× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিয়ানমার মানেই মিন অং হ্লাইং অ্যান্ড কোং

মুহাম্মদ তাসনিম আলম

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৯ এএম

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। ফাইল ছবি

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। ফাইল ছবি

মিয়ানমারে সামরিক শাসনব্যবস্থা নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে আগের সেনা শাসকদের একটি বড় তফাত আছে।আগের শাসকদের সন্তানদের তুলনায় হ্লাইংয়ের সন্তানরা জাতীয় সম্পদ লুটপাটের দিক থেকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন। তারা রীতিমতো ব্যবসা-বাণিজ্যের সাম্রাজ্য খুলে বসেছেন। দেশটির সাধারণ মানুষ এবং অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলে থাকেন, মিন অং হ্লাইং সামরিক পোশাক গায়ে দেওয়া একজন ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কিছু নন। একই সঙ্গে তার দুই সন্তানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কারণে দেশটিকে বলা হচ্ছে পারিবারিক কোম্পানি। কিংবা মিয়ানমার মানেই মিন অং হ্লাইং অ্যান্ড কোং।

হ্লাইংয়ের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম অং পায়ে সোনে। মেয়ের নাম খিন থিরি থেত সোম। তারা দুইজনেই ভূমি থেকে শুরু করে টেন্ডার, বিলাসবহুল গ্যালারি এবং হোটেলসহ নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে একাধিক গলফ মাঠ। এ ছাড়াও মিয়ানমারের যাবতীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তারা জড়িয়ে আছেন নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

জান্তার সন্তানদের ব্যবসায়িক চিত্র

হ্লাইংয়ের সেনাপ্রধান হওয়ার পর কোয়ার্টারমাস্টার-জেনারেল করা হয় মেজর জেনারেল মিন নাইংকে। নাইং সেনাপ্রধানের ছেলে অং পায়ে সোনেকে ব্যবসার, আরও সরাসরি বললে জনগণের সম্পত্তি লুণ্ঠনের অ আ শিক্ষা দেন। নাইংয়ের বুদ্ধিতে প্রথমে চিত্র ও ছবি প্রদর্শনীর জন্য ইয়াঙ্গুন গ্যালারি খোলেন সোনে। এই জেনারেলের বুদ্ধিতে হোটেল ব্যবসায়ও নামেন তিনি। 

সেনা কমান্ডার হিসেবে ব্যর্থ হলেও নাইংয়ের ব্যবসায়িক বুদ্ধি বেশ ভালোই বলা যায়। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। নাইংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাধারণ মানুষের ওপর জান্তার অবিরাম বোমাবর্ষণকে শান্তি আলোচনায় ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন তিনি। 

পিতার ক্ষমতাবলে সোনে সামরিক ও বেসামরিক খাতের উল্লেযোগ্য সব প্রকল্পের টেন্ডার হাতিয়ে নেন ধীরে ধীরে। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমার ইকোনমিক কো-অপারেশেনের (এমইসি) গুরুত্বপূর্ণ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সোনের প্রতিষ্ঠান। সাধারণ ব্যবসায়ীদের সরকারি কাজের কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে সচরাচর দেখা যায় না। কেননা, প্রায় প্রতিটি টেন্ডারেই সোনের কোম্পানি অংশ নেয়। আর তাদের অংশ নেওয়া মানেই সেই কাজ তার। এ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তারা কোনো বিষয়ে সোনের কোম্পানির সঙ্গে দরকষাকষিতেও যেতে চায় না। অং পায়ে সোনের কোম্পানিগুলো অস্ত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে সামরিক ইউনিফর্ম সরবরাহ পর্যন্ত সামরিক-সংযুক্ত কেনাকাটা এবং প্রকল্পগুলো থেকে মোটা মুনাফা অর্জন করে।

কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেলের কার্যালয় প্রধানত সেনাবাহিনীর ভূসম্পতি দেখে। এ কার্যালয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে সোনের প্রতিষ্ঠান অং মিন্ট মোহ মিন ইন্স্যুরেন্স। এ দুই কোম্পানির হিসাবে কখনও প্রকাশ করা হয় না। অন্যদিকে সব সেনা সদস্য ও কর্মকর্তারা অং মিন্ট মোহ মিন ইন্স্যুরেন্স থেকে শেয়ার কিনতে বাধ্য থাকেন।

জান্তাপ্রধানের পুত্র-কন্যারা সরকারি প্রকল্প বাগিয়ে নিয়েই সন্তুষ্ট নন। তারা সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন হেলিকপ্টার, উড়োজাহাজ এবং অন্য রাষ্ট্রীয় সম্প্রতি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন।

ইয়াঙ্গুনে মিন অং হ্লাইংয়ের একটি বাসস্থান হলো ১৪ ইনিয়া। এটি ছিল একটি সামরিক গেস্টহাউস। ক্ষমতায় আসার পর হ্লাইং বলেন, পূর্বের সেনাশাসক থান শোয়ে এটি তাকে দিয়েছেন। কারণ ইয়াঙ্গুনে তার নিজের কোনো বাড়ি নেই। 

লোটে ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এবং কান থার ইয়ার হাসপাতালের নিকটও রয়েছে তার বেশ কিছু জমি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। অতি সম্প্রতি, হ্লাইংয়ের ছেলে সোনে লিটল ইনিয়া নামে একটি দ্বীপের একটি অংশ দখল করে নিয়েছেন। 

ব্যবসায়িক চতুরতা

অভ্যুত্থানের পরপরই মিন অং হ্লাইং-এর ছেলে ও মেয়ের মালিকানাধীন ছয়টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। যার মধ্যে চারটি সোনের মালিকানাধীন। যেগুলো হলোÑ এ অ্যান্ড এম মাহার কোম্পানি, স্কাই ওয়ান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, দ্য ইয়াঙ্গুন রেস্তোরাঁ এবং ইয়াঙ্গুন গ্যালারি। অন্য দুটি সোনের বোন সোমের মালিকানাধীন এভারফিট জিম কো এবং চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা সেভেন্থ সেন্স।

ব্যবসায়িক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে জেনে তারা ছোট ছোট কোম্পানি খুলে দেশজুড়ে জালের মতো বিছিয়েছে তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। তাদের অনালোচিত অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছেÑ স্টেলার সেভেন এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, আইয়ারওয়াদি অঞ্চলে আজুরা বিচ রিসোর্ট, মাইটেল টেলিকম, বোন মায়াট পায়ে সোন ট্রেডিং কো লিমিটেড, গান শোনার স্ট্রিমিং কোম্পানি জক্স মিয়ানমার, পুলম্যান হোটেল, নেইন চান পায়ে সো বাস টার্মিনাল, মায়ানমার সিট থু গি, মিন তাইর গি, উইনিং স্কাই, ট্রু গলফ এবং নেয়িন চ্যান পায়ে সোনে ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড। 

ইরাবতিকে একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একটি টেন্ডারে সোনের এক কোম্পানি বিড করেছিল। তাদের অনেকগুলো সহায়ক কোম্পানি রয়েছে। কারণ একই কোম্পানি যদি সব সময় কাজ পেতে থাকে তবে তা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হবে।

বর্তমান অবস্থা

জান্তাপ্রধানের সন্তান যখন লুটপাটে মত্ত ঠিক তখন একের পর ঘাঁটি ও শহরের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সেনাবাহিনী। গত অক্টোবর থেকে রাখাইন প্রদেশে জান্তার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে অভিযান শুরু করে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি জোট। আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি জোটটির তিন সদস্য। আরাকান আর্মি জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৮৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তে এখনও থেমে থেমে সংঘাত চলছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকার প্রধান অং সান সু চিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির অর্থনীতি ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অর্থনীতি ২০২৪ সালে প্রায় ৩০ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। প্রায় ৫ কোটি ৩৮ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ রকমের বেড়েছে। চীন, ভারত ও জাপানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বিদেশি তেমন কোনো বিনিয়োগ নেই। কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব। 

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জান্তাবিরোধী মনোভাব দিনে দিনে প্রবলতর হচ্ছে। বিদ্রোহীদের সমর্থনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকে প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। 

সূত্র : ইরাবতি, বিশ্বব্যাংক 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা