× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘রাজকীয়’ চা বেচে লাখ টাকা আয় রাজা মামার

আবু বকর রায়হান

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৬ পিএম

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১১ পিএম

নিজের দোকানে আজহার উদ্দিন

নিজের দোকানে আজহার উদ্দিন

প্রবাস থেকে সবাই যখন স্বর্ণালংকার নিয়ে ফেরে, তখন রাজা ফিরেছিলেন চায়ের কেটলি হাতে। প্রথমে সবাই উপহাস করলেও কে জানত ময়মনসিংহের এই রাজা মামাই চায়ের জগতে রাজত্ব করবেন! রাজা মিয়ার পুরো নাম আজহার উদ্দিন। তাকে দেখতেও রাজার মতো। ব্যতিক্রমী গোঁফ, চা বিক্রির অভিনব ধরনে ‘রাজা মামা’ বলে ডাকে সবাই। তার হাতের ৫০ টাকা দামের চা খেতে লম্বা সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে হয় সবাইকে।

বিদেশ গিয়ে শেফদের কাছ থেকে চা বানানোর কৌশল রপ্ত করেন রাজা। দেশে ফিরে ঢাকার বিমানবন্দরে চায়ের দোকান শুরু করেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৮টি দোকানে তার অধীনে ৭০ জন কর্মচারী কাজ করছেন। কাজুবাদাম, হরলিকস, ম্যাটকফি, ব্লায়ক কফি, কিশমিশ, গুঁড়া দুধ আর কনডেন্স মিল্কের মিশেলে তৈরি ‘রাজা চা’ পান করতে ছুটে আসেন মানুষ।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওধার গ্রামে জন্ম নেওয়া রাজা মিয়ার ছেলেবেলা কেটেছে খুবই দুর্দশার মধ্যে। ফেরিওয়ালা থেকে আজকের কোটিপতি চা ওয়ালা হয়ে ওঠার পেছনের গল্প জানান রাজা। প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, একসময় মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন। ফেরি করে পান, সিগারেট, চকলেট বিক্রি করেছেন। গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে পাবলিক টয়লেটের ছাদেও রাত কাটাতে হয়েছে তাকে। সেখান থেকে একজনের মাধ্যমে আরব আমিরাতের আবুধাবিতে যান রাজা। সেখানেই পেয়ে যান সুযোগ। বিভিন্ন দেশের শেফদের কাছ থেকে রপ্ত করেন চা বানানোর কৌশল।

রাজা মিয়া বলেন, ‘দেশে ফিরে ৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে চায়ের দোকান শুরু করি। প্রথমে ৫ টাকায় চা বিক্রি করি। মাল্টা চা, কালিজিরা চা, তেঁতুল চা আর নরমাল দুধ চা বিক্রি করেছি। পাশাপাশি আবুধাবিতে শেখা রেসিপি দিয়ে কিছু স্পেশাল চা বানাতে শুরু করি। সেসব চা ক্রেতারা সানন্দে গ্রহণ করেন। একসময় কাজুবাদামের চা ও ইন্ডিয়ান মাসালা টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।’

মিরপুর ২, গাজীপুরের মাওনা বাসস্ট্যান্ড, চট্টগ্রামের মিরসরাই, অক্সিজেন মোড়সহ দেশের ১৮ স্থানে তার দোকানের শাখা আছে। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি মাসে প্রতিটি শাখায় দুবার সরেজমিন পরিদর্শন করেন তিনি। সরেজমিনে দেখা যায়, তার প্রতিটি দোকানের সাজসজ্জা একেবারে রাজদরবারের মতো। থরে থরে সাজানো থাকে অ্যারাবিয়ান ডিজাইনের কেটলি। কাজুবাদাম, পুদিনাপাতা, তেঁতুল, মাল্টা, লেবু, মরিচসহ হরেকরকমের মসলা। দোকানের ডেকোরেশনের সঙ্গে মিলিয়ে চায়ে উঠে আসে এক রাজকীয় ভাব।

চা বিক্রি করে এরই মধ্যে দেশজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন রাজা মিয়া। দোকানে তাকে দেখলেই সেলফি তুলতে ছুটে আসেন দর্শনার্থী। চা বিক্রি করে শুধু অর্থনৈতিকভাবে লাভবানই হননি আজাহার উদ্দিন ওরফে রাজা মিয়া, জীবনে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে চা-প্রেমীদের ভালোবাসাও। দুপুরের পর থেকেই জমে ওঠে তার চায়ের আড্ডা। প্রতিদিন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হয় চায়ের স্বাদ নিতে।

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সজীব আহম্মেদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারেন বিখ্যাত রাজা চা সম্পর্কে। দেশে এসেই ছুটে এসেছেন রাজা মামার চা খেতে। মিরপুরে রাজা মামার চায়ের দোকানে চা খেতে এসেছেন দুই বন্ধু আসফিয়া সিদ্দিকা, ইসরাত জাহান। তারা বলেন, ‘সবার মুখে শুনেছি রাজা মামার চা বিখ্যাত, তখনই প্রথম আসা হয়েছিল এখানে। এর পর থেকে সময় পেলেই বন্ধুদের নিয়ে রাজা মামার চা খেতে আসি। অনেক রকম চা রয়েছে এখানে। সব চায়ের টেস্ট অনেক ভালো।’

যেখানে সারা দেশে প্লাস্টিকের কাপে চা বিক্রি হয়, সেখানে রাজা মামার চা মিলছে মাটির কাপে। তাতে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। ৫ টাকার চা বিক্রি করে একসময় মানুষের তিরস্কারের শিকার হলেও ইরানি, জাফরানি, ইন্ডিয়ানসহ দেশ-বিদেশের ১৫২ প্রকারের চা বানিয়ে এশিয়ার সেরা চাওয়ালার খাতায় নাম লিখিয়েছেন রাজা মিয়া। দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।

রাজা মামা চা বেচে যা আয় করেন তা অনেকের জন্য হতে পারে স্বপ্নের। প্রকৃত সংখা না জানালেও বললেন, মাসে আয় হয় লাখ টাকার ওপর। কোনো কোনো মাসে ছাড়িয়ে যায় ২ লাখও।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা