আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২২ ১৮:০৭ পিএম
ফাইল ছবি
আবারও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি কমে এক দশমিক ছয় শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে অর্থনীতির আকার ছোট হওয়ায় দেশটিতে মন্দার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দেশটির বাণিজ্য বিভাগ এ তথ্য জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ এপ্রিল-মে সময়কালের অর্থনৈতিক সংকোচনের এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আগে প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চে দেশটির জিডিপি কমে বার্ষিকভিত্তিতে এক দশমিক ছয় শতাংশ। তবে শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-মে) অর্থনীতির যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তার হচ্ছে দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী হওয়ায় ভোক্তাদের ব্যয় অনেক ধীর হয়েছে। সেখানের নাগরিকরা খুব কম জিনিসপত্র কিনছে। ব্যবসায় বিনিয়োগও কমেছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে, যার সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নির্মাণখাতে। এ ছাড়া সরকারের ব্যয়ও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
সংবাদমাধ্যম এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এ খবরটি খুবই জটিল সময়ে এসেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বৃদ্ধির ফলে দেশটির ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন-চতুর্থাংশ পয়েন্ট ভিত্তিতে সুদের হার বাড়িয়েছে।
দুই-চতুর্থাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিকে সাধারণত মন্দার জন্য একটি শক্তিশালী সঙ্কেত হিসাবে দেখা হয়। বৈশ্বিক মন্দা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যয়ের কারণে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়তে হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনও আসন্ন প্রায়। কাজেই এই মন্দার আভাস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটির প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখিতা বিশ্বের জন্যও খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য জানিয়েছেন, মার্কিন অর্থনীতি মন্দার শিকার হচ্ছে না বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী। তবে তার সমালোচকদের মতে, প্রবীন এই ডেমোক্র্যাটের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার প্রমাণ হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম তিন মাসে ১ দশমিক ৬ শতাংশ পতনের পর রপ্তানি বাড়লেও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অটো এবং আবাসিক ভবনসহ সব পণ্যের ওপর সরকারি ব্যয় এবং বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে। এ ছাড়া করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই মার্কিন অর্থনীতিকে লড়তে হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে।
করোনার লকডাউনের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এবং ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। এর ফলে মার্কিন অর্থনীতিকে এখন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।
টরন্টোর বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্যাল গুয়াতেইরি বলেন, অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এতে সেপ্টেম্বরে আরেকবার সুদহার বাড়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হবে ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড।
মার্কিন ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের মতে, অর্থনৈতিক তৎপরতা মারাত্মকভাবে কমে গেলে এবং তা যদি কয়েক মাসের বেশি স্থায়ী ঘটে, বিশেষ করে উৎপাদন, কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতির হিসাবের বাইরের আয় ও অন্য সূচকগুলো নিম্নমুখী থাকলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
বছরের প্রথম অর্ধেকে প্রতিমাসে গড় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭০০ করে। এতে মানুষের আয়ের সূচক অবশ্য ভালো দেখিয়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখিতার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছেই।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট বিক্রি কমে গেছে এবং ভোক্তাদের মানসিকতা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মার্কিন স্টক মার্কেটের স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিপরীতে ডলার স্থিতিশীল।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি আগে থেকেই ছিল, এখন যুক্ত হচ্ছে নিম্ন প্রবৃদ্ধি।এতে নতুন করে এক মন্দার মুখে পড়েছে সারা বিশ্ব। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র করোনা সংকটের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে এর আগে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ডুডলি সতর্ক করে বলেছেন, একটি মন্দা এখন ‘কার্যত অনিবার্য’।
ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক তারা সিনক্লেয়ার বলেছেন, ‘মন্দার ভবিষ্যদ্বাণী করা অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন। তবে আমরা জানি যে, আমরা একবার মন্দার সম্মুখীন হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ নীতিনির্ধারকরা তাদের পূর্বাভাসে মন্দার দিকটি কম আনেন। স্বাভাবিক সময়ে অর্থনীতির পূর্বাভাস দেওয়ার দিকে মন দেন তারা।’
মন্দার পূর্বাভাস বিষয়ে ডিউক ইউনিভার্সিটির ফুকা স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক ক্যাম্পবেল আর হার্ভে বলেছেন, ‘আমরা একটি কঠিন সমস্যা পেয়েছি। মন্দার একটি বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে।’ তবে কিছু বিশ্লেষক এখনও বিশ্বাস করেন, এ বছর মন্দা হওয়ার শঙ্কা কম।