ট্রুডোর বিবাহবিচ্ছেদ
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ১৮:২৯ পিএম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ২২:০৬ পিএম
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (বাঁয়ে) এবং স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো। গত ২৪ মার্চ কানাডার হাউস অব কমন্সে। ছবি : সংগৃহীত
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রডো বুধবার, ২ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। কানাডার তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বিবাহবিচ্ছেদ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। অধিকাংশ বিশ্লেষকের ধারণা, না, বিবাহবিচ্ছেদ ট্রুডোর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার কোনো শঙ্কা নেই। বরং উল্টোটা হতে পারে।
২০২৫ সালের অক্টোবরে কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে লিবারেল পার্টির ট্রুডো চতুর্থবার প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে আছে।
কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ যেহেতু ব্যক্তিগত জীবনের অন্যতম বড় সংকট, তাই ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনের গতিপথ নিয়ে মানুষের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছেই। ট্রুডোর এক ঘনিষ্ঠ সহকারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, না, বিবাহবিচ্ছেদ ট্রুডোর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। আগামী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির পক্ষ থেকে তিনিই প্রার্থী হচ্ছেন।
ইনস্টাগ্রামে বুধবার বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগে মন্ত্রী পরিষদ ঢেলে সাজান ট্রুডো। এই সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করে অটওয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রডারিক ফিলিপস বলেন, ওটা ছিল তার রাজনৈতিক অঙ্গন ঢেলে সাজানো। আর বিবাহবিচ্ছেদ তার ব্যক্তিগত জীবন ঢেলে সাজানো। লিবারেল পার্টির দায়িত্ব যে ট্রুডোর হাতেই থাকছে, এটা ধরেই নেওয়া যায়।
নির্বাচনবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যানোস রিসার্চের কর্মকর্তা নিক ন্যানোস বলেন, কানাডায় এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। নিত্যপণ্যের দাম দুই বছরের সর্বোচ্চে। এ অবস্থায় মূলত অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের কথা মাথায় রেখেই মন্ত্রিপরিষদ ঢেলে সাজিয়েছেন ট্রুডো। অর্থাৎ সবকিছু একটা পরিকল্পনার জায়গা থেকেই করছেন ট্রুডো।
রয়টার্স জানায়, ট্রুডোর পিতা ও কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোরও বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। ট্রুডোর মা মার্গারেটের সঙ্গে ১৯৭৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে হারেন পিয়েরে ট্রুডো। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে ১৯৮০ সালে তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে নির্বাচন জরিপ সংস্থা ইকসের প্রধান ফ্র্যাঙ্ক গ্রেভেস বলেন, পিতা ও পুত্রের দুই ঘটনার মধ্যে আমি কোনো যোগসূত্র খুঁজে বের করার কথা বলছি না। তবে বিচ্ছেদের পর পিয়েরে যে ভেঙে পড়েন নাই, ১৯৮০ সালে তার পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়া তারই প্রমাণ।
তাই জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষেত্রেও বিবাহবিচ্ছেদ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তেমন কোনো প্রভাবই ফেলবে না বলে মনে করেন গ্রেভেস।
টরন্টোর বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সি ডেনিস ডেভিসন বলেন, সফলভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ ট্রুডোর জীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বিচ্ছেদের পর তার মনের অবস্থা যদি ভালো হয়, তা তো দেশের জন্য বরং ভালো।
জানা যায়, ২০০৫ সালে সোফি গ্রেগোয়ারকে বিয়ে করেন ট্রুডো। তাদের জেভিয়ার, এলা-গ্রেস এবং হ্যাড্রিয়েন নামে তিনটি সন্তান রয়েছে।
ইনস্টাগ্রামে বিচ্ছেদের ঘোষণায় ট্রুডো বলেন, অনেক অর্থপূর্ণ ও কঠিন আলোচনা শেষে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আগের মতোই অটুট থাকবে।
সোফির সঙ্গে ট্রুডোর সাক্ষৎ হয় ২০০২ সালে মন্ট্রিলে। ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিল থেকে কমিউনিকেশনে ডিগ্রি নেওয়া বিক্রয় ও বিপণন নিয়ে কাজ শুরু করেন সোফিয়া। পরে তিনি টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন।
গত বছর বিবাহবার্ষিকীতে ইনস্টগ্রামে সোফি লেখেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক অনেক দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং। এ রকম সম্পর্ক অবিরাম কাজ, নমনীয়তা, আপস, ত্যাগ, নিষ্ঠা, ধৈর্য, প্রচেষ্টা এবং আরও অনেক কিছু দাবি করে। আমরা কেউই নিখুঁত নই এবং তাই কোনো নিখুঁত সম্পর্ক নেই। কিন্তু ভালোবাসা তখনই সত্য যখন এটি আপনাকে নিরাপদ রাখে, আপনাকে মুক্ত করে এবং আপনাকে বড় করে।’
সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন, বিবিসি