× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পঞ্চম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ কি আসন্ন

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩০ এএম

আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৫১ এএম

ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে আয়রন ডোম ব্যবহার করে ইসরায়েল। রবিবার রাতে ইসরায়েলের আশকেলন শহরে। ছবি : সংগৃহীত

ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে আয়রন ডোম ব্যবহার করে ইসরায়েল। রবিবার রাতে ইসরায়েলের আশকেলন শহরে। ছবি : সংগৃহীত

গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক জন্ম হয়। এরপর থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের বেশ কয়েকবার বড় ধরনের যুদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালের রমজানের যুদ্ধ বা ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ পর্যন্ত পূর্ববর্তী চারটি যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক আরব দেশ অংশ নিয়েছে। প্রতিবারই আরব দেশগুলো হেরেছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ইরানের ইসরায়েল হামলার পর পঞ্চম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হতে পারে কি না, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের মতে, ইরান হামলার মধ্য দিয়ে আগের মতো আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হওয়ার শঙ্কা অত্যন্ত ক্ষীণ। এর একাধিক কারণ আছে। এসব কারণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি অন্যতম।

যুক্তরাষ্ট্রের ১০ সামরিক ঘাঁটি

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড়-ছোট মিলিয়ে অন্তত ১০টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে বলে জানা যায়। প্রকাশ্য এসব ঘাঁটির বাইরেও গোপন ঘাঁটি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এসব ঘাঁটিতে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার সেনা সদস্য রয়েছেন। মজুদ রয়েছে প্রায় সব ধরনের অস্ত্রের। উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩ হাজার করে মার্কিন সেনা রয়েছে কুয়েত ও কাতারে। কাতারের ঘাঁটিটি সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক।

বাইরাইনে রয়েছে সাত হাজার। ইরাকে ছয় হাজার। সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঁচ হাজার। সৌদি আরব ও জর্ডানে রয়েছে তিন হাজার করে। এ ছাড়া সিরিয়া ও ওমানেও প্রায় এক হাজার করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা রয়েছে। ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের কত সেনা রয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হয়, ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এটি একটি শ্রেণিবদ্ধ ঘাঁটি। যার কোড-নাম ‘সাইট-৫১২’। এতে রাডার নজরদারি সিস্টেম রয়েছে, যা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি শনাক্ত করতে সক্ষম।

আঞ্চলিক বিভাজন

তেল-সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য ইতিহাস বাদ দিয়ে আধুনিক ইতিহাসের দিকে তাকালেও অঞ্চলটির জটিল ও কুটিল বিভক্তির দৃশ্য সবার চোখে পড়ে। ইরান উপসাগরীয় দেশ হলেও ঠিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ নয়। ধর্ম বাদ দিয়ে দেশটির ভাষা ও সংস্কৃতি বাকি দেশগুলোর চেয়ে আলাদা। দেশটি যে পরিমাণ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে অঞ্চলটির আর কোনো দেশের সে অভিজ্ঞতা নেই। দলছুট দেশটির এ ‘বৈপ্লবিক’ ধারা রাজতন্ত্র শাসিত অঞ্চলটির ক্ষমতার মেরূকরণ সমূলে বদলে দিতে পারে, এমন এক ধরনের জুজু পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলটিকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ইরানের এ জুজু দেশটিকে মোটাদাগে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে।

অন্যদিকে শিয়া ধর্মাবলম্বী ইরানে মধ্যপ্রাচ্যের নেতা হতে পারে, সুন্নি সৌদি আরবের এমন ভীতিও দেশটিকে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। 

তৃতীয় মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ একে অপরকে শত্রু মনে করে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট দেশ কাতার মনে করে আরব আমিরাত তাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। তাই তাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দরকার। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা দরকার। 

আব্রাহাম অ্যাকর্ডস

আব্রাহাম অ্যাকর্ডস হলো আরব-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণ সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম পক্ষ হিসেবে চুক্তিটিতে সই করে। পরবর্তীকালে ইসরায়েল ও বাহরাইনের মধ্যেও একই চুক্তি হয়। মরক্কো ও সুদানের মধ্যেও এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে সৌদি আরব চুক্তিটি সইয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল। এ চুক্তির পর তুরস্কও ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ চুক্তিটিতে সই করার আগ্রহ দেখিয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া

আরব বসন্তের ধাক্কায় সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় এক দশকের গৃহযুদ্ধে কোনো মতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকার টিকে গেলেও দেশটির প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো অবস্থা নেই। তাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের সবচেয়ে বড় মিত্র আসাদ ইসরায়েলে হামলা চালানোর কথা চিন্তা করতে পারবেন না। 

হিজবুল্লাহ ও হুতি

লেবাননের হিজবুল্লাহ শিয়া ধর্মাবলম্বী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ইসরায়েলে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। ইরানের সহায়তাপুষ্ট হুতিও আরব সাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। শনিবার রাতে ইসরায়েল এ দুটি গোষ্ঠীও ইরানের সঙ্গে একযুগে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হলে এ দুটি গোষ্ঠী তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

তাছাড়া সিরিয়া ও ইরাকে থাকা ইরানের বিভিন্ন ‘প্রক্সি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও’ ইসরায়েলে হামলা চালাবে। এমনটি হলে মধ্যপ্রাচ্য সত্যিকার অর্থে বড় ধরনের রণক্ষেত্রে পরিণত হবে। 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর আহ্বান

ইরানে পাল্টা হামলা না চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইসরায়েলের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছে। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, ইসরায়েলকে রক্ষায় তারা সর্বাত্মক সহায়তা করবে না। কিন্তু ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে তারা ইরানে হামলা চালাবে না।

ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক মন্ত্রী জোসেপ বোরেল বলেছেন, আমরা একটি গভীর খাদের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের খাদের এ প্রান্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজতে হবে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিও প্রায় একই ধরনের কথা বলেছে। 

ইসরায়েলের নিজস্ব দুর্বলতা

ইসরায়েল মনে করেছিল, দুই সপ্তাহের মধ্যে হামাসকে গাজা থেকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। কিন্তু সাড়ে ছয় মাস পার হতে চললেও ইরানের তুলনায় অতি নগণ্য শক্তি হামাস এখনও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ইসরায়েল ও তার মিত্রদের ওপর ক্রমশ চাপ তৈরি করছে। এ অবস্থায় ইরানের মতো বড় শক্তির সঙ্গে ইসরায়েল যুদ্ধে জড়ানোর আগে দ্বিতীয়বার ভাববে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

তবে শনিবারের হামলার প্রতিশোধ ইসরায়েল নেবেই। তা কীভাবে হবে, সেটা দেখার বিষয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত রবিবারই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বৈঠক করেছে। মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর পক্ষে। কিন্তু সময় ও মাত্রা নিয়ে মতবিরোধ আছে। এ বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার এ প্রতিবেদন লেখার সময় দ্বিতীয় বৈঠকে বসেছে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা।

সূত্র : আল মনিটর, এশিয়া টাইমস, দ্য ইন্টারসেপ্ট 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা