× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আইসিটি থেকে সাইবার আইন, ঘুরেফিরে একই

হিরা তালুকদার

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩ ০০:৩৮ এএম

আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৩ ১১:২৪ এএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

২০০৬ সালের বিতর্কিত আইসিটি অ্যাক্ট বাতিল করে ২০১৮ সালে প্রণয়ন করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এ আইন নিয়েও বিতর্ক দেখা দেয়। অবশেষে সম্প্রতি সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩’। কিন্তু বারবার নাম পরিবর্তন করা হলেও এ তিনবারই আইনের ধারাগুলো রয়ে গেছে প্রায় একই রকম। আইনজ্ঞ থেকে শুরু করে অংশীজন সবাই জানাচ্ছেন নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু সংশোধনী এলেও নতুন আইনও মোটেই পর্যাপ্ত ও পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলছেন, এ আইনেও বিতর্কিত অনেক ধারা বহাল রয়েছে। এতে পুরোনো আইনই প্রয়োগ হবে নতুন করে।

২৬ পৃষ্ঠার নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬২ ধারা থেকে দুটি কমে নতুন আইনে মোট ধারা থাকছে ৬০টি। এ ধারাগুলোতে অপরাধ, সাজাসহ বিভিন্ন বিষয় বিন্যস্ত করা হয়েছে। দণ্ড ও জামিন-সংক্রান্ত বিষয়ে ৩১টি ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে।

এ পরিবর্তনের মধ্যে আটটি অজামিনযোগ্য ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে। ১১টি ধারায় সাজা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয়বার একই অপরাধের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা দ্বিগুণ শাস্তির বিধান নতুন আইনে থাকছে না। বহুল আলোচিত ২৯ নম্বরসহ দুটি ধারায় শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা ২১ নম্বর ধারায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে। ডিএসএর ২১ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনোরকম প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালায় বা তাতে মদদ দেয়, তাহলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং এর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এই একই অপরাধ কেউ দ্বিতীয়বার করলে তার সাজা দ্বিগুণ করার বিধান রয়েছে। আর বারবার একই অপরাধের ক্ষেত্রে রয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ৩ কোটি টাকা জরিমানার বিধান। এ ধারাটিতে প্রস্তাবিত নতুন আইনে পরিবর্তন এনে সাজার মেয়াদ করা হয়েছে সাত বছর। তাছাড়া দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলেও সাজা দ্বিগুণ হবে না। ডিএসএর ৪৩ ধারা নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক থাকলেও সেটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ৪৩ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, কোনো স্থানে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছে ফেলা, পরিবর্তন হওয়ার বা করার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই সেখানে তল্লাশি, সরঞ্জাম জব্দ, দেহ তল্লাশি এবং পরোয়ানা ছাড়াই কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার রয়েছে। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮, ২৯, ৩০ ধারাগুলো বাতিলের বিষয়ে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের দাবি শুরু থেকেই। এ ধারাগুলো প্রস্তাবিত আইনে বহাল রেখে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। ডিএসএর ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করা বা উসকানি দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করে, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে তা অপরাধ হবে। এ অপরাধের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর কারাদণ্ড, বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একই অপরাধ বারবার করলে রয়েছে সাজা ও জরিমানার মেয়াদ দ্বিগুণ হওয়ার বিধান। ডিএসএর ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া একই অপরাধ বারবার করলে বিধান রয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার। প্রস্তাবিত আইনে এ ধারায় পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের সাজা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখানে শাস্তি হবে শুধু জরিমানা। আর জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় রয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর এবং জরিমানা ৫ লাখ টাকা। একাধিকবার একই অপরাধ করলে সাজা বেড়ে ১০ বছর এবং জরিমানা ১০ লাখ টাকা করার বিধান ছিল। এ ধারায় পরিবর্তন এনে সাজার সময়সীমা কমানো হয়েছে। সাত বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। বারবার একই অপরাধ করলে সাজা বাড়ানোর বিষয়ও বাতিল করা হয়েছে। ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের শাস্তি আগে ছিল ১৪ বছর, সেটি কমিয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। বারবার এই অপরাধ করলে সাজা বাড়ানোর বিধান বাতিল করা হয়েছে। ডিএসএর ৩৩ ধারায় রয়েছে, কোনো ব্যক্তি কম্পিউটার বা ডিজিটাল সিস্টেমে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো আর্থিক বা বাণিজ্যিক সংস্থার কোনো তথ্য-উপাত্তের কোনো ধরনের সংযোজন বা বিয়োজন, স্থানান্তর বা স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করলে বা করতে সহায়তা দিলে, তা অপরাধ বলে ধরা হবে। নতুন আইনে এই ৩৩ ধারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধ নামে নতুন ধারা প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অপরাধের শাস্তি অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

এ ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইনে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা খুবই সামান্য। মূলত আগের আইনই নতুন নামে প্রয়োগ করা হবে। নতুন আইনে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে না বলেই মনে করছি।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি কালো আইন। সেই আইনে কিছু ঘষামাজা করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকছে। ডিএসএর ৪৩ ধারা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সেটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তাহলে নতুন আইনে কী লাভ হবে?’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বহু ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনে যুক্ত হয়েছে। কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তাই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, নতুন আইন দিয়েও গণমাধ্যমকে কোণঠাসা করা হবে না তো?’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনের খসড়ায় যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য যথেষ্ট নয়। এই আইনটি চূড়ান্ত করার আগে অংশীজনদের সঙ্গে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে। নইলে আইনটি যেমন ফলপ্রসূ হবে না, তেমনি আমরা সাংবাদিক সমাজও এটা মেনে নেব না।’

এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘অনেক চিন্তা-ভাবনা করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। জনগণের কল্যাণে এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বহু ধারা সংশোধন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত করার আগে আরও কিছু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হলে তা করাও হতে পারে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা