× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

আওয়ামী লীগকে চীনপন্থি ও উগ্র ইসলামপন্থিদের ছাড়ার বার্তা দেবে ভারত

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১৭:০৬ পিএম

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ২৩:০০ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আগামী মাসের শুরুর দিকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। এ সময় তাকে ভারতের কর্মকর্তারা দুটি স্পষ্ট বার্তা দেবেন। ভারতের গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া সোমবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে।

বার্তা দুটি হলো- এক. বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। দুই. আওয়ামী লীগকে সরকার ও দল থেকে চীনপন্থি ও উগ্র ইসলামপন্থি নেতাদের ঝেড়ে ফেলতে হবে। অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় নেতাদেরই মনোনয়ন দিতে হবে। 

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র- এই দুই বিষয়ে একমত হয়েছে। এই দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সম্প্রতি একাধি বৈঠক করে এসব বিষয়ে একমত হয়েছেন। ভারতের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়নি প্রতিবেদনে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে অনেক বৈঠক করেছেন। ভারত ও এ অঞ্চলের আরও দুয়েকটি দেশে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আগের সব নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য ছিল। উদাহরণস্বরূপ ২০১৮ সালের নির্বাচনের কথা বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে একটি বড় ধরনের ঐকমত্য হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে দিল্লি এলে তাকে ভারতের কর্মকর্তারা এই যৌথ ঐকমত্যের বিষয়ে জানিয়ে দেবেন।’

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে শেখ হাসিনা সম্প্রতি বারবার আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের কারণে তাতে তেমন একটা আস্থা রাখা যায় না। ওই দুই নির্বাচনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও অনেক পশ্চিমা দেশ। 

টেলিগ্রাফের ভাষ্য- বাংলাদেশের এই দুই নির্বাচন নিয়ে ভারত কখনও আপত্তি করেনি। বরং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই শেখ হাসিনাকে সবার আগে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার জোট সংসদের মোট আসনের ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে সাধারণ ধারণা এই যে, নির্বাচনের ফল যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পক্ষে যাচ্ছে ততক্ষণ তা নিয়ে কোনো আপত্তি করবে না ভারত। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে এখন পর্যন্ত তাকেই নির্ভরযোগ্য মিত্র বলে মনে করে নয়াদিল্লি। 

শেখ হাসিনাকে এখনও নিজেদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র মনে করলেও গত কয়েক বছরে কিছু বিষয় বদলে গেছে। বাংলাদেশের এক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ টেলিগ্রাফকে বলেন, গত কয়েক বছরের কৌশলগত কিছু বিষয় বদলে গেছে। শেখ হাসিনাকে এসব বিষয়ে ভারতের উদ্বেগকে আমলে নিতে হবে। এবার তা যথাযথভাবে আমলে না নিলে তার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ এতটা মসৃণ হবে না। 

এরপর টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ ভারতের অনেক চাওয়া পূর্ণ করেছে। এসব চাওয়ার মধ্যে ইসলামিক সন্ত্রাসীদের দমন ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি অন্যতম। 

তবে হাসিনা সরকার নিয়ে নয়াদিল্লির বর্তমান প্রধান উদ্বেগ, চীনের ওপর তার সরকারের বড় ধরনের নির্ভরশীলতা। ঠিক এই পয়েন্টে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও একমত। 

টেলিগ্রাফ বলছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বিষয়ে একমত হতে পেরেছে, তাই দেশ দুটি আগামী নির্বাচন নিয়ে অতীতের নিয়ম ভেঙে প্রায় অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে। ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য মতে নিচের বিষয়গুলোতে দিল্লি ও ওয়াশিংটন মোটা দাগে একমত হয়েছে। 

এক. শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগে চীনপন্থি ও উগ্র ইসলামপন্থি নেতা বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতির শিগগিরই পরিবর্তন দরকার। 

দুই. বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। কমিশন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের যথাযথভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।

তিন. তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ তা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার. দুর্নীতি দমন ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারকে স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের দাম জনগণের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। 

পাঁচ. ভারতের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বলেছেন, তারা শেখ হাসিনার জায়গায় বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় বসানোর যে এজেন্ডা গ্রহণ করেছে, তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। তা ছাড়া তা ভারতের নিরাপত্তা হুমকি বাড়াবে। ভারতের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন। প্রকৃত কথা হচ্ছে, জামায়াতকে চরম মৌলবাদী সংগঠন মনে করে ভারত।

ছয়. ভারতের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের এটাও বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা আরোপের আগে আমাদের অবহিত করলে ভালো হতো। 

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বড় ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়টি অন্য কারণেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের এক বিশেষজ্ঞ টেলিগ্রাফকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই মঙ্গলজনক। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে তারা জাতি গঠনে অংশ নেবে। আর লবিং ও যোগাযোগ বাদ দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যোগ্য নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হলে শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগই শক্তিশালী হবে। কঠোর হাতে দুর্নীতি দমন করা হলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে। 

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শেখ হাসিনা দিল্লির কথাটা কতটা আমলে নেবেন, এখন তা-ই দেখার বিষয়। কারণ, শক্তিশালী এই নেতার যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা