× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিএনএনের প্রতিবেদন

ক্ষুধার জ্বালায় ‘ঘাস খাচ্ছে’ গাজার ফিলিস্তিনিরা

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৭ পিএম

আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৯ এএম

ইসরায়েলের গণহত্যা অভিযানে ২২ লাখ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির অনেকেই ক্ষুধার যন্ত্রণা লাঘবে এখন ঘাস ও নোংরা পানি খেতে বাধ্য হচ্ছে। ছবি : সিএনএন

ইসরায়েলের গণহত্যা অভিযানে ২২ লাখ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির অনেকেই ক্ষুধার যন্ত্রণা লাঘবে এখন ঘাস ও নোংরা পানি খেতে বাধ্য হচ্ছে। ছবি : সিএনএন

হানাদি গামাল সাইদ এল জামারা জানান, ঘুমই তার বাচ্চাদের ক্ষুধার জ্বালা ভুলিয়ে রাখছে। সাত সন্তানের মা জামারাকে দক্ষিণ গাজার রাফাহর কাদামাখা রাস্তায় খাবারের জন্য ভিক্ষা করতে দেখা যায়। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএনের। তিনি দিনে অন্তত একবার তার বাচ্চাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, তার স্বামী ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের রোগী। এখন তার যত্ন নেওয়ার সময়। অথচ পরিস্থিতি পুরোটাই দুর্ভিক্ষের। ঠিকমতো ভিক্ষাও পান না।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচার গণবোমাবর্ষণ করে জীবনধারণের সব ব্যবস্থা তছনছ করে দিয়েছে জায়নবাদী ইসরায়েল। সেখানে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। শিশুরা খেতে পাচ্ছে না, গর্ভবতী নারীরা কঙ্কালসার নবজাতক জন্ম দিচ্ছেন, বয়স্করা অনাহারে মরার মুখে পড়েছেন; রোগ-শোকে পুরো জীবনব্যবস্থায় নেমে এসেছে বিভীষিকা। সেখান থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন করেছে সিএনএন, যেটি মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) তাদের নিউজ সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। 

সন্তানদের করুণ অবস্থা সম্পর্কে রাফাহ অঞ্চলের ওই মা জামারা সিএনএনকে বলেন, ‘তারা এখন দুর্বল, সব সময় ডায়রিয়া লেগে আছে। তাদের মুখ হলুদ হয়ে গেছে।’ ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় জামারার পরিবার উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়। ৯ জানুয়ারি সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘আমার ১৭ বছর বয়সি মেয়ে আমাকে বলে, সে মাথা ঘোরা অনুভব করে। আমার স্বামীও খেতে পাচ্ছে না।’

গাজা যখন পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে , তখন বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সিএনএনকে বলেছেন, তারা ক্ষুধা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, যেন তাদের ছোট্ট সন্তানরা কিছু খেতে পারে। এখন অবস্থা এমন, যদি কোথাও ফিলিস্তিনিরা পানি খুঁজে পায়, তাহলে তা পান করার অযোগ্য। যখন ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করে, তখন ক্ষুধার্ত ও সহায়তার জন্য উন্মুখ গাজাবাসী তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাস্তায় থাকা শিশুদের অবস্থা আরও খারাপ। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে তারা বাড়িঘর থেকে উদ্বাস্তু হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় থাকছে। বাসি রুটির জন্য কান্নাকাটি এবং লড়াই করতে দেখা গেছে তাদের। অন্যরা ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি নিয়ে খাবারের সন্ধানে ঠান্ডায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হাঁটছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হোসেন সিএনএনকে বলেছেন, এমনকি যুদ্ধের আগে গাজার তিনজনের মধ্যে দুজনই খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করত। ইসরায়েল ও মিসরের আরোপিত অবরোধের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিরা ১৭ বছর ধরে বসবাস করছে।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি) তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ এবং অবরোধের ফলে গাজায় অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে প্রায় ২ দশমিক ২ মিলিয়ন জনসংখ্যা উচ্চমাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বা আরও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। 

জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস  সিএনএনকে বলেছেন, ‘গাজার ৪ লাখ বাসিন্দাকে ‘ক্ষুধার্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসলে তারা দুর্ভিক্ষের মধ্যেই রয়েছে।’ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, ‘ইসরায়েল গাজার খাদ্যব্যবস্থা ধ্বংস করছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।’

১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ফিলিস্তিনিরা ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আশপাশের এলাকাগুলো ছাই এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে পুরো পরিবারগুলো বাস্তু থেকে মুছে গেছে। মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বোমাবর্ষণে চিকিৎসাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন অনাহার এবং পানিশূন্যতা তাদের বেঁচে থাকার জন্য বড় হুমকি।

রাফাহ শহরের মা জামারা বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি। আমার মনে হয়, বোমার আঘাতে মারা যাওয়া আরও ভালো, অন্তত আমরা শহীদ হব। কিন্তু এখন আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছি।’

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ২৬ হাজার ৬৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৫ হাজার ৩৮৭ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। এরপর ইসরায়েল নির্বিচার গণহত্যা অভিযান শুরু করে।

উত্তর গাজার মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ‘ঘাস খাচ্ছে’

রাফাহতে বাস্তুচ্যুত ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট মোহাম্মদ হামুদা তার সহকর্মী ওদেহ আল-হাউয়ের তার পরিবারের জন্য পানি আনতে গিয়ে ইসরায়েলের বোমায় নিহত হওয়ার ঘটনার কথা স্মরণ করেন। হামুদা বলেন, আল-হাউ উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি পানির স্টেশনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন তিনি এবং আরও বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি বোমা হামলায় আক্রান্ত হন।

তিন সন্তানের বাবা হামুদা সিএনএনকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত অনেক আত্মীয় এবং বন্ধু এখনও উত্তর গাজা উপত্যকায় রয়েছে, অনেক কষ্ট পাচ্ছে তারা। তারা ঘাস খায় এবং দূষিত পানি পান করে।’

ইসরায়েলি বিমান হামলা জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ধ্বংস করেছে। একজন বাস্তুচ্যুত স্বাস্থ্যকর্মী সিএনএনকে জানান, তার সহকর্মী পানি আনতে গিয়ে এই অঞ্চলে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের অবরোধ এবং ত্রাণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্যের মজুদ একেবারে নেই। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে এবং গাজাজুড়ে মানুষের কাছে খাদ্য অপ্রাপ্য হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মতে, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে খাদ্যঘাটতি পরিস্থিতি খুবই নাজুক। যুদ্ধের প্রথমদিকে এই উত্তর গাজা তছনছ করে দেয় ইসরায়েল। ইসরায়েলের বোমা হামলায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ইসরায়েল গাজায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখায় এই অঞ্চল থেকে অনাহার পরিস্থিতি ও সরবরাহ ঘাটতি সম্পর্কে রিপোর্ট করা খুবই কঠিন। 

হামুদা জানান, জাবালিয়া থেকে তার বন্ধুরা তাকে এই মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ‘একটি গাধাকে তার মাংস খাওয়ার জন্য জবাই করা হয়। গাধা জবাই করে খাওয়ার ঘটনা গাজায় বিরল। তবে অভাব ও ক্ষুধার জ্বালায় তারা এটি করতে বাধ্য হয়েছিল।

মানবিক সহায়তার প্রচেষ্টায় নতুন আঘাত কয়েকটি পশ্চিমা দেশের গাজায় জাতিসংঘের প্রধান ত্রাণ সংস্থায় সহায়তা বন্ধ করার ঘটনা। ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ)-কে অর্থায়ন স্থগিত করেছে। ইসরায়েল একটি অভিযোগ করেছে, ইউএনআরডব্লিউএর কয়েকজন কর্মী অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলায় হামাসকে সহায়তা করে। অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গেই জাতিসংঘ বেশ কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। তবে সেই অভিযোগের এখনও তদন্তই শুরু হয়নি।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমা দেশগুলোকে ত্রাণ সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির জন্য ইউএনআরডব্লিউএ একটি ‘লাইফলাইন’। সংস্থাটির ১৩ হাজার কর্মীর মধ্যে মাত্র এক ডজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের জন্য ‘সম্মিলিতভাবে শাস্তি’ দেওয়া উচিত নয়।

‘বিশুদ্ধ পানি নেই’

গিহান এল বাজ তার বাচ্চাদের এবং নাতি-নাতনিদের সান্ত্বনা দিয়ে ক্ষুধার জ্বালা ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তার হাঁটুর ওপর একটি বাচ্চাকে দোলাচ্ছিলেন তিনি। বাচ্চাটি সম্পর্কে তিনি বলেন, খাবারের জন্য প্রায়ই ‘চিৎকার করে’ ওঠে শিশুটি।

তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার নেই। আমাদের ওপর দিয়ে সূর্য ঘুরে ডুবে গেছে অথচ আমরা মধ্যাহ্নভোজও করিনি।’ এল বাজি গাজার রাফাহতে একটি জীর্ণ তাঁবুতে ১০ জন আত্মীয়ের সঙ্গে বসবাস করেন। সিএনএনকে তিনি জানান, তার স্বামীকেও দেখতে হয় তাকে। তার স্বামী ক্ষুধায়-ক্লান্তিতে মাথা ঘুরে পড়ে যান, তার হাত ভেঙে যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো খাবার পানি নেই। বিশুদ্ধ-পরিষ্কার পানি নেই। পরিষ্কার বাথরুম নেই। কোলের বাচ্চা একটি বিস্কুটের জন্য কাঁদছে। অথচ তাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই, কিছু খুঁজেও পাচ্ছি না।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা