কূটনীতি
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
‘ভাসুধাইকা কুতুমবাকাম’- সংস্কৃত এই শব্দযুগলের অর্থ ‘পুরো বিশ্ব একটি পরিবার’। বহুজাতির সংগঠন হিসেবে জি-২০-এর বেলায় কথাটি মানানসই। এই গ্রুপে যেমন যুক্তরাষ্ট্র আছে, তেমনি বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দুই দেশ চীন ও ভারত আছে। তাদের সঙ্গে আছে রাশিয়া এবং ইউরোপের ধনী দেশগুলো। এই ধনী ও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে বাকি দেশগুলোর সম্পর্ক সম্প্রসারণের প্রয়াস নিয়ে এবার ভারত আয়োজন করছে জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলন।
করোনা মহামারিপরবর্তী ক্লান্ত বিশ্বে ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভারতের নয়াদিল্লিতে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। আয়োজক দেশ হিসেবে এতে সভাপতির আসনে থাকছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ধনী ও শক্তিধর দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে অংশ নিচ্ছেন না, তা আগেই জানা ছিল। গতকাল সোমবার এলো আরেক খবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও থাকছেন না। পরাশক্তির দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান জিনপিং ও পুতিনের এই অনুপস্থিতি ‘পুরো বিশ্ব এক পরিবার’ ধারণার ফাটলকেই সামনে আনছে।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে গভীর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার প্রয়াসে ১৯৯৯ সালে বিশ্বের ২০টি ধনী দেশ গড়ে তোলে জি-২০ জোট। এই জোটের বর্তমান সদস্য আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮০ শতাংশই এই জোটের দখলে। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের সঙ্গে জড়িত জি-২০ দেশগুলো।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এবার সম্মেলনে আলোচনার প্রধান বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- বহুজাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও ঋণের ব্যবস্থা করা, আন্তর্জাতিক ঋণকাঠামোর সংস্কার, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে নীতিমালা তৈরি এবং খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব।
তবে এ নিয়ে এখনও কোনো যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে জোটের দেশগুলো। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কারণে তাদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর জন্য মস্কোকে দায়ী করতে নারাজ রাশিয়া ও চীন। অপরদিকে যুদ্ধের জন্য মস্কোর প্রতি কড়া নিন্দা জানানোকে যৌথ বিবৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও কানাডা।
গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে জিনপিং সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। অবশ্য আকসাই চীন, অরুণাচল প্রদেশ ও বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের ভূখণ্ডকে নিজেদের দাবি করে চীনের নতুন ‘মানচিত্রে’ প্রকাশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বলাবলি হচ্ছিল, জি-২০ সম্মেলনে জিনপিং হয়তো যোগ দিচ্ছেন না। ফলে এসব ইস্যুতে শীর্ষ নেতা পর্যায়ে আলোচনা হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল, তাও রইল না।
সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, এনডিটিভি ও দ্য প্রিন্ট।