× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শরীর-মনের সুস্থতায় যোগব্যায়াম

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২২ ১৩:০৬ পিএম

আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২ ১৩:০৭ পিএম

মডেল: বাপ্পা শান্তনু ও শামা মাখিং

মডেল: বাপ্পা শান্তনু ও শামা মাখিং

মানুষের শরীর, মস্তিষ্ক ও আত্মা যখন সুন্দরভাবে কাজ করে তখন তাকে সুস্থ বলা যায়। এ তিনটি বিষয়ের সমন্বয় থাকলে জীবনে কর্মোদ্দীপনা, উৎফুল্লতা ও সফলতা আসে। আর যোগব্যায়াম এই শরীর, মস্তিষ্ক ও আত্মার সমন্বয়ের কাজটিই করে থাকে। যোগব্যায়ামের উপযোগিতা, নিয়ম ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে এভারগ্রিন ইয়োগার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তনুর সঙ্গে কথা বলেছেন সানজিদা সামরিন।

শরীর ও মন ভালো রাখতে যোগব্যায়ামের জুড়ি নেই। নিয়মিত যোগব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। পাশাপাশি এটি হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ, কিডনি, পাকস্থলী ইত্যাদি দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুন্দরভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। যোগব্যায়াম মাংসপেশির কোনোরকম বৃদ্ধি ছাড়াই পুরো শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়?ায়, শ্বাসতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে, কোষ ও কলায় পুষ্টি যোগায়, শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশন ও শরীরের সব অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে। 

এভারগ্রিন ইয়োগার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তনু বলেন- ‘যোগব্যায়াম শরীর ও মনের জন্য ভালো। তবে শরীরিক অবস্থা বুঝেই যোগব্যায়াম করা উচিৎ বলেই মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইয়োগা প্রশিক্ষকরা। যেমন যাদের ব্যাকপেইন রয়েছে তাদের সামনের দিকে ঝুঁকে যেসব আসন রয়েছে সেগুলো অনুশীলন করতে নিষেধ করা হয়। যাদের হৃদরোগ রয়েছে বা উচ্চরক্তচাপ রয়েছে তাদের সেসব আসন অনুশীলন করা থেকে বিরত থাকতে হবে যেগুলোয় মাথা নিচের দিকে রাখতে হয়। নারীদের বেলায় ঋতুস্রাবকালীন পেটে চাপ পড়ে এমন আসন করা ঠিন নয়; তবে অনুলোম বিলোমের মতো প্রাণায়াম করা যাবে। সিজার বা তলপেটের অপারেশন হলে ছয়মাস বা একটি নির্দিষ্ট সময় অব্দি যোগব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।’ 

বয়সভেদে যোগব্যায়াম

ঠিক কোন বয়স থেকে যোগব্যায়াম শুরু করা উচিৎ এ প্রসঙ্গে বাপ্পা শান্তনু বলেন, সাধারণত ৭ বছর বয়স থেকে যেকোনো শিশু যোগব্যায়ামের প্রায় সব ধরনের আসন ও প্রাণায়াম শুরু করতে পারে। এর চেয়েও কম বয়সী শিশুরাও যোগব্যায়াম করতে পারবে; তবে দূর্ঘটনা এড়াতে নির্দিষ্ট কয়েকটি সহজ যোগব্যায়ামের বাইরে তাদের অনুশীলন না করানোই ভালো। তবে সাত বছর বয়স থেকে জীবনের শেষ দিন অব্দি একজন মানুষ যোগব্যায়াম করতে পারে। 

যোগাসনের সঠিক সময়

সকালবেলা খালি পেটে যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। ভরা পেটে ইয়োগা না করাই শ্রেয়। যারা সকালে সময় পান না, তারা চাইলে বিকেলে বা সন্ধ্যায় সময় বের করতে পারেন। তবে সেটা যেন খাবার খাওয়ার চার পাঁচঘণ্টা পর হয়। তবে রাত আটটা, নয়টা, দশটার দিকে যোগব্যায়াম করা ঠিক নয়। তবে রাতে ঘুমানোর আগে মেডিটেশন বা হালকা প্রাণায়াম যেমন- অনুলোম বিলোম ও ভস্ত্রিকা ধীরগতিতে করা যেতে পারে। আর ঘুমানোর আগে যদি যোগব্যায়াম করতেই হয় তাহলে ভ্রামরী প্রাণায়াম করতে পারেন। যোগব্যায়াম অনুশীলনের ন্যুনতম ১৫ মিনিট সময় করা উচিৎ, মধ্যম সময় আধাঘণ্টা এবং পূর্ণাঙ্গ সময় হচ্ছে ৪৫ মিনিট থেকে একঘণ্টা পর্যন্ত। 

কেমন পোশাক

আটসাঁট ও পুরু কোনো পোশাক পরে যোগব্যায়াম করা ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে সুতির ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাকই সবচেয়ে ভালো। এতে করে বাতাস চলাচল ও রক্তসঞ্চালণ ঠিক থাকবে। যোগাসনের সময় যদি শরীর খুব বেশি ঘামে তাহলে তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে। ঘাম শরীরে শুকানো যাবে না।

ইয়োগা ম্যাট কতটা জরুরি 

এখন অনেকেই যোগব্যায়াম করার সময় ইয়োগা ম্যাট ব্যবহার করেন। ইয়োগা ম্যাটের উপযোগিতা সম্পর্কে শান্তনু জানান, যোগব্যায়াম এমন কিছুর ওপর অনুশীলন করা উচিৎ যা তাপ ও বিদ্যুৎ কুপরিবাহী। খালি মাটিতে বা ঘাসের ওপর যোগব্যায়ম না করাই ভালো। শরীরে যখন প্রচণ্ড তাপ তৈরি হয় তখন আশপাশে যত খোলামেলা থাকবে তখন  তাপ যদি শরীর থেকে খুব দ্রুত বের হয়ে যায় তাহলে তা ক্ষতিকর। আবার প্রাণায়ামের সময় শরীরে বায়োইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হয়, এসময় মাটি স্পর্শ করা ঠিক না। এজন্য এমন কিছুর ওপর যোগব্যায়াম করা উচিৎ যা তাপ ও বিদ্যুৎ কুপরিবাহী।

যারা যোগব্যায়াম অনুশীলন শুরু করেছেন বা শুরু করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য সহজ কয়েকটি যোগাসনের পরামর্শ দিয়েছেন বাপ্পা শান্তনু।

অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম

ধ্যান মুদ্রায় বসুন। মেরুদন্ড সোজা রাখুন। এবার ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করুন। দুই হাতের কব্জি হাঁটুর ওপর রাখুন। ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমাকে মুড়ে নিন। বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ডান নাকের ছিদ্র বন্ধ করুন এবং বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের ওপর লক্ষ্য রাখুন। ডান নাকের ওপর থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধাঙ্গুল সরিয়ে নিন এবং ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে বাম নাক বন্ধ করুন। এর পর আস্তে আস্তে ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছাড?ুন। ঠিক এই পদ্ধতিতেই ডান নাকের ছিদ্র দিয়ে গভীর শ্বাস নিন। এ সময় অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে বাম নাকের ছিদ্র বন্ধ করে রাখতে হবে। তার পর বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়বেন।

গোমুখাসন

প্রথমে মেরুদণ্ড সোজা করে পা দু’টো সামনের দিকে ছড়িয়ে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙ্গে পায়ের গোড়ালি, ডান ঊরুর কাছে মেঝেতে রাখুন। একইভাবে এবার ডান পা দু’টোও হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙ্গে বাম পায়ের উপর দিয়ে নিয়ে ঊরুর কাছে মেঝেতে রাখুন। এখন ডান হাত মাথার উপর তুলে কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে হাতের তালু পিঠে মেরুদণ্ডের ঠিক উপরে উপুর করে রাখুন এবং বাঁ হাত কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে পেছন দিকে নিয়ে ডান হাতের আঙুল ধরুন। ২০ সেকেন্ড থেকে ৩০ সেকেন্ড  শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে হাত এবং পা ঢিলে করে বিশ্রাম নিন। এবার হাত-পা বদল করে আসনটি নিয়ম মত আবার করুন অর্থাৎ এবার ডান পা নীচে, বাম পা উপরে রেখে বাম হাত উপরে এবং ডান হাত নীচের দিকে থাকবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে আসনটি ২/৩ বার করুন। এবার ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন। 

ভূজঙ্গাসন

প্রথমে উপুড় হয়ে দুপা জোড় করে সোজা রেখে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। মাথাটা বামে অথবা ডানে কাত করে রাখুন। হাত দুটো শরীরের দুপাশে ও হাতের পাতা মাটিতে লেগে থাকবে। এবার হাত দুটো টেনে নিয়ে এসে দু-বাহু বরাবর উপুড় করে রাখুন। হাতের ওপর ভর করে মাথা ওপরে তুলুন। বুক মাটি থেকে ওপরে উঠবে। কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পা জোড় অবস্থায় সোজা থাকবে। নাভি মেঝেতে লেগে থাকবে। দম থাকবে স্বাভাবিক। এভাবে পূর্ণ ভঙ্গিমায় এসে ১০/১৫ সেকেন্ড অবস্থান করুন। ৩ থেকে ৫ বার করতে পারেন। প্রয়োজনে শবাসনে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে করতে পারেন। এবার হাতের ওপর ভর করে বুক-পেট- মাথা পেছন দিকে এলিয়ে দিয়ে পা দুটো হাঁটু ভেঙে মাথার তালুর সাথে লাগিয়ে দিন। নাভি ওপরে থাকবে। এ অবস্থানে ১০/১৫ সেকেন্ড থাকতে পারেন। এভাবে ৩ থেকে ৫ বার করতে পারেন।

উষ্ট্রাসন

হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা মুড়ে হাঁটুর উপর ভর রেখে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ান। পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত পায়ের নিম্নাংশ মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। এবার দু’হাত দিয়ে দু’পায়ের গোড়ালি অথবা গোড়ালির ঠিক উপরে ধরুন। এখন বুক ও পেট যতোটা সম্ভব উপরদিকে এবং মাথা পেছনদিকে বাঁকিয়ে ধনুকের মতো করতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এ অবস্থায় ২০ সেকেন্ড  থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর হাত ও শরীর আলগা করে আস্তে আস্তে পূর্বাবস্থায় হাঁটুর উপর দাঁড়ান। এভাবে আসনটি ২/৩ বার করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

রাজ কপোতাসন

ডান পা শরীরের পেছন দিকে এমনভাবে টান টান করে বসুন, যেন ডান ঊরুর ওপরের অংশ ভূমি (ম্যাট) স্পর্শ করে থাকে। বাম হাঁটু এমনভাবে ভাঁজ করুন, যেন হাঁটু বুকের মাঝ বরাবর থাকে। বাঁ পায়ের ঊরুর বাইরের অংশ ভূমিতে লেগে থাকবে। এবার ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা টেনে ধরুন।শ্বাস নিতে নিতে মেরুদণ্ড পেছনের দিকে বাঁকান এবং বাঁ হাতকে বা কাঁধের ওপর দিয়ে নিয়ে ডান পায়ের পাতা ধরুন। এ ধাপ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য অন্য কারও সহায়তা নিতে পারেন বা ভাঁজ করা পা দেয়ালে ঠেস দিতে পারেন। এরপর ডান হাত ডান কাঁধের ওপর দিয়ে নিয়ে ডান পায়ের পাতা ধরুন। মাথা সোজা রাখতে পারেন বা ধীরে ধীরে পেছনে হেলিয়ে ডান পায়ের পাতার তলে লাগিয়ে দিতে পারেন। আসনে থাকা অবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। আসন ছাড়ার সময় আসনটিতে যে ধারাবাহিকতায় এসেছিলেন, ঠিক তার বিপরীতে ফিরে যান। ডান পায়ের পর বাম পায়েও একইভাবে আসনটি করুন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা