প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩ ১৯:০৪ পিএম
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৩৫ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ছবি : সংগৃহীত
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে দুই সপ্তাহ আগে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। রাশিয়ার ভাড়াটে সামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ সেই অভ্যুত্থানের সুযোগ নিচ্ছে।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ অভিযোগ করেছেন। সাক্ষাৎকারটা মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ছাপা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, ’নাইজারে যা ঘটছে তার সঙ্গে রাশিয়া বা ওয়াগনারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ওয়াগনার গ্রুপ নাইজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে।’
নাইজারের প্রতিবেশী দেশ মালিতে ওয়াগনারের সেনা রয়েছে। অভ্যুত্থানের পর নাইজারের জান্তা ওয়াগনারের সহায়তা চেয়েছে বলে জানা গেছে।
২৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে গ্রেপ্তার করে ক্ষমতাগ্রহণ করে নাইজারের প্রেসিডেনশিয়াল গার্ড। বাহিনীর প্রধান আবদুরাহমানে ছিয়ানি নিজেকে মধ্যবর্তী সরকারের প্রধান ঘোষণা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ কিছু পশ্চিমা দেশ নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থানের সমালোচনা করে। আফ্রিকান ইউনিয়ন ও দ্য ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় বেঁধে দিয়েছে।
শুক্রবারের (৪ আগস্ট) মধ্যে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা থেকে সরে না দাঁড়ালে দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছে ইকোওয়াস। কিন্তু প্রতিবেশীরা দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মালি, লিবিয়া, বুরকিনা ফাসো, আলজেরিয়া নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
সেনেগাল ও নাইজেরিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে মত দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সাবেক সেনাপ্রধান আব্দুল সালামি আবুবকরের নেতৃত্বে নাইজারে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে নাইজেরিয়া। লিবিয়া ও আলজেরিয়া দেশটিতে আলাদা দুটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। তারাও নাইজারে শান্তি ফেরাতে নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে।
কোনো ধরনের বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপ সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছেন জান্তাপ্রধান ছিয়ানি। বুধবার (২ আগস্ট) এক টেলিভিশন ভাষণে ছিয়ানি বলেন, ’ইকোওয়াস যদি সামরিক হস্তক্ষেপের ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নেয়, আল্লার সহায়তায় আমরাও সর্বশক্তি দিয়ে তা মোকাবিলা করব। সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য শেষবারের মতো লড়াই করবে নাইজারের জনগণ।’
শুক্রবার ইকোওয়াস জানায়, তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা নাইজারে সামরিক হামলা চালাতে সম্মত হয়েছেন। সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
প্রতিবেশী বেনিন ও জার্মানি সংযম অবলম্বন করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নাইজারে কিছু সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ নাইজার সংকটের সমাধান করবে না বলে মনে করে রাশিয়া। গত কয়েক বছরে পশ্চিম আফ্রিকায় মস্কোর সামরিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়েছে।
সময়সীমা পার হয়ে গেলেও নাইজারে সামরিক অভিযান শুরু করেনি ইকোওয়াস। এ অবস্থায় দেশটিতে গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধার করতে অভ্যুত্থানকারী সেনা কর্মকর্তাদের চাপ দিতে সেখানে সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। সোমবার তিনি সংশ্লিষ্ট সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিক জানান, সামরিক নেতা মুসা সালাউ বারমুসহ আরও তিন কর্নেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তার অকপট ও কঠিন আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তা বলেন, ’তারা কীভাবে এগিয়ে যেতে চান, সে সম্পর্কে তাদের অবস্থান বেশ দৃঢ়। কিন্তু তা নাইজারের সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’
নাইজারের সেনা কর্মকর্তাদের কাছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আলোচনামূলক সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন নুল্যান্ড। তাদের জানিয়েছেন, যদি অভ্যুত্থানকারী নেতারা নাইজারের সাংবিধানিক আদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক হন, তার দেশ এতে সহায়তা করবে।
যদিও নুল্যান্ড পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাজুম এবং বর্তমানে দেশটির সামরিক জান্তাপ্রধান আবদুররাহমানে ছিয়ানির সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলেন। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়।
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।