প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৩ পিএম
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৫ পিএম
হামলার পর পাকিস্তানের পাঞ্জগুর শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ জানুয়ারি সকালে। ছবি : সংগৃহীত
প্রতিটা সামরিক অভিযানের একটি কোড বা সাংক্ষেতিক নাম থাকে। এ সাংক্ষেতিক নামে অভিযানের সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের ইঙ্গিত থাকে। থাকে ঐতিহাসিক দ্যেতনা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোরে ইরানে পাকিস্তানের চালানো হাল্টা হামলার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মার্গ বার সার্মাচার’। নামটি নানা কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তিনটি শব্দ নিয়ে গটিত সাংক্ষেতিক নামটির প্রথম দুই শব্দ ফার্সি। এর মধ্যে মার্গ বিশেষ্য, অর্থ মৃত্যু, হত্যা বা ধ্বংস। আর দ্বিতীয় শব্দ বার অব্যয়, অর্থ এর বা প্রতি। তৃতীয় ও শেষ শব্দ সার্মাচার বেলুচ ভাষার শব্দ, অর্থ যোদ্ধা বা সন্ত্রাসী। তাহলে মার্গ বার সার্মাচারের অর্থ দাঁড়ায় সন্ত্রাসীদের হত্যা কর।
এতক্ষণ যা বলা হলো তা মার্গ বার সার্মাচারের রূপতত্ত্ব বা শব্দতাত্ত্বিক আলোচনা। কিন্তু সাংক্ষেতিক নামটির মর্মার্থ উদ্ধার করা না গেলে এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তান কী বার্তা দিতে চেয়েছে তা বোঝা যাবে না।
‘মার্গ বার’ শব্দগুচ্ছটা ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের সময়ে জনপ্রিয় হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করে ইরানিরা তখন এ স্লোগান দিত। তো মার্গ বার সার্মাচারের রূপক অর্থ দাঁড়ায় সন্ত্রাসীদের নিধন কর।
ইসরায়েলের গাজা হামলা চলার মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের এ ধরনের নামকরণ বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে।
অন্যদিকে স্থানীয় বেলুচ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের যোদ্ধাদের সার্মাচার বলে ডাকে। বেলুচদের কাছে যারা যোদ্ধা পাকিস্তান বা ইরানের কাছে তারাই সন্ত্রাসী।
বৃহস্পতিবার বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট ও বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি নামে দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। পোস্টগুলো ইরানের সিস্তান-ও-বেলুচিস্তান প্রদেশের সারাভান শহরের কাছে অবস্থিত।
দুই দিন আগে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পঞ্জগুর শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। হামলায় দুই শিশু নিহত ও আরও তিন বালিকা আহত হয়।
ইরানের দাবি, তারা পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটি লক্ষ করে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু না জানিয়ে নিজ ভূখণ্ডে আঘাত কোনোভাবেই মানতে পারেনি পাকিস্তান। দেশটি ইতোমধ্যে ইরানি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে।
সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করায় ইরানকে ভয়াবহ ফল ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ইসলামাবাদ। মঙ্গলবারের হামলার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ে বৃহস্পতিবার ভোরে সেই হুঁশিয়ারি বাস্তবে পরিণত হলো।
হামলায় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে। অন্যদিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর হামলায় অন্তত সাত ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী ও চারজন শিশু।
হামলা নিয়ে ইরান সরকার তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সূত্র : আলজাজিরা