× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সেই নীতিশেই প্রথম ভাঙন ‘ইন্ডিয়ায়’

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১৮ পিএম

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:২৩ পিএম

সেই  নীতিশেই প্রথম ভাঙন ‘ইন্ডিয়ায়’

সকালে ‘ইন্ডিয়া’ ভেঙে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিকালেই আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের জনতা দলের ইউনাইটেড (জেডিইউ) নেতা নীতিশ কুমার। তার এই জোট বদলের খেলায় তাকে নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে। ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ‘পল্টুরাম কুমার’, ‘পল্টিবাজ’ শব্দে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হয় নীতিশ কুমার নতুন সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা। 

ভারতে বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ভেঙে বেরিয়েই সেই বিজেপির সঙ্গে যোগ দিয়ে নতুন সরকার গঠন করলেন জেডিইউ নেতা নীতিশ কুমার। কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলসহ কয়েকটি দলের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। এসব দলসহ বিজেপিবিরোধী এক মহাজোট গঠনের শুরু থেকে সক্রিয় ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সেই জোট ঠিকঠাক কর্মসূচিও এখনও দিতে পারেনি। তার মধ্যেই তিনি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিলেন।

এ নিয়ে এক দশকের মধ্যে পাঁচবার জোট বদল করলেন বিহারের বহুল আলোচিত এই রাজনীতিবিদ। আর এবার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে ৯ বার শপথ নিলেন তিনি। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নীতিশের পদত্যাগে বিজেপিবিরোধী জোট ইন্ডিয়া একটি বড় ধাক্কা খেল। তবে রবিবার জোট নেতারা নীতিশের জোট বদলকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ‘পল্টুরাম কুমার’ ইন্ডিয়া ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় লোকসভা নির্বাচনে তেমন প্রভাব পড়বে না। উল্লেখ্য, ইন্ডিয়া জোটের নেতারা নীতিশ কুমারকে ‘পল্টুরাম কুমার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

রবিবার সকালে বিহারের রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নীতিশ কুমার। এ সময় তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। রাজ্যপাল তার প্রতি নতুন সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

নীতিশ কুমারের জনতা দল এর আগেও বিজেপির সঙ্গে দুবার জোট করে বিহারে সরকার গঠন করেছে। ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত হলে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন নীতিশ। 

এরপর ২০১৭ সালে বিজেপির সঙ্গে ফের জোট করেন। ২০২৩ সালে বিজেপির সঙ্গে করা বিহারের জোট সরকার আবারও ভেঙে দেন নীতিশ। এরপর লালুপ্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন নীতিশ। 

লোকসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এমনিতে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলোর সঙ্গে কংগ্রেসের একটা টানাপড়েন চলছে। তার মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের আগে নীতিশের এই ইস্তফায় ‘ইন্ডিয়া’ বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জোট ছেড়ে নীতিশের বেরিয়ে যাওয়ায় ‘ইন্ডিয়া’র ক্ষতি তো হবেই না, বরং লাভ হবে। তার এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াতে বিহারে লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট ভালো ফলই করবে।

নীতিশ যে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন, তা আগেই আভাস পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তার ‘মানভঞ্জনের’ শেষ চেষ্টাও করা হয়েছিল কংগ্রেসের তরফে। সূত্রের খবর, নীতিশকে বেশ কয়েকবার ফোনও করেন খাড়গে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। রবিবার নীতিশ ইস্তফা দিতেই খাড়গে বলেন, ‘বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং লালু প্রসাদ যাদব আমাকে আগেই এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আজ তা সত্যি হলো। তবে দেশে এমন অনেক লোক আছেন যারা আয়া রাম, গয়া রাম গোত্রের মধ্যে পড়েন।’ তিনি আরও বলেন, নীতিশের জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াটা খুব একটা চাপ হবে না ‘ইন্ডিয়া’র। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, কংগ্রেস যতই স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা করছে, নীতিশ শেষ পর্যন্ত একটা ‘অস্বস্তির’ কাঁটা রেখেই গেলেন। ঘটনাচক্রে নীতিশ এনডিএতে ‘কামব্যাক’ করায়, কংগ্রেসের হাতছাড়া হলো আরও একটি রাজ্য।

ভারতে ভোটকুশলী হিসেবে খ্যাত প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া জোট শুরু থেকেই বলে এসেছি, নীতিশ কুমার জোটে থাকবেন। তিনি একজন পল্টুমার।’ উল্লেখ্য, হঠাৎ হঠাৎ অবস্থান বদলানো লোকদের ভারতে পল্টুমারও বলা হয়।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘নীতিশ কুমার যেভাবে দলবদলের খেলা শুরু করেছেন, যেভাবে রঙ বদলাচ্ছেন, তাতে গিরগিটিকেও প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে। এই বিশ্বাসঘাতককে বিহারের জনতা মাফ করবে না। এই ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট, কংগ্রেসের ‘ন্যায় যাত্রা’য় ভয় পেয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।’

নীতিশ কুমারকে ‘গিরগিটি রত্ন’ দেওয়ার দাবি লালুপ্রসাদ যাদবের জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপের। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘যে গতিতে রঙ বদলাচ্ছেন নীতিশ কুমার, তাকে গিরগিটি রত্ন দেওয়া উচিত।’

উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের এক বছর আগে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতাসীন আঞ্চলিক দলগুলোকে জোটবদ্ধ করার উদ্যোগ প্রথম নিয়েছিলেন নীতিশ কুমারই। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিম বঙ্গে এসে তিনি দেখা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বস্তুত তার চেষ্টাতেই গত বছর জুন মাসে বিহারের পটনায় প্রথম বৈঠক হয় বিরোধী জোটের। সেই বৈঠকের আহ্বায়ক ছিলেন নীতিশই। তখনও বিরোধী জোটের নামকরণ হয়নি ‘ইন্ডিয়া’।

কংগ্রেসের পক্ষে নীতিশকে জোটের আহ্বায়ক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন জেডি (ইউ)-এর জাতীয় সভাপতি নীতিশ। পাল্টা প্রস্তাবে তিনি বলেছিলেন, ‘কংগ্রেসের কারও এই পদ নেওয়া উচিত। কংগ্রেসের কোনো নেতাকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হোক।’ 

এর পরেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে জোটের চেয়ারপারসন হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে আহ্বায়ক পদ প্রত্যাখ্যান করার ঘটনায় জাতীয় রাজনীতির নীতিনির্ধারকরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে নীতিশের বেরিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে সেটিই প্রমাণিত হলো। রাজনীতির ময়দানে যে স্থায়ী বলে কিছু হয় না, সেটা আবার প্রমাণ করে দিলেন বিহারের ‘সুশাসন বাবু’ খ্যাত নীতিশ কুমার।

সূত্র : স্ক্রলডটইন, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা