাশিয়ার নাগরিক এবং তারা ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দেশনার অধীনে রয়েছে।
গত বুধবার চরম ডানপন্থি রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কর্পসের নেতা ডেনিস নিকতিনকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে সিএনএন। প্রশ্ন রাখা হয়, ‘যা ঘটেছে তা কি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অসমন্বিত কোনো স্বাধীন ঘটনা, নাকি তারা আপনাদের নির্দেশনা দিয়েছে?’ নিকতিন উত্তর দেন, ‘অবশ্যই, আমরা যা করি, রাশিয়ার সীমান্তের ওই পারে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত যা নিই… তা আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
তবে কিছু উৎসাহ, সাহায্য এবং সহযোগিতা থাকে বলে স্বীকার করেন তিনি। নিকতিন বলেন, ‘আমরা যা করি তা আমরা আমাদের ইউক্রেনীয় কমরেডদের, বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করতে পারি, পরিকল্পনায় তাদের সহযোগিতা চাইতে পারি। যেমনÑ আপনারা এটি নিয়ে কী মনে করেন? এই মিশন আদৌ সম্ভব কি না তা আমাদের বলতে পারেন? ইউক্রেনকে কি লড়াইয়ে এটি সহায়তা করবে নাকি সবকিছু প্রতিকূল দিকে ঠেলে দেবে?’
‘তারা আমাদের হয় হ্যাঁ বা না বলে। এটি ভালো আইডিয়া বা খারাপ আইডিয়া জানায়। এটিও এক ধরনের উৎসাহ, সহায়তা এবং সহযোগিতা।’ একই ধরনের কথা বললেন ফ্রিডম ফর রাশিয়া লিজনের মুখপাত্র সিজার। তাদের দলে রয়েছে কয়েকশ ব্যক্তি। তারা সবাই পুতিনের বিরোধী এবং ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জন্য নিবেদিত।
তাদের দল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সাঁজোয়া যান ব্যবহার করেছে এমন তথ্য সত্য কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। এর উত্তরে সিজার বলেন, আমরা হামভিও (মার্কিন সামরিক যান) ব্যবহার করি। আন্তর্জাতিক বিক্রয়কেন্দ্র যুদ্ধের দোকান থেকে সেগুলো কিনি আমরা। হ্যাঁ যাদের কিছু অর্থ আছে, তারা এটি করতে পারে।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে চালানো অভিযানে মার্কিন বাহন ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনে তৈরি হয়েছে হতবিহ্বল পরিস্থিতি। পেন্টাগন প্রেস সচিব মার্কিন বিমান বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার মঙ্গলবার বলেন, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর বাইরে কোনো তৃতীয় পক্ষ বা আধাসামরিক গোষ্ঠীর কাছে রসদ হস্তান্তরে অনুমোদন দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনীয় সরকারও এ ধরনের কোনো হস্তান্তরের অনুরোধ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এই ইস্যুতে নিবিড় নজর রয়েছে বলেও জানান রাইডার।
ইউক্রেন যাতে ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র ইউক্রেনের ভেতরে ব্যবহার না করে, সে ব্যাপারে আগেই ইউক্রেনকে অনুরোধ করেছে পশ্চিম। কারণ এতে করে মস্কোর সঙ্গে সরাসরি ন্যাটো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে বলে মনে হতে পারে।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে যে অভিযান হয়েছে, সেটির কোনো কৃতিত্ব চায় না ইউক্রেন। ফলে তারা রাশিয়ানদের এ কাজে ব্যবহার করেছে এবং দাবি করেছে ওই সেনারা ইউক্রেনীয় নির্দেশের অধীনে ছিল না এবার।
তবে ফলাফল নিয়ে কিয়েভের খুশি হওয়ার কথা। কারণ এ অভিযানের মধ্য দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে নিজ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার হয়ে কাজ করা ভাড়াটে সেনাদের দল ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। তিনি মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নাশকতা এবং নিরীক্ষণ বাহিনী শান্তভাবে রাশিয়ায় প্রবেশ করেছে, অগ্রসর হয়েছে, নিজেদের ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান চালানোর ভিডিও আপলোড করেছে। তাহলে নিশ্চয়তা কী যে তারা মস্কোতে প্রবেশ করবে না? আমি যতদূর বুঝি, কেউ বেলগোরোদ অঞ্চলের বাসিন্দাদের ব্যাপারে চিন্তিত নয়।
ভাড়াটে সেনাদলের এই নেতা আরও বলেন, ওই ডিভিশনগুলোর পরিণতি বিপ্লবে গিয়ে ঠেকতে পারে, ঠিক ১৯১৭ সালের মতো। অন্যদিকে ফ্রিডম ফর রাশিয়া লিজনের সিজার মনে করছেন, মস্কো এ ঘটনায় ধাক্কা খেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা (বেলগোরোদের প্রতিরক্ষায় থাকা রাশিয়ানরা) যথেষ্ট বোকা এবং অনেক ধীরগতির। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ছিল তাদের হাতে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য। কিন্তু তারা শুধু বোঝার চেষ্টা করেছে, কী হয়েছে। শুধু একটি দল পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল। আমরা তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছি।’
সূত্র : সিএনএন