প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৬ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৭ পিএম
ওয়াশিংটন ডিসির একটি আদালতে হাজিরা দিয়ে নিউ জার্সি চলে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৩ আগস্ট রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দরে। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) ওয়াশিংটন ডিসির একটি আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। দুই দিন আগে তার বিরুদ্ধে আনা ২০২০ সালের নির্বাচনী ফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা সংক্রান্ত চারটি অভিযোগ আনার পর এ দিন আদালতে হাজির হয়েছিলেন তিনি।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আপনি যদি কাউকে নির্বাচনে পরাজিত করতে না পারেন তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন, মামলা দিয়ে ফাঁসাবেন, যুক্তরাষ্ট্রে এমনটি চলতে পারে না। আজ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটা কালো দিন।
শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য নিউ জার্সি থেকে একটি প্রাইভেট উড়োজাহাজে করে বৃহস্পতিবার সকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান ট্রাম্প, তার আইনজীবী ও অন্য সহযোগীরা।
বিমানবন্দর থেকে তারা সোজা ই ব্যারেট প্রিটিম্যান ফেডারেল আদালতে চলে যান। আদালত প্রাঙ্গনে ঢোকার পর রীতি অনুযায়ী ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ফৌজদারি মামলায় হাজিরা দিতে গেলে বিবাদীকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার শুনানি পরিচালনা করেন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক মক্সিলা উপাধ্যায়। ট্রাম্প কেন্দ্র, রাজ্য ও স্থানীয় আইন মেনে চলবেন। চলমান মামলা নিয়ে কোনো সাক্ষীর সঙ্গে আলোচনা করবেন না। এ রকম আরও কিছু শর্তে ট্রামকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ট্রাম্পের পরবর্তী শুনানি দিন ধার্য করা হয়েছে ২৮ আগস্ট।
বৃহস্পতিবার নিয়ে পাঁচ মাসেরও কম সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটা ফৌজদারি মামলায় হাজিরা দিলেন ট্রাম্প।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা চারটা অভিযোগ হলো: এক. যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতারণার ষড়যন্ত্র। দুই. একটা দাপ্তরিক কর্মপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তিন. একটা দাপ্তরিক কর্মপ্রক্রিয়ায় বাধা এবং বাধা দেওয়ার চেষ্টা। চার. সাংবিধানিক অধিকার চর্চায় বাধা।
এ চার অভিযোগে ট্রাম্পে মোট ৫৫ বছর কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোঃপূর্বে দেশটির ফেডারেল আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও দুটি ফৌজদারি মামলায় বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় তার কয়েক শত বছরের জেল হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে।
গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে গত জুনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাতটি ফৌজদারি অভিযোগে আনেন জ্যাক স্মিথ ও তার সহকারীরা। ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ত্যাগের সময় নিজের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ল্যাসিফাইড নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগে।
তার আগে গত মার্চে এক অভিনেত্রীকে অর্থ দিয়ে মুখা বন্ধ রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হন ট্রাম্প। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামের ওই অভিনেত্রীকে মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ দিয়েছিলেন রিপাবলিকান এই রাজনীতিবিদ।
গত মঙ্গলবার ৪৫ পাতার অভিযোগপত্রে অভিযোগগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন জ্যাক স্মিথ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০২০ নালের নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয়ের ফল মেনে পারছিলেন ট্রাম্প। তিনি নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগ আনে। কিন্তু নিজের দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি।
এরপর ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন ট্রাম্প। এ জন্য তিনি কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ বিভিন্ন জিনিস করার নিদের্শ দেন। এসব কিছুর মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনী ফল উল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন।
২০২০ সালের ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব ষড়যন্ত্র করে ট্রম্প। এরপর নির্বাচনী ফল দেশটির পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের দিন ৬ জানুয়ারি জঘন্যতম কাজটি করেন ট্রাম্প। ওই দিন কংগ্রেসের বিশেষ ওই অধিবেশনের আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সমাবেশ করেন তিনি। সেখানে নিজ সমর্থকদের যে কোনো উপায়ে নির্বাচনী জালিয়াতি ঠেকানোর জন্য আহ্বান জানান ৭৭ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ।
ওই দিন কংগ্রেস ভবন এলাকা ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকেরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়েন। তারা দেওয়াল টপকে কংগ্রেস ভবনে ঢোকে পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এতগুলো ফৌজদারি মামলা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই শক্তিশালী প্রার্থী। ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতেই এসব মামলা করছে বাইডেন প্রশাসন।
সূত্র : গার্ডিয়ান, বিবিসি, সিএনএন