প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪৬ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪৫ এএম
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতনি। ছবি : সংগৃহীত
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ৮৭ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট নিয়ে মসনদে বহাল থাকছেন। এ নিয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে টানা পাঁচবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকছেন তিনি।
রবিবার (১৭ মার্চ) শেষ হওয়া রাশিয়ার এবারের তিন দিনব্যাপী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা দেশটির আধুনিক ইতিহাসে রেকর্ড। সোমবার সকাল পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ ব্যালট গণনা শেষ হয়েছে।
এবারের ভোটে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী নিকোলাই খারিতোনভ ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। ৩ দশামিক ৭৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন নিউ পিপল পার্টির প্রার্থী ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ। আর ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে আছেন এলডিপিআর প্রার্থী লিওনিদ স্লুটস্কি। অর্থাৎ কোনো প্রার্থীই পুতিদের ধারে-কাছেই আসতে পারেননি।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল ৭টা পর্যন্ত গণনা করা ভোটের এ ফলাফল প্রকাশ করেছে।
জয় নিশ্চিত হওয়ার পর রবিবার রাতে এক ভাষণে শক্তিশালী রুশ জাতি গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন পুতিন। পুতিন বলেন, একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর এবং সার্বভৌম রাশিয়ার স্বপ্ন দেখি আমি। এ ভোটের ফলাফল রুশ জনগণকে সেই সুযোগ করে দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুতিন।
এ জয়ের মধ্য দিয়ে আরও ৬ বছরের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। আগামী মে মাসে প্রেসিডেন্ট পদে নতুন করে শপথ নেবেন তিনি। কখনও প্রেসিডেন্ট, কখনও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার শাসন ক্ষমতায় রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন করে ছয় বছর মেয়াদ শেষ করলে তিনি হবেন গত ২০০ বছরের রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসক। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্ট্যালিন ১৯২২ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।
ভোটের মধ্যে রাশিয়ার কয়েকটি এলাকায় হামলা চালানোয় কড়া প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন পুতিন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামীকাল থেকে ইউক্রেনে হামলার তীব্রতা বাড়াতে পারে রুশ বাহিনী।
এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে একে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আর ইউক্রেনের দখল করা চারটি অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করায়, এসব অঞ্চলের ভোটকে ‘অবৈধ’ বলেছেন ইউরোপের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের মতও তাই।
রাশিয়ার এবার মোট ভোটার ছিল ১১ কোটি ২৩ লাখ। ভোট পড়েছে ৭৪ শতাংশ, যা আধুনিক রাশিয়ার ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। তবে ভোট পড়ার এই হার নিয়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কারণ, পুতিনবিরোধীরা ভোট যে দেননি, তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
গত শুক্রবার থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। রাশিয়া প্রথমবারের মতো এই ব্যবস্থায় ভোট নেওয়া হয়েছে। মস্কোসহ রাশিয়ার ৮৯টি প্রশাসনিক অঞ্চলে তিন দিনই ভোট হয়েছে। তবে এবার অনলাইনে ভোট দেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত ছিল। প্রায় ৪০ লাখ রুশ নাগরিক এবার অনলাইনে ভোট দিয়েছে।
ইউক্রেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া নতুন চারটি রাশিয়ান অঞ্চলে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। এই চার অঞ্চল হলোÑ খেরসন, জাপোরিজিয়া, দোনেস্ক ও লুহানস্ক।
রাশিয়ার নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, এবার সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে চেচনিয়ায় ৯৬ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে টুভায় ৯৪ শতাংশ, কেমেরোভো অঞ্চলে ৯৪ শতাংশ, ডোনেস্ক অঞ্চলে ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে রাশিয়ার কারেলিয়া প্রজাতন্ত্রে- মাত্র ৫১ শতাংশ।
সূত্র : তাস, আলজাজিরা, আরটি