মুহাম্মদ তাসনিম আলম
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০৬ পিএম
৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় অন্তত ১৯ হাজার শিশু এতিম হয়েছে
শিশুদের দেবদূত বলা হয়ে থাকে। তাই নিষ্পাপ, নিরাপদ শিশুদের শান্তির প্রতীক ধরা হয়। কিন্তু গাজায় শান্তির প্রতীক শিশুরাই আজ সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে। বড়দের পাশাপাশি ইসরায়েলি কামান ও গোলার মুখে বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে গাজার শিশুরা। ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর হতাহতের পাশাপাশি অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ১৯ থেকে ২৪ হাজার শিশু এতিম হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১৯ হাজার শিশু এতিম হয়েছে।
ইউনিসেফের ফিলিস্তিন শাখার প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা জনাথন ক্রিকক্স বলেন, এসব শিশুর একটা বড় অংশকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব শিশুর অনেকে তাদের নিজের নাম পর্যন্ত বলতে পারছে না। ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অনেক শিশু নির্বাক হয়ে গেছে। তারা আতঙ্কে কথা বলতে পারছে না। এসব শিশুর বিশেষ পরিচর্যা দরকার। অথচ সেটার কোনো ব্যবস্থা নেই।
জাতিসংঘ গাজায় এতিম হওয়ার সংখ্যা ১৯ হাজারের মতো বললেও তা বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাতা-পিতার একজন বা দুজনকেই হারিয়েছে গাজায় এরকম শিশুর সংখ্যা ২৪ হাজারের বেশি বলে জানিয়েছে ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর নামের একটি এনজিও।
এদিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই মাসের মাথায় ইউনিসেফ জানিয়েছিল, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একটি বা দুটি পা হারিয়েছে, এ ধরনের শিশুর সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা আজ বুধবার চার মাস পূর্ণ হয়েছে। পশ্চিম তীর বাদ দিয়ে শুধু গাজায় সাড়ে ২৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের প্রায় ১২ হাজারের বয়স ১৮ বছরের কম। অর্থাৎ গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের বেশি শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং কোথাও ৬, কোথাও ১২ কিলোমিটার প্রস্থের গাজার মোট জনসংখ্যা ২৩ থেকে ২৪ লাখ। যুদ্ধে এ জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ স্থানচ্যুত হয়েছে।
গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বা ১১ লাখ শিশু। তাই স্বাভাবিকভাবে স্থানচ্যুতদের একটা বড় অংশও শিশু। যেকোনো সহিংসতার মতো ইসরায়েলি হামলায়ও গাজার নারী, শিশু ও বয়স্কদের বেশি মাশুল গুনতে হচ্ছে।
অনেক শিশু জন্মের পরপরই মা বা বাবা অথবা উভয়কে হারাচ্ছে। মা-বাবা উভয়ে হারিয়েছে এক মাস বয়সি এরকম এক শিশুকে গাজার আল-আকসা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটি হাসপাতালের ইনকিউব্যাটরে রয়েছে।
এ শিশু সম্পর্কে হাসপাতালের নার্স ওয়ারদা আল-আওয়াদা বিবিসিকে বলেন, এ শিশুর মা ইসরায়েলি ক্ষেণপাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছে। তাই তার নাম আমাদের জানা নেই। আমরা তাকে তার মায়ের নামে হানা আবু আমশা বলে ডাকি।
নিহত হানার আরেক শিশু আবেদ হোসাইন তাদের বাড়িতে হামলার বিবরণ দিয়েছে বিবিসির কাছে। শিশু আবেদ জানান, রাতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। এ অবস্থায় আমাদের বাসায় হামলা হয়। একটি ক্ষেপণাস্ত্র আমার মায়ের গায়ে লাগে। তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তার ছিন্নভিন্ন শরীর ধ্বংসস্তূপের নিচে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা তা কয়েক দিন ধরে এক জায়গায় জড়ো করি। হামলায় আমাদের পরিবারের মোটামুটি সবাই নিহত হয়। বেঁচে যাই আমি ও আমার কয়েকজন চাচাতো ভাই-বোন।
শিশুবিষয়ক সংস্থা সস চিলড্রেনস ভিলেজ ইউনিসেফের সঙ্গে গাজায় কাজ করে। দাতব্য সংস্থাটি জানায়, তাদের তত্ত্বাবধানে ৫৫ এতিম শিশু রয়েছে। এসব শিশুর মানসিক অবস্থা ভয়াবহ।
সস চিলড্রেনস ভিলেজের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি চেকপয়েন্ট থেকে আমরা আনুমানিক চার বছর বয়সি এক শিশুকে উদ্ধার করেছি। শিশুটি তার পরিবারের সদস্যরা কোথায় বা কীভাবে নিহত হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছিল না। প্রায় সময় সে নিশ্চুপ থাকত। তবে প্রাথমিক যত্নের পর শিশুটি এখন অল্প অল্প কথা বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম নিউ ইয়র্কারকে গাজার ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির ডাক্তার সীমা জিলানি বলেন, আল-আকসা হাসপাতালে সাত বছরের এক শিশুকে বেশ করুণ অবস্থায় দেখলাম। শিশুটির পায়ে গভীর ক্ষত। তার সেলাই দরকার। কিন্তু হাসপাতালে সেলাই করার মতো প্রয়োজনীয় সুতা নেই। এ অবস্থায় তাকে শুধু ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এটা এক ভয়ঙ্কর অবস্থা।