× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বইমেলা

মানুষের জন্য মানুষের পাশে

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৩৮ এএম

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৪ এএম

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার শিশুপ্রহরে বইমেলায় শিশুতোষ বইয়ের স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রবা ফটো

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার শিশুপ্রহরে বইমেলায় শিশুতোষ বইয়ের স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রবা ফটো

বইমেলা কেবলই বই বেচাকেনার জায়গা নয়। মানবতার জয়গানও গায় এই মেলা। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা দিয়ে প্রবেশ করতে গেলেই চোখে পড়ে হুইলচেয়ার নিয়ে বসে আছেন ৮-১০ জন তরুণ-তরুণী। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই ছাত্রছাত্রীরা। শারীরিক প্রতিবন্ধী কেউ এলে তাদের সানন্দে হুইলচেয়ারে বসিয়ে মেলা ঘুরিয়ে দেখান তারা। ২০১৬ সাল থেকেই ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে আসছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। এবার বইমেলার ১৭ দিনে ৫০ জনের বেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ তাদের এ সেবা নিয়েছেন।

এবার এই সেবার টিম লিডার আল আমিন। ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স পাস করা আল আমিন ২০১৮ সাল থেকে এই স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে জড়িত। তিনি বলেন, ‘একজন শারীরিক অক্ষম মানুষ চাইলেই মেলা ঘুরে পছন্দের বই কিনতে পারেন না। তাদের ঘুরে দেখাতে পারলে আমাদের নিজেদের খুব ভালো লাগে। ভালো লাগার জায়গা থেকে আমরা স্বতঃফূর্তভাবে এই কাজ করি।’

কয়েকদিন আগে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় হুইলচেয়ারে সেবা নেওয়া ফারহান চৌধুরীর সঙ্গে। বছর চারেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়ার পর স্ট্রেচারে ভর দিয়ে হাঁটতে হয় তাকে। তিনি বলেন, ‘সুস্থ থাকতে ঘুরে ঘুরে মেলা দেখতাম, পছন্দের বই কিনতাম। কিন্তু পা ভাঙার পর আর সম্ভব হচ্ছে না। হুইলচেয়ার-সেবা আছে শুনে এসেছি। তারা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে ‍পুরো মেলা ঘুরে দেখাচ্ছেনÑ এটা খুবই ভালো লাগছে।’

মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রতি বছরই সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নানা ধরনের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এমনই একটি সেবা ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’। বইমেলার রমনা কালীমন্দির গেট দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের বাঁদিকে পড়বে পুলিশের এই রক্তদান কেন্দ্রটি। মেলার শেষদিন পর্যন্ত চলবে ডিএমপির এ কার্যক্রম। বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে এই সংখ্যা শতাধিকও হয়। এসআই সিদ্দিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয় জনের পুলিশ সদস্য প্রতিদিন স্বেচ্ছায় রক্তদান কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। রক্ত দেওয়ার পর দাতাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের একটি মেম্বারশিপ কার্ড দেওয়া হয়। যাতে পরে রক্তের প্রয়োজন হলে যেকোনো সময় ওই সদস্য পুলিশ ব্লাড ব্যাংক থেকে ফ্রি রক্ত পেতে পারেন।

কোলের শিশুকে নিয়ে বইমেলায় আসার পর ব্রেস্ট ফিডিং করানো নিয়ে ভাবনায় পড়ে যান মায়েরা। বিষয়টি মাথায় রেখে বইমেলা প্রাঙ্গণে রমনা কালীমন্দিরের পাশে ‘ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার’ বা মাতৃদুগ্ধ পান কেন্দ্র স্থাপন করেছে ডিএমপি। প্রতিদিন শতাধিক মা তার শিশুকে নিয়ে এই ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টারে আসেন। যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় আগত নাজনীন হ্যাপি বললেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা মায়েরা এখন কোনো চিন্তা ছাড়াই শিশুকে নিয়ে মেলায় আসতে পারি।’

মেলায় রয়েছে বিকাশ বই সংগ্রহের স্টল। এসব স্টলে স্বেচ্ছায় বই দান করছেন অনেকেই। এসব বই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল, পাঠাগারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারে বিতরণ করা হয়। বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী বলেন, ২০২০ থেকে বিকাশ বই সংগ্রহের এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

গতকালের মেলা

সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় গতকাল শনিবারও জমজমাট ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। সকালে ছিল শিশুপ্রহর। বেচাকেনাও ভালো হয়েছে গতকাল। ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী আদিত্য অন্তর বলেন, ‘মেলা শেষদিকে চলে আসায় এখন যারা আসছেন, তাদের সবাই কোনো-না কোনো বই কিনছেন। এই ধারা মেলার শেষদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে আশা করা যায়।

নতুন বই

গতকাল নতুন বই এসেছে ১৭১টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছেÑ চারুলিপি প্রকাশন থেকে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার স্মৃতিকথা ‘রাসেল আমাদের ভালোবাসা’; পাঠক সমাবেশ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘বিচার ও প্রশাসন : ভেতর থেকে দেখা’; বাংলা একাডেমি থেকে নাসরীন জাহানের উপন্যাস ‘নির্বাচিত উপন্যাস’; অন্যপ্রকাশ থেকে ইমদাদুল হক মিলনের স্মৃতিকথা ‘কেমন ছিলেন ‌হুমায়ূন আহমেদ’, শাহনাজ মুন্নীর উপন্যাস ‘দুঃখ কারাগার’ এবং হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ‘স্যাংগ্রিলায় সাতদিন’; সময় প্রকাশন থেকে মোস্তফা কামালের উপন্যাস ‘কারবালা উপাখ্যান’ ও নূহ-উল-আলম লেনিনের প্রবন্ধ ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ : ইতিহাসের রূপরেখা’; ঐতিহ্য থেকে মঈনুল আহসান সাবেরের গল্প ‘প্রিয় ১৫ গল্প’, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আবুল হাসনাত সম্পাদিত গ্রন্থ ‘নব্বুই-এর অভ্যুত্থান’ ও খান মাহবুব সম্পাদিত জিতেন্দ্র কিশোর আচার্য্য চৌধুরীর ‘শিকার স্মৃতি’ শতবর্ষ সংস্করণ; মত ও পথ প্রকাশনী থেকে র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর স্মৃতিকথা ‘সময়ের সাহসী সন্তান’; পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে ড. রতন সিদ্দিকীর শিশুতোষগ্রন্থ ‘জাদুকন্যা’ ও আবদুল গাফফার রনির বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ‘প্যারাডক্স : দর্শন, বিজ্ঞান ও গণিতের প্রহেলিকা’; বেহুলা বাংলা থেকে মতিন রায়হানের কাব্যগ্রন্থ ‘মুহূর্তসংহিতা’; এবং সংবেদ থেকে লোপা মমতাজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ লোপা ও লিলিথ’।  

মেলা মঞ্চের আয়োজন

গতকাল শনিবার মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : শহীদ সাবের’ এবং ‘স্মরণ : পান্না কায়সার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ ও মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশ নেন গিয়াস উদ্দিন, রতন সিদ্দিকী ও শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার।

এছাড়া মেলার মূল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শান্তা মারিয়া, কথাসাহিত্যিক এশরার লতিফ, শিশুসাহিত্যিক আহসান মালেক এবং প্রাবন্ধিক সুমন শামস।

বই সংলাপ ও রিকশাচিত্র মঞ্চের উদ্বোধন

অমর একুশে বইমেলায় গতকাল প্রথমবারের মতো সংযোজন ঘটেছে ‘বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চে’র। বিকাল ৫টায় মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মঞ্চের উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান, আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি, বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর এবং বাংলা একাডেমির পরিচালকরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খালিদ মারুফ।

এই মঞ্চে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রিকশাচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি মেলায় প্রকাশিত মানসম্পন্ন নির্বাচিত বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান চলবে। প্রকাশকরা বইমেলার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় অংশ নেবেন।

আজকের কর্মসূচি

আজ রবিবার, বইমেলার ১৮তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন স্বরোচিষ সরকার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা