তৌহিদুল ইসলাম তুষার
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ১২:৫৯ পিএম
প্রবা ফটো
পাহাড়ি খাবারে আসল স্বাদ মিলবে হেবাং রেস্তোরাঁয়। এখানে শুধু রান্নার কৌশল ব্যবহার হয়নি, খাবার তৈরির প্রতিটি উপকরণ আনা হয় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে। কলাপাতা থেকে শুরু করে চাল, সবজি, মুরগি, হাঁসসহ রান্নার অন্য সব উপাদান প্রতি সপ্তাহে পাহাড় থেকে আসে। তাই তো হেবাংয়ের খাবারে পাহাড়ের নির্যাস মিশে থাকে।
ঢাকায় খাবারের প্রসিদ্ধ এলাকা হয়ে উঠেছে খিলগাঁও তালতলা, মোহাম্মদপুর ও বনানী। তবে পাহাড়ি খাবারের আসল স্বাদ নিতে যেতে হবে মিরপুর। কাজীপাড়া বাস স্ট্যান্ডের কাছে প্লাটিনাম সুইটসের ঠিক ওপরেই ‘হেবাং’ রেস্তোরাঁ। পাহাড়ি চার নারী উদ্যোক্তা বিপলি, প্রিয়াঙ্কা, সুচিন্তা ও স্বস্তি চাকমার হাত ধরে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে হেবাং। তাদের শুরুটা আরও আগে, ২০১৬ সালে। তখন রেস্তোরাঁ শুরু হয়নি। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বেচাকেনা অনেকটাই জমজমাট। প্রিয়াঙ্কার মাথায় এলো তারাও অনলাইনে পেজ খুলে খাবার বিক্রি করতে পারেন। কারণ ঢাকায় তেমন আদিবাসীদের রেস্টুরেন্ট ছিল না। যে কথা সেই কাজ। পেজটি খোলার পরপরই খাবারের অর্ডার পেলেন। সে সময় ব্যাম্বু চিকেনের বেশ চাহিদা ছিল। ধীরে ধীরে অনলাইনে ‘হেবাং’ জনপ্রিয়তা পায়। মায়ের অসুস্থতার কারণে কয়েক মাস বন্ধ থাকে হেবাং। পরে তারা চিন্তা করেন এবার অনলাইনে নয়, হবে রেস্তোরাঁ। মিরপুরের কাজীপাড়ার ‘মেজাং’ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেলে সেটি কিনে ‘হেবাং’-এর যাত্রা শুরু।
কংক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে এলে মনে হবে ভিন্ন কোনো এলাকায় চলে এসেছি। ইটপাথরের শহরে ছোট্ট একটা পাহাড়ি ঘর। ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট ঘর। দেয়ালেও রয়েছে বাঁশের নানা কারুকাজ। আর বারান্দার দুই পাশে মাটির তৈরি দুটি কলস ঝুলছে, চাকমারা এটাকে হুপ্তি বলে। খড় দিয়ে তৈরি চালার ছাউনির ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে বেতের ঝুড়ি। মেঝেতে পাতা হয়েছে মাদুর। ছোট বড় দেয়ালচিত্রেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আদিবাসীদের জীবনচিত্র। চাকমা ভাষায় এই ঘরটির নাম ইজর। পাহাড়িদের ঘরের বাইরের অংশের আদলে তৈরি হয়েছে এই কর্নারটি; যেখানে বসে তারা সময় কাটায়। এখানেও ঠিক তাই। পাহাড়ি আসল স্বাদের খাবার খেতে খেতে সময় কাটাতে পারেন।
ইন্টেরিয়র ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে টেবিলে চলে এলে বিন্নি চালের বড়া পিঠা। অনেকটা তেলের পিঠার মতো দেখতে হলেও স্বাদ একেবারে ভিন্ন। বেশ মজার। তারপরই এলো বিটরুটের ডালের বড়া। খেতে অনেকটাই পিঁয়াজুর মতো। তবে নাশতা আইটেমে অবাক করেছে রোজালা চা। টক একজাতীয় ফল দিয়ে বানানো হয় এই চা। আপনাকে পুরো রিফ্রেস করবে। এর কিছুক্ষণ পরে টেবিলে এলে বিশাল ছড়ানো ঝুড়িতে তাদের মজাদার সব খাবার। এসব খাবারের স্বাদ আমাদের রেগুলার খাবারের সঙ্গে মেলানো যাবে না।
প্রতিদিনই খাবারে থাকে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। স্পেশাল কোনো খাবার যদি খেতে চান, আগে থেকে ফোন করে বলে দিতে হবে। কারণ তাদের বেশিরভাগ খাবার তৈরি হয় ভাপে। তাই অন্য রেস্তোরাঁ থেকে এখানের খাবার তৈরি হতে একটু বেশি সময় লাগে। রেস্টুরেন্টে ঢুকলে এক কর্নারে চোখে পড়বে হাতে লেখা খাবারের মেন্যু। সেদিন খাবার আয়োজনে ছিল তুলসীমালা ভাত, বিন্নি ভাত, পাহাড়ি ব্যাম্বু চিকেন, ব্যাম্বু ফিশ, ব্যাম্বু বিরিয়ানি, পাহাড়ি হাঁস ভুনা, কাঁকড়া ঝাল ভুনা, কাঁকড়া ফ্রাই, চিকেন হোরবো, ছুরি শুঁটকি ফ্রাই, শামুক গ্রেভি, দেশি চিকেন, পাহাড়ি আলু, রই মাছ হলা, ডিম হেবাং, স্পেশাল ডাল, কলমি ভাজি, চিকেন মরিচ ভর্তা, চিংড়ি মরিচ ভর্তা, তাবা তোন, হোরবোসহ মজার অনেক কিছু।