প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:১৫ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৪ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে করমর্দন করছেন ইসরায়েল নিয়োজিত দেশটির রাষ্ট্রদূত জ্যাকব লিউ (বাঁয়ে)। ৩ নভেম্বর তেল-আবিবে। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার (৩ নভেম্বর) ১২টার দিকে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। ২৭ দিন আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এমন একটা সময়ে তিনি তৃতীয়বারের মতো সেখানে গেলেন, যখন গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। উত্তর গাজা অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এখন ওই অঞ্চলে হামাসের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি গাজা সিটিতে ঢুকতে শুরু করেছে তারা।
ইসরায়েলের গাজা অভিযানের এ উত্তুঙ্গ মুহূর্তে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল সফরে গেছেন বলে জানা গেছে।
এক. হামাস নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানি যতটা পারা যায় কমানো।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজায় নিহত ৯ হাজার ৬১ জনের অর্ধেকের বেশি শিশু ও নারী। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপর ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিতে বিশ্ব জনমত বাড়ছে। তো সফরে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি কমাতে ইসরায়েল থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি চাইবেন ব্লিঙ্কেন।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগে সাংবাদিকদের ব্লিঙ্কেন নিজেই এ কথা বলেছেন। কিন্তু ইসরায়েল এ কথায় কতটা কান দেবে তা দেখার বিষয়।
দুই. লেবাননের হিজবুল্লাহ যেন যুদ্ধে না জড়ায়, এটা নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কারণ হামাসের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ শক্তিশালী হিজবুল্লাহ যুদ্ধে জড়ালে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি আরও সমালোচনার মুখে পড়বে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে প্রথম ভাষণ দেবেন বলে জানা গেছে। তিনি কী ঘোষণা দেন সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে। কারণ তিনি যদি হিজবুল্লাহর চলমান যুদ্ধে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তখন সংঘাত আরও আরও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিন. গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শেষ হলে ‘মৃত্যুপুরীটার’ শাসনভার কে নেবে, তা নিয়ে একটা রূপরেখা তৈরি করা। এটা নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এখনও কিছু স্পষ্ট নয়।
প্রাথমিকভাবে এ তিনটা উদ্দেশ্য নিয়ে ব্লিঙ্কেন ৭ অক্টোবরের পর তৃতীয়বার ইসরায়েল সফরে গেলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণে।
ব্লিঙ্কেন শনিবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এখানে উল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি ও তার দল বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালাবেন।
ইতঃপূর্বে ১৮ অক্টোবর আম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতিতে একই ধরনের একটি শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৭ অক্টোবর গাজার আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে তা বাতিল করে জর্ডান। ওই হামলায় অন্তত ৪৭১ জন নিহত হয়।
যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র
এ পর্যায়ে যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার এ কথা জানিয়েছেন।
প্যাট রাইডার বলেন, ’আমরা এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি সমর্থন করি না। কারণ এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি করলে হামাস পাল্টা হামলা করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় পাবে। এতে ইসরায়েলের জনগণ ও অন্যরা আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’
তবে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথমবারের জন্য স্থানে স্থানে সাময়িক যুদ্ধ থামানোর কথা বলেছেন। চলতি সফরে ব্লিঙ্কেন মূলত বাইডেনের সে কথারই প্রতিধ্বনি করবেন।
সূত্র : জেরুজালেম পোস্ট, আল-মনিটর, আলজাজিরা