× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এসআইপিআরআইর প্রতিবেদন

ইউক্রেন যুদ্ধের ‘ঘি’ খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ১০:২৬ এএম

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ১১:০৯ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধের ‘ঘি’ খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনকে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) সদস্য করার জিদ করে দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা ফেঁদেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দোহাই দিয়ে দেশটিকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে এই যুদ্ধ জিইয়ে রেখে মূলত ইউরোপের অন্যান্য দেশে রাশিয়াভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়াকে আগ্রাসী প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে ‘মহান বড় ভাইয়ের’ মতো দায়িত্বশীল ভূমিকার অন্তরালে যুদ্ধের ঘি খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রই। যুদ্ধের ভয়কে পুঁজি করে ইউরোপে অস্ত্র রপ্তানি দ্বিগুণ করেছে বাইডেন প্রশাসন।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিচার্স ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) সোমবার (১১ মার্চ) অস্ত্র আমদানি-রপ্তানির যে বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা পর্যালোচনা করলে এমন চিত্র উঠে এসে। 

ফিনল্যান্ড, সুইডেনসহ ইউরোপের কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দেশগুলোও অস্ত্র আমদানি দ্বিগুণেরও বেশিতে নিয়ে গেছে। সর্বশেষ ৭ মার্চ সুইডেন এবং তার আগে ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। ফলে তাদের সামরিকায়ন ত্বরান্বিত করতে অস্ত্রভাণ্ডারের প্রয়োজন। এসআইপিআরআইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলো ২০১৪-১৮ মেয়াদের তুলনায় ২০১৯-২৩ মেয়াদে অস্ত্রের আমদানি দ্বিগুণ করেছে। এই অস্ত্রের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু ইউরোপেই নয়, অস্ত্রের সবচেয়ে বেশি ঝনঝনানি শোনা গেছে এশিয়া, ওশেনিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। ২০১৯-২৩ মেয়াদে এই তিন অঞ্চলেই দেখা যায় বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারকের ৯টি। এসব অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি রয়েছে। সব মিলে ২০১৪-১৮ মেয়াদের তুলনায় ২০১৯-২৩ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি রয়েছে ১৭ শতাংশ। তবে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। রাশিয়া প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের কাছে দ্বিতীয় অবস্থান হারিয়ে তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারকের অবস্থানে নেমে গেছে। অস্ত্রের বিপুল ক্রয়াদেশ ও রমরমা অস্ত্র ব্যবসার মধ্যে ব্যতিক্রমী তথ্য হলোÑ অস্ত্র স্থানান্তরের বৈশ্বিক পরিমাণ ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে।

২০১৯-২৩ মেয়াদে ইউরোপীয় দেশগুলোর আমদানি করা অস্ত্রের প্রায় ৫৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করেছে, যা ২০১৪-১৮ মেয়াদে ছিল ৩৫ শতাংশ। এসআইপিআরআইর পরিচালক ড্যান স্মিথ বলেছেন, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো তাদের আমদানি করা অস্ত্রের অর্ধেকেরও বেশি এনেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। একই সময়ে ইউরোপও বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ইউরোপের প্রধান রপ্তানিকারক ফ্রান্স। ড্যান স্মিথ বলছেন, এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানির তথ্য ইউরোপের শক্তিশালী সামরিক-শিল্প ক্ষমতারই প্রতিফলন। 

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের রপ্তানি দ্বিগুণ বৃদ্ধি

২০১৪-১৯ মেয়াদের তুলনায় ২০১৯-২৩ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি বেড়ে বৈশ্বিক শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক রপ্তানি করেছে দেশটি, আগের বছর যা ছিল এক-তৃতীয়াংশ (৩৪ শতাংশ)। ২০১৯-২৩ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ১০৭টি দেশের কাছে অস্ত্র রপ্তানি করেছে, এটি আগের যেকোনো পাঁচ বছর মেয়াদের চেয়ে বেশি এবং অন্য যেকোনো অস্ত্র রপ্তানিকারকের চেয়ে অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো মিলে ২০১৯-২৩ মেয়াদে বিশ্বের মোট অস্ত্র রপ্তানির ৭২ শতাংশই দখল করে। ২০১৪-১৮ মেয়াদে যা ছিল ৬২ শতাংশ।

এসআইপিআরআইর বৈশ্বিক অস্ত্র স্থানান্তর পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির পরিচালক ম্যাথু জর্জ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে তার বৈশ্বিক ভূমিকা বাড়িয়েছে। এটি তার বৈদেশিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আগের তুলনায় অনেক বেশি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে তারা। এটি এমন এক সময়ে করেছে তারা, যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক আধিপত্যকে উদীয়মান শক্তি চ্যালেঞ্জ করেছে।’

ফ্রান্সের অস্ত্র রপ্তানি ২০১৪-১৮ মেয়াদের তুলনায় ২০১৯-২৩ মেয়াদে ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমবারের মতো রাশিয়াকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারকের অবস্থানে উঠে এসেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের অস্ত্র রপ্তানির বৃহত্তম অংশ এশিয়া ও ওশেনিয়ার দেশগুলোতে গেছে এবং ৩৪ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গেছে। ফরাসি অস্ত্র রপ্তানির বৃহত্তম একক গ্রাহক ভারত, যা প্রায় দেশটির মোট রপ্তানি ৩০ শতাংশ। ফরাসি অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে মূলত ভারত, কাতার ও মিসরে যুদ্ধবিমান সরবরাহের কারণে।

এসআইপিআরআইর গবেষক ক্যাটারিনা জোকিক বলেছেন, ‘ফ্রান্স রপ্তানির মাধ্যমে তার অস্ত্র-শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য বৈশ্বিক চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। ফ্রান্স ইউরোপের বাইরে তার যুদ্ধবিমান বিক্রিতে বিশেষভাবে সফল হয়ে্ছে।’

২০১৪-১৮ মেয়াদের তুলনায় ২০১৯-২৩ মেয়াদে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি ৫৩ শতাংশ কমেছে। গত পাঁচ বছরে এই পতন দ্রুত হয়েছে। ২০১৯ সালে রাশিয়া ৩১টি দেশে প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক ছিল। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা ঠেকেছে ১২টিতে। এশিয়া ও ওশেনিয়ার দেশগুলো ২০১৯ সালে রাশিয়ার মোট অস্ত্র রপ্তানির ৬৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল, যা ২০২৩ সালে দ্বিগুণ কমেছে। রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির প্রধান গন্তব্য ভারত এবং চীন। তবে চীন অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোয় এবং ভারত অন্য উৎস থেকে অস্ত্র কেনায় রাশিয়ার রপ্তানিতে ধস নেমেছে।

এসআইপিআরআইর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০টি অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হলো যথাক্রমেÑ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি (৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি), দক্ষিণ কোরিয়া (১২ শতাংশ বৃদ্ধি), চীন (৫.৩ শতাংশ কমেছে), জার্মানি (১৪ শতাংশ কমেছে), যুক্তরাজ্য (১৪ শতাংশ কমেছে), স্পেন (৩.৩ শতাংশ কমেছে) এবং ইসরায়েল (২৫ শতাংশ কমেছে)। তবে সম্প্রতি ইসরায়েলের অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে, যা প্রতিবেদন তৈরির মেয়াদের মধ্যে পড়েনি।

ইউরোপে অস্ত্র আমদানি বেড়েছে

২০১৪-১৮ মেয়াদের তুলনায় ২০১৯-২৩ মেয়াদে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ৯৪ শতাংশ। ২০১৯-২৩ মেয়াদে ইউরোপের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক ছিল ইউক্রেন। তবে ২০২২ সালে অন্তত ৩০টি দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়; এখন আমদানিকারক হিসেবে ইউক্রেনের অবস্থান ইউরোপে চতুর্থ। 

২০১৯-২৩ মেয়াদে ইউরোপের দেশগুলো অস্ত্র আমদানির ৫৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়েছে, ২০১৪-১৮ মেয়াদে ছিল ৩৫ শতাংশ। এই অঞ্চলে অন্য দুই বৃহত্তম সরবরাহকারী জার্মানি ও ফ্রান্স, যাদের শেয়ার যথাক্রমে ৬.৪ শতাংশ ও ৪.৬ শতাংশ।

এসআইপিআরআইর বৈশ্বিক অস্ত্র স্থানান্তর পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, যেসব ক্রয়াদেশ দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো, তার মধ্যে অনেক উচ্চমূল্যের অস্ত্র- ৮০০টি যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধ-হেলিকপ্টারসহ ভারী ভারী অস্ত্র রয়েছে। চলতি বছরেও ইউরোপীয় অস্ত্র আমদানি উচ্চস্তরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত দুই বছরে আমরা ইউরোপে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অনেক বেশি চাহিদাও দেখেছি। তবে এই পরিস্থিতির জন্য ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে দায়ী করেছেন তিনি, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা