পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩ ১৪:২৫ পিএম
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৩ ১৪:৪৪ পিএম
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছিল৷ ছবি : সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন রাজ্যজুড়ে ১৩ জন নিহত, কয়েক ডজন আহত এবং ভোট কেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ওই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করেছে বিজেপি।
তাই নির্বাচনের একদিন পর রবিবার (৯ জুলাই) বিজেপির অভিযোগের জবাব দিয়েছে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলটির নেতারা জোর দিয়ে বলেন, ৬১ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৬০টিতে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
দলের নেতা কুণাল ঘোষ, ডাঃ শশী পাঞ্জা, এবং ব্রাত্য বসু এক সাংবাদিক সম্মেলনে ওই সহিংসতার নিন্দা করে বলেছেন, যেকোনও মৃত্যুই দুঃখজনক এবং হতাহতের মধ্যে তৃণমূল কর্মীদের সংখ্যাই বেশি।
তারা নির্বাচনী সহিংসতার অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছেন যে, বিরোধী দল এবং কিছু মিডিয়া আউটলেট নির্বাচনকে অসম্মান করার জন্য ‘সহিংসতার প্রচার করছে।’
কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকে সহিংস হিসাবে আঁকার চেষ্টা করছে। কিন্তু, ব্যাপকভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর কৃতিত্ব সাধারণ জনগণের।’
অধিকাংশ সহিসংতার পেছনে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী এবং সমর্থকরা জড়িত বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার জবাবে কুনাল ঘোষ বলেন, ‘সহিংসতায় প্রাণ হারানো মানুষের বেশিরভাগই তৃণমূলের কর্মী। তাই তৃণমূল যদি সহিংসতা উসকে দিয়ে থাকে, তাহলে কেন তারা নিজেদের কর্মীদের টার্গেট করল?’
শশী পাঞ্জা সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের ক্ষমতা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছিল৷ কিন্তু, এই বাহিনী কোথায় ছিল এবং কেন তারা সহিংসতা রোধ করতে পারেনি? এমন উদাহরণ রয়েছে যেখানে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সসহ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ক্যামেরায় ভোটারদের একটি নির্দিষ্ট দলকে ভোট দিতে হুমকি দিতে দেখা গেছে৷ । এটি ইঙ্গিত দেয় যে, রাজনৈতিক প্রভুদের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।‘
বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এসএস গুলেরিয়া আগে বলেছিলেন যে, সংবেদনশীল ভোট কেন্দ্রগুলোর তথ্যের জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন পর্যাপ্ত বিবরণ প্রদান করেনি। তাই এলাকাগুলোকে পর্যাপ্তভাবে সুরক্ষিত করা যায়নি।
তৃণমূল নেতারা পশ্চিমবঙ্গের গভর্নরকে সহিংসতার আগুন জ্বালানো এবং জনগণের মতামতকে প্রভাবিত করার জন্য তার ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্যও অভিযুক্ত করেছেন।
ব্রাত্য বসু বলেন, ‘রাজ্যপাল বিরোধী দলগুলোর আহতদের দেখতে গিয়েছেন। অথচ নিহতদের বেশিরভাগই তৃণমূলের কর্মী। তাছাড়া তিনি যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই রাজনৈতিক বক্তৃতা দিচ্ছেন। কেন একজন মনোনীত ব্যক্তি তার ক্ষমতা দিয়ে জনগণের মতামতকে প্রভাবিত করছেন?’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশন মোট ৬১৫৩৯টির মধ্যে ৪,৮৩৪টি সংবেদনশীল বুথ চিহ্নিত করে সেগুলোতে নিরাপত্তার জোরদারের অনুরোধ করে।
তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিরোধীরা অসংবেদনশীল বুথগুলোকে টার্গেট করেছে গোলযোগ ঘটাতে।
শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় রাজ্যজুড়ে সহিংস সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর দিনাজপুর এবং নদীয়া।
পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর ডাঃ সিভি আনন্দ বোসও সহিংসতার নিন্দা করে পরিস্থিতিকে ‘খুব, খুব বিরক্তিকর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দরিদ্ররাই নিহত হচ্ছে।’
সূত্র : এনডিটিভি