দিনাজপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১০ এএম
প্রকৌশলীর চাকরি ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল নাঈম হুদা। ছবি : প্রবা
দিনাজপুরর চিরিরবন্দরের প্রকৌশলী নাঈম হুদা চাকুরি ছেড়ে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি সার উৎপাদন করে প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। এর মাধ্যমে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। তার এমন সাফল্যে এখন অনেকে কেঁচো সার উৎপাদনে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
২০১৬ সালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক শেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উত্তরা ইপিজেডে চাকরি শুরু করেন তিনি। চাকুরি কালীন তিনি অনুধাবন করতে পারেন, চাকুরিতে যে পরিমাণ সময় আর শ্রম দিতে হচ্ছে, সে অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন কম। তাই সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে দেওয়ার। বাড়িতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করার পরিকল্পনা আঁটেন। এ ভাবনা থেকেই নিজ বাড়িতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন কাজ শুরু করে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি চাকরি ছেড়ে ২০১৯ সালে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। উৎপাদিত সার নিজের কৃষিকাজে ব্যবহার করার পর অতিরিক্ত সার বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, কেঁচো বিক্রি করেও মাসে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা তিনি আয় করেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে নাঈমের কেঁচো সার ও কেঁচো বিক্রি করে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে।
নাঈম হুদা বলেন, ২০১৯ সালে চাকরি ছেড়ে বাড়ির কৃষিতে মনোযোগ দিই। বাড়িতে প্রথমে একে একে কমলা, মাল্টা ও মিশ্র ফলের বাগান করি। বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। বাগান করতে গিয়ে দেখি ফলবাগানে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের প্রয়োজন হচ্ছে। তখন কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে দুই শতক জমিতে কেঁচো সারের একটা প্রজেক্ট করি।
নাঈম আরো বলেন, ‘কেঁচো খামারে ভালো মুনাফা আসায় আমি এই সার ও কেঁচো নিয়ে গবেষণা শুরু করি। তখন হাউস ও রিং থেকে ট্রেতে এই সার উৎপাদন শুরু করলাম। এখন পরীক্ষামূলকভাবে বস্তার মধ্যেও শুরু করেছি কেঁচো সার উৎপাদন। ফলও ভালো পাচ্ছি।’ তিনি এখন ৬ শতক জমিতে কেঁচো সারের খামার সম্প্রসারণ করেছেন। এই খামার থেকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ টন কেঁচো সার উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি টন সার ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। আর এ সার খুচরা প্রতি কেজি ১৬ থেকে ১৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক শাকিল ইসলাম বলেন, নাঈম আমাদের গ্রামের ছেলে। তার নিকট থেকে জৈব সার নিয়ে কলা বাগান, লালশাক ক্ষেতে দিয়েছিলাম। কলা ও লালশাকের ফলন ভালো হয়েছে। এ জৈব সার ব্যবহার করায় রাসায়নিক সারে যে খরচ হত তার থেকে খরচ অনেক কম হয়েছে।
প্রকৌশলীর চাকরি ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল নাঈম হুদা। ছবি : প্রবা
তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, ‘নাঈমের সবজি ক্ষেতে জৈব সার ব্যবহারের কারণে তার সবজির ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি খরচও কম হয়েছে। তার কাছ থেকে সার কিনে আমার সবজি ক্ষেতে দিয়েছি। সবজি ক্ষেতের অবস্থা এখন ভালো। সে একই ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের মো. ফজলুর রহমানের ছেলে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা শারমিন বলেন, উপজেলায় এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রকল্প চালু করেছি। তবে নাঈম হুদা উদ্যোক্তা হিসেবে অত্যন্ত ভালো করছেন। তিনি ইতিমধ্যে সার ও কেঁচো বিক্রি করে নিজের ভালো অবস্থা তৈরি করেছেন।