সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বগুড়ায় সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় ৩১ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় জড়িতদের ৯ বছরেও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। বাহিনীটির তিনটি ইউনিট যথাক্রমে ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পৃথকভাবে তদন্ত করেও আলোচিত ওই ঘটনার কোনো সূত্র (ক্লু) বের করতে পারেনি। যে কারণে ইতঃপূর্বে ডিবি ও সিআইডির মতো সর্বশেষ তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইও আদালতে ফাইনাল রিপোর্টে ঘটনাটি সত্য কিন্তু জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি—এমন প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ফলে চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিচার তো দূরের কথা, মামলাটিই এখন অকার্যকর হয়ে গেছে।
তবে ব্যাংক লুটকারীরা এভাবে বছরের পর বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলছেন, ব্যাংক লুটের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করতে না পারলে তারা এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাবে। সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, ‘প্রয়োজনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হলেও ওই লুটেরাদের শনাক্ত এবং তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৮ মার্চ রাতে বগুড়ার আদমদীঘিতে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট লুটের ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে ব্যাংক খোলার পর কর্মকর্তারা ভল্টের দরজা ভাঙা দেখে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন যে, ৩০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনুসন্ধান চালিয়ে ওই ব্যাংকের পাশে একটি ফার্নিচারের দোকানের পেছন থেকে ভল্ট রুম পর্যন্ত সুড়ঙ্গ দেখতে পান। ওই সুড়ঙ্গপথে তল্লাশি চালানোর সময় তার ভেতরে গ্যাস-কাটার এবং পড়ে থাকা ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুর্বৃত্তরা দীর্ঘ সময় ধরে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পর তার ভেতর দিয়ে সিলিন্ডার গ্যাস-কাটার দিয়ে ভল্ট রুমের দরজা এবং তালা কেটে টাকা লুট করেছে।
ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের বগুড়া অঞ্চলের তৎকালীন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে আদমদীঘি থানায় মামলা করেন। আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা না হলেও পুলিশ ফার্নিচারের দোকানের মালিক এবং স্থানীয় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রিসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। একপর্যায়ে ওই মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। পরে একে একে মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার এবং অনেককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তবে তারপরেও ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি ডিবি।
এমন পরিস্থিতিতে ওই ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর ২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করা হয়। তবে তাতে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় তিন বছর তদন্তের পর সিআইডিও জড়িতদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। সংস্থাটি ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে।
ওই সময় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন সিআইডির তৎকালীন পরিদর্শক (বর্তমানে অবসর নিয়েছেন) ছকির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় জড়িতরা যদি কখনও অন্য কোনো ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়, তাহলেই কেবল ক্লু বের করা সম্ভব হবে।’
সিআইডির ফাইনাল রিপোর্ট দাখিলের পর মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সংস্থাও জড়িতদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। ২০২২ সালের ৩ এপ্রিল তারাও আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে। তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বগুড়া পিবিআইয়ের তৎকালীন পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারিনি।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিলের পর ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবারও নারাজি আবেদন দেওয়া হয়। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। গত বছরের ১১ মে দেওয়া এ-সংক্রান্ত আদেশে আদালত ইতঃপূর্বে গ্রেপ্তার করা ২৫ জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক বগুড়ার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পিবিআইয়ের ফাইনাল রিপোর্ট এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রায় ১৫ দিন আগে প্রধান কার্যালয়ের আইন বিভাগকে জানানো হয়েছে। তবে তারপর থেকে করণীয় সম্পর্কে তাদের কিছু জানানো হয়নি।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.