× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিশুতোষ বই কম, বৈচিত্র্যও সীমিত

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:১২ পিএম

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:১৬ পিএম

অমর একুশে বইমেলায় মেলায় আসা এক শিশু। ফাইল ফটো

অমর একুশে বইমেলায় মেলায় আসা এক শিশু। ফাইল ফটো

প্রতিদিনই বইমেলায় আসছে নতুন নতুন বই। এসবের মধ্যে রয়েছে শিশুতোষ বইও। তবে সংখ্যার বিচারে শিশুতোষ বই যেমন কম তেমনি এতে বৈচিত্র্যও সীমিত। অসংখ্য বানান ভুল, মানহীন ছড়া, নিম্নমানের অলংকরণ আর অসংলগ্ন প্রচ্ছদে ভরা অনেক বই শিশুদের উপযোগী কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মেলায় আসা শিশুতোষ বইয়ের মধ্যে অধিকাংশই ভূতের ছড়া ও গল্প এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এর বাইরে অন্য বিষয়ে বই কম। যা আছে, তাতেও নতুনত্ব এবং মৌলিকত্ব কম থাকায় হারিয়ে ফেলছে আকর্ষণ। 

গত কয়েক বছর থেকেই শিশুদের নির্বিঘ্নে বই কেনার জন্য মেলায় আলাদা শিশু কর্নার করা হয়েছে। সেখানে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেক প্রকাশনী। শিশুতোষ প্রকাশনাগুলোর বাইরে মূলধারার প্রকাশনাগুলোও শিশুদের বই বাজারে এনেছে। শিশুদের বইমুখী করতে গত কয়েক বছর ধরে শুক্র ও শনিবার বইমেলায় আয়োজন করা হয় শিশু প্রহর। এ সময় মেলায় এসে সিসিমপুরের চরিত্র হালুম, টুকটুকি, শিখু, ইকরিদের সঙ্গে আনন্দে মাতে শিশুরা। তাদের জন্য এত আয়োজন থাকলেও শিশুদের বইয়ের মান বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নজরে পড়েনি।

বইমেলায় গত কয়েকদিন একাধিক অভিভাবক, পাঠক, লেখক, প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুতোষ প্রকাশনাগুলোর বাইরে মূলধারার প্রকাশনাগুলোও শিশুদের বই বাজারে এনেছে। তবে সব প্রকাশনা মিলে এখন পর্যন্ত বাজারে আসা বইয়ের সংখ্যা বেশ কম। 

একাধিক প্রকাশক ও অভিভাবক জানান, লেখকের মধ্যে, সেলিনা হোসেন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, ইমদাদুল হক মিলন, আমীরুল ইসলাম, আনিসুল হক, কাইজার চৌধুরী, ফরিদুর রেজা সাগর, ঝর্না রহমান, ধ্রুব এষ প্রমুখ লেখকের শিশুতোষ বই মেলায় চলছে। অপেক্ষাকৃত তরুণ লেখকদের মধ্যে আহমাদ শাকিল, মামুন সারোয়ার, আসাদ যোবায়েরের বইও বিক্রি হচ্ছে। 

গত বুধবার লক্ষ্মীপুর থেকে দুই ছোট্ট মেয়ে সুবানা ও সারজনিকে নিয়ে মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ী সোহেল আহমদ। বলেন, বাচ্চাদের বইয়ের সঙ্গে আগ্রহী করে তুলতে এবং তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মেলায় নিয়ে এসেছি। বেশ কিছু বই কিনে দিয়েছি।

শিশুতোষ বই নিয়ে গত কয়েকদিন কথা হয় বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। তাদের অধিকাংশেরই অভিযোগ বইয়ের মান ও বৈচিত্র্য নিয়ে। তাদের মধ্যে একজন স্কুল শিক্ষিকা তানজিলা রহমান। পাঁচ বছরের মেয়ে রুমানাকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন তিনি। শিশুচত্বরে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষক মানুষ তাই বই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস। আজ ৫টি স্টলের বই দেখে আমার মেয়েকে পড়তে দেওয়ার উপযোগী এমন বই পেয়েছি মাত্র ৬টি। তিনি বলেন, অধিকাংশ বইয়ের ছাপা ও লেখার মান খারাপ। ছবির সঙ্গে লেখার মিল নেই। আবার বইয়েও কোনো বৈচিত্র্য নেই। বইয়ে যদি বৈচিত্র্য না থাকে, তবে তা শিশুদের মাঝে কতটুকু সৃজনশীলতা আনতে পারবে?

তাপসি রহমান নামের আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, আমার ভাগনে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ে। তার জন্য ইংরেজি ভাষায় লেখা মানসম্মত বই পেলাম না।

রাহুল রহমান বলেন, শিশুদের বইগুলো সব সময়ই খুব কমন। ছড়া, গল্প, সায়েন্স ফিকশন, কার্টুন। শিশুদের মেধার চতুরমুখী বিকাশে আরও অনেক বই হতে পারত। এদিকে লেখক-প্রকাশকদের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

প্রকাশকরা যা বললেন

শিশুবিষয়ক বইয়ের প্রকাশক ময়ূরপঙ্খির ব্যবস্থাপক চন্দনা বলেন, ছোটদের বই করা খুবই কষ্টকর। শিশুদের বই লেখার জন্য ভালো মানের লেখক নেই। আমাদের প্রকাশনীতে অনেকের পাণ্ডুলিপি জমা হয়। কিন্তু এসব পড়ে নিজেরই মন বসে না। অনেকে বড় লেখকদের বই অনুকরণ করেন তবে তাদের কাছাকাছি যাওয়ার মতো লেখক খুবই কম।

তবে শিশু-কিশোর বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বাবুই’-এর কর্ণধার কাদের বাবু বলেন, শিশুদের ভালো বই বের হচ্ছে না এটা ঠিক নয়। ভালো অনেক বই বের হচ্ছে। আর শিশুদের বইয়ের জন্য তারকা লেখকদের প্রয়োজন নেই। কনটেন্ট ভালো হলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য সেই বই কিনে নেয়। 

প্রবীণ প্রকাশক ও সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমদ বলেন, শিশুদের অনেক বই প্রতিবার মেলায় আসে। এসব বইয়ের বিক্রিও ভালো। এই বিক্রি ভালো বলেই অনেক প্রকাশক এটাকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়েছেন। এর ফলেই মানসম্পন্ন বই বের হচ্ছে কম। এটা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়।

শিশুদের বইয়ের বিক্রি ভালো বলে জানালেন শিশুবিষয়ক বইয়ের আরেক প্রকাশনী ইকরি-মিকরির স্টল ব্যবস্থাপক মো. বিপ্লব। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকালেই শিশু চত্বরে তাদের সন্তানদের বই কিনে দিতে অভিভাবকরা ভিড় করেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। তবে শুক্র ও শনিবার শিশুপ্রহর থাকায় বিক্রি বেশি হয়।

জনতা প্রকাশের স্টল ব্যবস্থাপক সাজনা আফরিন বলেন, মেলার শুরুর সময় তাই বিক্রি কিছুটা কম এখনও। তবে শুক্র ও শনিবার খুবই ভালো বিক্রি হয়। শিশুচত্বরে সিসিমপুরের চরিত্রগুলোর সঙ্গে খেলাধুলা করে শিশুদের বই কিনতে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা।

বৃহস্পতিবারের মেলা

গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে মেলা ছিল জমজমাট। অফিস-আদালত শেষ করে বিকাল থেকেই বইমেলায় বাড়তে থাকে পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়। বিকালে মেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঐতিহ্য প্রকাশনের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, কর্মদিবস থাকলেও কেনাবেচা ছিল ভালো। এখন যারা আসছেন তাদের প্রায় সবাই কিনে নিচ্ছেন বই।

আজ ছুটির দিন, জমবে মেলা

এবারের বইমেলার তৃতীয় ছুটির দিন আজ। সাধারণত পুরো সপ্তাহই ছুটির দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন বিক্রেতারা। আজ কেনাবেচাও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা প্রকাশকদের।

ছুটির দিন থাকায় মেলার দ্বার খুলবে সকাল ১১টায়। চলবে টানা রাত ৯টা পর্যন্ত। এ ছাড়াও সকালে শিশু প্রহর থাকায় শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি মেলাকে আরও প্রাণোচ্ছল করবে বলে ধারণা সবার।

জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ডা. রাজিয়া রহমান জলি বলেন, এখন পর্যন্ত মোটামুটি ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। তবে শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন থাকায় সব বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে মেলায়। বিক্রিও ভালো হয়। আর সব বই মোটামুটি চলে আসায় বিক্রি ভালো হবে বলে প্রত্যাশা তার।

 বৃহস্পতিবারের নতুন বই

গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৮০টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে মুহম্মদ নূরুল হুদার উক্তির সংকলন ‘শেখ হাসিনার স্বপ্নকথা’, মিজান পাবলিশার্স এনেছে ড. মুহম্মদ মাহবুব আলীর নিবন্ধ ‘অজেয় নেতৃত্ব : শেখ হাসিনা’, আগামী প্রকাশনী এনেছে হেলাল উদ্দিন আহমেদের গবেষণাগ্রন্থ ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির দুষ্টচক্র : কারণ, মূল্য ও প্রতিকার’ ও শিপ্রা রহমানের কবিতা ‘অসংখ্য আমি’, তাম্রলিপি এনেছে দেবদাস ভট্টাচার্যর উপন্যাস ‘অনলশিখায় কি করিনু খেলা’, শ্রাবণ প্রকাশনী এনেছে শাশ্বতী বিপ্লবের জীবনী ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’, অনন্যা এনেছে শ্যামসুন্দর সিকদারের আত্মজীবনী ‘যে কথা হয়নি বলা আগে’ এবং জাতীয় সাহিত্যপ্রকাশ এনেছে ড. আনোয়ার আহমেদের রাজনীতিবিষয়ক গ্রন্থ ‘তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও সমসাময়িক রাজনীতি’। 

মেলা মঞ্চের আয়োজন

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আহমদ শরীফ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজীব সরকার। অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোরশেদ শফিউল হাসান এবং আফজালুল বাসার।

## লেখক বলছি মঞ্চ

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক দীপু মাহমুদ, গবেষক আলী আকবর টাবী, কবি সুমন সরদার এবং কথাসাহিত্যিক শাহরিয়া দিনা। 

এ ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আশরাফ আহমদ, নাসরীন জাহান, কামরুল হাসান এবং আলফ্রেড খোকন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম, শাকিলা মতিন মৃদুলা এবং অতনু করঞ্জাই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুঁথি পাঠ করেন মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও ছিল এ. কে. আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দন’ এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুর সুধা সংগীতায়ন’-এর পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী আকরামুল ইসলাম, আবুবকর সিদ্দিক, দেলোয়ার হোসেন বয়াতি, আমজাদ দেওয়ান, লাভলী দেব এবং আবদুল আউয়াল।

শুক্রবারের আয়োজন

আজ শুক্রবার, মেলার নবম দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। এ ছাড়াও অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : এস. ওয়াজেদ আলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা