প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩ ১৯:৪৮ পিএম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩ ০০:০৬ এএম
উত্তর আটলান্টিকে নিখোঁজ হওয়া সাবমেরিন টাইটান। ছবি : সংগৃহীত
উত্তর আটলান্টিকের হাজার হাজার ফুট পানির নিচে নিখোঁজ হওয়া সাবমেরিন টাইটানের উদ্ধারকাজে যোগ দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল।
ডাউনিং স্ট্রিট নিশ্চিত করেছে যে রয়্যাল নেভি সাবমেরিনারের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের একটি সংস্থার উদ্ধার সরঞ্জাম টাইটানের অনুসন্ধান অভিযানে সহায়তা করবে।
ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাজ্যের পক্ষে ওই উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিচার্ড কান্থারিয়ার, যার সাবমেরিন যুদ্ধ এবং ডাইভ অপারেশন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য জ্ঞান রয়েছে।
এদিকে একটি রয়্যাল এয়ার ফোর্স সি-১৭ পরিবহন বিমান আনুষঙ্গিক সরঞ্জামসহ বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিকালে কানাডার উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই মুখপাত্র আরও বলেছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ডের অনুরোধের পর ওই উদ্ধারকাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি।
এদিকে সাবমেরিন টাইটানের অক্সিজেন ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে সবার দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু এখনও এর সঠিক অবস্থান এবং এটিতে থাকা পাঁচজন ক্রুর অবস্থা অজানা। ধারণা করা হচ্ছে, যদি ডুবোজাহাজটি এখনও অক্ষত থাকে, তবে এতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য অক্সিজেন অবশিষ্ট থাকতে পারে।
নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনসের মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির হাইপারবারিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কেন লেডেজ বিবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘অবস্থার ওপর নির্ভর করে ডুবোজাহাজে থাকা কয়েকজন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকতেও পারেন। এটা নির্ভর করে তারা কতটা ঠান্ডা পাবে এবং অক্সিজেন সংরক্ষণে তারা কতটা কার্যকরী হবে তার ওপর।’
তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়া একটি ধীর প্রক্রিয়া। এটি একটি আলো বন্ধ করার মতো নয়। এটি একটি পাহাড়ে আরোহণের মতো। তাপমাত্রা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপাক ক্রিয়া কমে যায়। এটি নির্ভর করে আপনি কত দ্রুত সেই পাহাড়ে উঠবেন তার ওপর।’
কেন লেডেজ বলেন, ‘আমরা ডুবোজাহাজের অভ্যন্তরের সম্পূর্ণ পরিস্থিতি জানি না। পরিস্থিতি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্নতর হতে পারে এবং কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারেন।’
লেডেজ আরও বলেন, ‘অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়াই একমাত্র বিপদ নয়। জাহাজটি বৈদ্যুতিক শক্তি হারিয়েছে, যা জাহাজের ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে।’
বুধবার ইউএস কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার বলেছেন, ‘অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে বেশ কিছু অজানা রয়েছে।’
মাগার বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা ডুবোজাহাজে থাকা সদস্যদের অক্সিজেন গ্রহণের হার জানি না।’
সাবেক রয়্যাল নেভি সাবমেরিন ক্যাপ্টেন রায়ান র্যামসে বলেছেন, তিনি টাইটানের ভেতরের ভিডিওগুলো অনলাইনে দেখেছেন এবং সেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ ব্যবস্থা দেখতে পাননি, যা স্ক্রাবার নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, ‘এটি আমার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে হয়েছে।’
ক্যাপ্টেন র্যামসের মতে, ডুবোজাহাজটি যদি বিদ্যুৎ হারিয়ে ফেলে, তবে এটি তাপ উৎপন্ন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘একটি সম্ভাবনা আছে, যদি তারা যথেষ্ট ঠান্ডা হয়ে যান এবং চেতনা হারিয়ে ফেলেন, তবে তারা এর মধ্য দিয়ে বাঁচতে পারবেন।’
অন্যদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো ওশানগেটের সাবমেরিন (ডুবোজাহাজ) টাইটান অনুসন্ধান এলাকা থেকে রহস্যজনক শব্দ ও ধাক্কাধাক্কির আওয়াজ শোনা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।
তবে কোস্ট গার্ড কর্মকর্তারা বলেছেন, অনুসন্ধান সাইট থেকে কানাডার সামরিক পি৩ বিমান থেকে শনাক্ত হওয়া শব্দগুলোর অবস্থান বের করা কঠিন এবং এখনও নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছেন।
বিশেষ করে, ধাক্কাধাক্কি বা শোরগোলের বিষয়ে কোস্ট গার্ডের ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেডরিক বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আপনাদের সঙ্গে খোলামেলা হতেই বলছি, আমরা জানি না সেগুলো কী।’
ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক জানিয়েছেন, অনুসন্ধানের এলাকা এখন ভূপৃষ্ঠের আয়তনের বিচারে কানেকটিকাট রাজ্যের দ্বিগুণ এবং আটলান্টিক মহাসাগরের ২ দশমিক ৫ মাইল গভীরে পরিচালিত হচ্ছে।
সাবমেরিনের আরোহীদের বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রেডরিক বলেন, ‘এটি একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান। যখন আপনি অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের মধ্যে থাকবেন, আপনার আশা সব সময়ই থাকবে।’
উড হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের গবেষক কার্ল হার্টসফিল্ড সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শব্দগুলো সামুদ্রিক ধ্বনিবিদ্যা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আর ওই এলাকায় এখনও প্রচুর জাহাজ হয়েছে। তাই উৎস সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রবিবার (১৮ জুন) সমুদ্রের গভীরে ১২ হাজার ৫০০ ফুট নিচে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে টাইটান সাবমেরিনের বোর্ডে ওঠা পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান, ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নারজিওলেট ও ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নৌবাহিনী এবং গভীর সমুদ্রের গবেষণাকারী বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে, যা ম্যাসাচুসেটসের শহর বোস্টন থেকে পরিচালিত হচ্ছে। উদ্ধার অভিযানে সামরিক বিমান, একটি সাবমেরিনও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি, ইনডিপেনডেন্ট ইউকে