লিবিয়ায় বন্যা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৭ পিএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৮ পিএম
বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি। দেরনা শহরে থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর তোলা। ছবি : সংগৃহীত
লিবিয়ার ভয়াবহ বন্যায় শুক্রবার পর্যন্ত ১১ হাজার ৩০০ এর বেশি মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখনো ১০ হাজারের বেশি নিখোঁজ। আহত উদ্ধার করা হয়েছে সাত হাজারের বেশি। শুক্রবারও উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
লিবিয়ার এবারের বন্যা নজিরবিহীন হলেও এতে এত হতাহত হলো কেন? কেনই বা এত বড় বন্যা হলো তা নিয়ে রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিচ্ছেন।
রাজনীতিবিদদের বড় একটা বলছেন এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে কর্তৃপক্ষের তেমন কিছু করার ছিল না।
দেরনার মেয়র আব্দুলমেনাম আল-গাইথি বলেছেন, যারা যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে সরকারের সমালোচনা করছেন, তাদের বলছি, আমরা সাধ্যমতো সব পদক্ষেপ নিয়েছি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের লিবিয়া বিশেষজ্ঞ ক্লডিয়া গাজিনি বলেন, লিবিয়ায় পূর্বাঞ্চল ও কেন্দ্রে দুইটা আলাদা সরকার রয়েছে। অর্থাৎ দেশটা বিভক্ত। তাই ২০১১ সালের পর থেকে সেখানে বড় কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই বন্যায় এত ক্ষতি হলো।
বাঁধ ভেঙে যাওয়া
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী লিবিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দেরনা শহরে রক্ষায় দুটি বেড়ি বাঁধ রয়েছে। কয়েক দশকের পুরোনো বাঁধ দুটি ২০০২ সালের পর থেকে সংস্কার করা হয়নি। অর্থাৎ ন্যাটোর হাতে নিহত দেশটির শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির যুগ থেকে বাঁধ দুটি তেমন একটা মেরামত করা হয়নি।
এ অবস্থায় রবি ও সোমবারের (৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর) বন্যায় দেরনা শহরের তিন-চতুর্থাংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। কোনো কোনো স্থানে পানি ছিল প্রায় ১০ ফুট।
ন্যাটোর দায়
মারণাস্ত্র রাখার দায়ে ২০১১ সালে লিবিয়ায় হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো। তারা গাদ্দফিকে হত্যা করে। এরপর তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ উত্তর আফ্রিকার দেশটি বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২০১৪ সাল পর্যন্ত দেরনা শহরটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ সংঘাত হয়। এরপর থেকে সেখানে ত্রিপলি ও পূর্বাঞ্চলের বেনগাজি কেন্দ্রিক দুটি আলাদা সরকার দানা বাঁধতে থাকে। ২০২১ সালে ত্রিপলি সরকারকে লিবিয়ার বৈধ কর্তৃপক্ষ বলে স্বীকার করে জাতিসংঘ।
এ অবস্থায় এক দশকের বেশি সময়ের সংঘাতের কারণে বারবার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও দেরনার বেড়ি বাঁধ দুটি সংস্কারে হাত দিতে পারেনি কোনো সরকার।
হুঁশিয়ারি
ন্যাশনাল কাউন্সিল অন ইউএস-লিবিয়া রিলেশনসের প্রেসিডেন্ট হানি শেনিব আল-জাজিরাকে বলেন, দেরনার বাঁধগুলোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জার্নালে এটা নিয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু কোনো সরকারই তা আমলে নেয়নি।
গত বছর লিবিয়ার ওমর আল মুখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেরনা বাঁধ নিয়ে আরও গুরুতর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, দেরনার বাঁধ অতিদ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। বাঁধগুলো সংস্কার করা না হলে বন্যার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।
সতর্ক বার্তার অভাব
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা অভিযোগ করে, যথাসময়ে পূর্বাভাস দেওয়া হলে প্রাণহানি অনেক বেশি কমানো যেত। জরুরি কর্তৃপক্ষগুলো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিত পারত। তা করা হয়নি।
কিন্তু দেরনার মেয়র জাতিসংঘের এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ৭২ ঘণ্টা আগ থেকে মানুষকে বন্যার হুঁশিয়ারি দিয়েছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আহ্বাওয়া অধিদপ্তর সরকারকে ই-মেইলে বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছিল। সরকার ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি সতর্ক প্রচার করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। এটা চরম দায়িত্বহীনতা।
সহায়তা
লিবিয়ায় ইতোমধ্যে মিসর, তিউনিসিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক ও কাতার ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার অর্থ উত্তোলনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে উপদ্রুত এলাকায় ডব্লিউএইচও ২৮ মেট্রিক টন জরুরি খাবার ও চিকিৎসা পণ্য পৌঁছার কথা রয়েছে।
সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, এএফপি