প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩৬ এএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:৪০ এএম
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ছবি : সংগৃহীত
তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে দশকের পর দশক যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাবা ফয়জুর রহমানকে হারানোর পর জাফর ইকবাল নিজেকে যুক্ত করেছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল সংগ্রামেও। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গণিতভীতি দূর করার পাশাপাশি বাঙালির শেকড়ের গল্পও তিনি গ্রথিত করেছেন তাদের মননে।
৭০ বছর পেরিয়ে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল আজ ৭১ বছরে পদার্পণ করলেন। ১৯৫২ সালের আজকের দিনে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ, মা আয়েশা আখতার খাতুন।
১৯৭১ সালের ৫ মে পাক হানাদার বাহিনী ফয়জুর রহমানকে হত্যা করে। জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই, সাহিত্যিক-কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব ছোট ভাই।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের আরেকটি নাম ছিল বাবুল। তার স্ত্রী ড. ইয়াসমীন হক। ছেলে নাবিল ইকবাল ও মেয়ে ইয়াশিম ইকবাল।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৮ বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হন।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে জাফর ইকবাল অবসরে চলে যান।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রথম সায়েন্স ফিকশন গল্প ‘কপোট্রনিক ভালোবাসা’ প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র। ওই গল্পের ধারাবাহিকতায় তিনি লেখেন সিরিজ ‘কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ’। সেই গল্পগুলোও ধারাবাহিকভাবে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছাপা হয়। সিরিজটি পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের কাছে খুব প্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ‘আমি তপু’, ‘টুকুনজিল’, ‘দস্যি ক’জন’, ‘রাশা’, ‘মেকু কাহিনী’, ‘বৃষ্টির ঠিকানা’ ইত্যাদি জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাসের লেখক তিনি। তার লেখা অনেক কিশোর উপন্যাস বাংলা কিশোর-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
এ ছাড়া লিখেছেন অসংখ্য বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি। ছোটদের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস সহজ ভাষায় তুলে ধরতে লিখেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ নামে ২২ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা।
একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকারদের নিয়ে বরাবরই উচ্চকণ্ঠ অধ্যাপক জাফর ইকবাল। মৌলবাদী সংগঠনগুলো তাকে নাস্তিক-মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে একাধিকবার হত্যার হুমকিও দিয়েছে।
২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করে এক তরুণ। হামলাকারীর নাম ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফয়জুল জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছেন।
সুস্থ হয়ে উঠে মুহম্মদ জাফর ইকবাল সেই তরুণকে ক্ষমা করে দেন।
২০২১ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যখন জেরবার, তখন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার আহ্বানেই শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে যান।