কবিতা উৎসবে আসাদ চৌধুরী
ঢাবি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:০৩ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ৩৫তম আসরের উদ্বোধন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। প্রবা ফটো
মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর কবিতার ঝুলি নিয়ে দেশ-বিদেশের কবিদের পদচারণায় আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় কবিতা উৎসব। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ৩৫তম আসরের উদ্বোধন করেন কবি আসাদ চৌধুরী।
‘বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’ এই প্রতিপাদ্যে ভাষার মাসের প্রথম দিন শুরু হয় দুই দিনব্যাপী এ উৎসব। সারাদেশ থেকে কবিরা উৎসবে এসেছেন। এ ছাড়া, অংশ নিয়েছেন আরও ছয় দেশের কবি। ফলে দেশি-বিদেশি কবিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে কবিতা উৎসব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘একটি দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ওই দেশকে এগিয়ে নেয়। তাই কবি সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন করতে হবে। কাগজের দাম কমানো উচিৎ। কাগজের দাম না কমালে আমাদের বই বের হবে না। বই না বের হলে আমরা পাঠকের সামনে যেতে পারব না। আমি বিশ্বাস করি সরকার এদিকে নজর দেবে। দেশটা মূর্খ হয়ে যাক এমনটা সরকার নিশ্চয়ই চাইবে না।’
অনুষ্ঠানে কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মানুষের মুক্তির আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি কবি-লেখকদের ভূমিকা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মানব মুক্তির সংগ্রামে কবিদের প্রদীপ্ত উচ্চারণ সমাজ ও সভ্যতা বিকাশে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। একইভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কিংবা শামসুর রহমানের কাব্যপঙক্তি আমাদের প্রবলভাবে উদ্দীপিত ও আশান্বিত করেছে। কবির শক্তিমত্তার প্রকাশ প্রকৃতি, প্রাণী ও মানবের মহিমা কীর্তনে।’
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা—বাংলা ভাষাসহ আরও বেশ কয়েকটি ভাষার কবিদের লেখা ও উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মহামারি, যুদ্ধ, লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দুর্দশা কবলিত অশান্ত পৃথিবীর বার্তা শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে আমাদের কবিতা মোমের শিখা হয়ে জ্বলবে এই উৎসবে।’
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত গাওয়া, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও উৎসব সংগীত গেয়ে উদ্বোধন করা হয় এই উৎসব। উদ্বোধনের পর জাতীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কবিতা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এবারের কবিতা উৎসবটি উৎসর্গ করা হয় প্রয়াত কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী ও কবি কাজী রোজীকে।
উৎসবে অংশ বিদেশি কবিদের মধ্যে দিল্লি থেকে কবি অরুণ কমল, মুম্বাই থেকে কবি হেমন্ত দিভতে, কোলকাতা থেকে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, কবি বিথী চট্টোপাধ্যায়, কবি কাজল চক্রবর্তী, কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য, আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র মিত্র, আসাম থেকে কবি অনুভব তুলসি, ত্রিপুরা থেকে কবি রাতুল দেব বর্মণ, নেপাল থেকে কবি ইন্দু থারু, অস্ট্রিয়া থেকে কবি ওয়ালি রি, ইরান থেকে কবি মাজিদ পুইয়ান অংশ নেন।
উৎসবে আসা কবিতা প্রেমীরা বলেন, ‘নতুনদের সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই আমরা সামনের সারিতে এগিয়ে চলতে পারব। এখানে এসে সব কবিদের সঙ্গে এক হতে পারি, এক সুরে গান গাইতে পারি এটি একটি বড় পাওয়া। এখানে যে কবিরা এসেছেন তারা কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আসেনি। এখানে তারা এসেছে সত্যের কথা বলতে, শান্তির কথা বলতে। বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে কবিতাই একটি বড় অস্ত্র। আমাদের সেই অস্ত্রকে শাণিত করা উচিত।’
দুই দিনব্যাপী উৎসবে কবিতাপাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার, আবৃত্তি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে এবারে স্লোগানকে ফুটিয়ে তোলা হবে। উৎসব চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। পুরো উৎসবে প্রায় ৩০০ জন কবি তাদের লেখা কবিতা পাঠ করে শোনাবেন।