মিয়ানমার গৃহযুদ্ধ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১১ পিএম
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে ড্রোনগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ভূপাতিত করা হয়েছে বলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে। পিডিএফ (পিপলস ডিফেন্স ফোর্সকে) হামলার দায় স্বীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে এসব ড্রোন জান্তার সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বাসভবন, তার সামরিক সদর দপ্তর ও একটি সামরিক বিমান ঘাঁটির দিয়ে ধেয়ে যাচ্ছিল। জান্তা সরকারের তথ্য বিভাগ জানিয়েছে, এসব ড্রোন সফলভাবে ভূপাতিত ও ধ্বংস করা হয়েছে। একটি ড্রোনের সঙ্গে বোমা সংযুক্ত ছিল, যা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
২০২১ সালে অং সান সুচির গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী শাসনভার গ্রহণ করে। সে সময় জান্তাবিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। এনইউজি সমর্থন করে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সকে (পিডিএফ)। পিডিএফ ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এএফপি ও স্থানীয় গণমাধ্যম ইরাবতি এসব খবর দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর নকশা ও পরিকল্পনা মেনে নির্মিত রাজধানী নেপিডো অত্যন্ত সুরক্ষিত। এ শহরে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তারা বসবাস করেন। আশপাশের এলাকাগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকায় নেপিডোর কাছাকাছি হামলার ঘটনা খুবই বিরল।
সামরিক জান্তার সঙ্গে অস্ত্র ও সেনাসংখ্যায় পেরে না উঠে ভিন্নধর্মী কৌশল ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষরা। তারা এখন বোমা বহনে সক্ষম বাণিজ্যিক ড্রোন ব্যবহার করছে। এই ড্রোনগুলো সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে হামলা চালিয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে এর আগে। পিডিএফ জানিয়েছে, সামরিক ঘাঁটিটির দুটি স্থানে হামলাগুলো চালানো হয়েছে। এর মধ্যে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি রয়েছে। তবে কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরে তাদের বক্তব্য আর পাওয়া যায়নি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে 'বোমা নিক্ষেপ' হামলায় মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশে জান্তার সেনারা তাদের সুরক্ষিত অবস্থানগুলো থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো আক্রান্ত হয়েছে এবং চীনের সীমান্তের কাছে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিহত হয়েছেন।
পাঁচ দিন পর আবার বিস্ফোরণ টেকনাফ সীমান্তে
পাঁচ দিন শান্ত থাকার পর ফের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ এসেছে মিয়ানমার থেকে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আসে।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী একাধিক বাংলাদেশি জানান, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নাইক্ষংখালী, মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, পুরানবাজার, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, সাইটপাড়া, রঙ্গিখালী, আলীখালি, লেদা, মুচনী, জাদীমুরা, দমদমিয়া, টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যং পাড়া, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়া, জালিয়াপাড়, টেকনাফ ইউনিয়নের কেরুনতলী, বরইতলী থেকে শুরু করে সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়া, ঝিনাপাড়া, হারিয়াখালি, শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে বিস্ফোরণে বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের উত্তরের বলিবাজার, নাকপুরা, দক্ষিণ-পূর্ব দিকের রুল্লা, হাইসস্যুরাতা, ফাদেংছা, মগনিপাড়া, মাঙ্গেলাখাল, ঢংখালী, উদং, মদিনাপাড়া, হইজ্জারবিল, দোংছে, বারিঙ্গার ডেইল, গড়াখালীসহ নাইক্ষ্যংদিয়া, মাঝামাঝি সিকদারপাড়া, দলিয়াপাড়া, কদিরবিল, নুরুল্যাহপাড়াকে ঘিরে গোলাগুলি ও মর্টার শেলসহ নানা ধরনের বিস্ফোরণ শোনা গেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তাদের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে। সম্ভবত ওই এলাকা পুনরুদ্ধারে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী চেষ্টা করছে। এর জেরে হামলা হচ্ছে। সাবরাং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল ফয়েজ বলেন, পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর আবারো সকাল থেকে বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাফ নদীর ওপারে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বাংলাদেশ নজরে রেখেছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সীমান্তের এ পরিস্থিতিতে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যখন যেমন প্রয়োজন তখন তেমনি পদক্ষেপ নেওয়ার হবে বলে বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।