× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্যাংশনের তালিকা, নেই বাংলাদেশ

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫২ পিএম

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:১২ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্যাংশনের তালিকা, নেই বাংলাদেশ

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন দেশের কয়েক ডজন ব্যক্তির ওপর নতুন করে স্যাংশন ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশ বা এদেশের কোনো ব্যক্তির নাম নেই। বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের নানা পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের যৌক্তিক কারণ নেই। এদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্যাংশন আসছে বলে বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা কিছুদিন ধরে প্রচার করছিল। এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে দলটির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যসহ অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে অবশেষে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, স্যাংশন এখনও দেয়নি। কিন্তু সামনে যে আর দেবে না- এর তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটা যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা কাকে নিষেধাজ্ঞা দেবে কাকে দেবে না এটা তাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকাকে অনেকেই স্বস্তিদায়ক খবর বলে মনে করছেন। তবে মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এদেশে স্যাংশন দেওয়ার মতো কোনো বিষয় যেন যুক্তরাষ্ট্র না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে গত শুক্রবার নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। সব মিলিয়ে ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর সমন্বিতভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ব্রিটেন ও কানাডা। এ ছাড়া চীনা তিন প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি সীমিত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় (ডিপার্টমেন্ট অব দ্য ট্রেজারি) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) সম্মিলিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিকেন বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী অঙ্গীকারের কথা বিবেচনায় রেখেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘আমরা অপরাধীদের ছাড় দেব না। বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা পদদলনকারী কোনো রাষ্ট্রকে সহ্য করা হবে না।’

নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ১৩টি দেশ হলো- চীন, রাশিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, হাইতি, লাইবেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্যাংশনের আওতায় পড়েছে ৯ দেশের ২০ ব্যক্তি। এই দেশগুলো হলোÑ আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, হাইতি, ইরান, লাইবেরিয়া, চীন, দক্ষিণ সুদান ও উগান্ডা। 

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং মার্কিন অর্থব্যবস্থাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের থেকে নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্র কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ, তা এই নিষেধাজ্ঞায় প্রতিফলিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন, অপরাধমূলক কার্যকলাপ, এলজিবিটিকিউ প্লাস ব্যক্তিদের দমন, আন্তর্জাতিকভাবে দমন-পীড়ন, পরিবেশগত অপরাধ ও অবক্ষয়ের সঙ্গে যুক্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে লক্ষ করে এ স্যাংশন আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মন্ত্রণালয়টি আরও জানিয়েছে, স্যাংশনের আওতায় পড়া ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে গেছে। এই ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ ভোগদখল করতে পারবেন না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাংকে থাকা অর্থ তুলতে পারবেন না। এ ছাড়া মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসা এবং লেনদেনও করতে পারবেন না।

১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ঘিরে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসছে, এমন প্রচারণা চালিয়ে আসছিল বিএনপি ও তাদের মিত্র জামায়াত। তবে স্যাংশন ও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় বাংলাদেশের কারও নাম না থাকায় স্বভাবতই হতাশ হয়েছে বিরোধী শিবির। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ঘোষণা ভোটমুখী বাংলাদেশকে স্বস্তি দিয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে এখন আলোচনা হচ্ছে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টিকারীরা ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে বলেও জানায় যুক্তরাষ্ট্র। সরকারের পাশাপাশি বিরোধীদের কেউ যদি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়, তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিতে বলা হয়। 


নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যা বলছে আওয়ামী লীগ

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা ৭৫তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে। আওয়ামী লীগ মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জন্মলগ্ন থেকেই লড়াই অব্যাহত রেখেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন গণতান্ত্রিক শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো ও এ পথকে মসৃণ করার লক্ষ্যে আমরা বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আমাদের নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। সুতরাং নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিক কোনো কারণ আমরা দেখছি না। বরং নির্বাচনকে যারা বাধাগ্রস্ত করবার জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, জ্বালাও-পোড়াও, গুপ্ত হামলা করছে, তাদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।’


মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর বিভিন্ন সময় তাদের স্বার্থে স্যাংশনগুলো দিয়ে যায়। তাদের দেশে তারা ঢুকতে দেবে কি না সেটা তাদের এখতিয়ার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু স্যাংশন দিয়ে যে ঢাকঢোল পেটায়, সেটাকে আমরা গ্রহণ করি না। এখন দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নিজস্ব বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করছে। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার তাদের নেই।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন বলছে, তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। কিন্তু এটা তো আমাদের দেশের সব মানুষই চায়। স্যাংশনের বিষয়ে আমরা শঙ্কিত নই। তবে সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, স্যাংশন দেওয়া জন্য কোনো কারণ যেন তারা না পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার নিশ্চিত ও সুরক্ষার দায়িত্ব সরকার ও দেশের জনগণের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কবে ঈদের চাঁদ উঠবে আর আমরা ঠিক হব, এটা আমি মনে করি আমাদের জন্য শঙ্কার কারণ।

তিনি বলেন, যদি স্যাংশন দেয়ও, তাহলে উৎফুল্ল হওয়ার কোনো কারণ নেই। বুঝতে হবে আমাদের পরিস্থিতি ভালো না। এটুকু যদি আমরা না বুঝে অন্যের স্যাংশন নিয়ে লাফাই, তাহলে অন্যরা যখন-তখন স্যাংশন দেবে। যখন-তখন যা ইচ্ছে বলবে। কিন্তু আমরা তাদেরকে বলার এই সুযোগটা করে দিচ্ছি। যেহেতু এখন আমরা সঠিক রাস্তায় চলছি না। দেশটা একটা অন্ধকারের মধ্যে পতিত হচ্ছে। মানুষ যেহেতু অসহায় হয়ে গেছে সেজন্য সাংশন আমাদের কাছে ভোরের আলোর মতো মনে হচ্ছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা