× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাড়তি সময়, বাড়তি উচ্ছ্বাস

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪ ১১:৩২ এএম

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫৪ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

ফেব্রুয়ারির শেষদিনই শেষ হওয়ার কথা অমর একুশে বইমেলার। প্রকাশকদের দাবির প্রেক্ষিতে এবার দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার (১ মার্চ) ছিল বাড়তি সময়ের প্রথম দিন। অধিবর্ষ হওয়ায় এমনিতেই ছিল আরও এক দিন। তিন দিন বাড়তি পাওয়ায় লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের জন্য ছিল বাড়তি উচ্ছ্বাসও। বাড়তি সময়ে-বাড়তি উচ্ছ্বাসে-বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ছুটির দিন। 

তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার শোকের ছায়া ছিল বইমেলাজুড়েও। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য অনেককে দেখা গেছে বিষণ্ন। বিষয়টি আলোচনাও ছিল সবার মুখে মুখে। 

সকাল ১১টায় শুরু হয়ে মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকালে মেলা প্রাঙ্গণ অনেকটা ফাঁকা থাকলে বিকালে বাড়তে শুরু করে ভিড়। বেইলি রোডের শোককে শক্তিতে পরিণত করে অনেকেই কেনেন পছন্দের বই। মেলায় যারা এসেছেন প্রায় সবার হাতেই ছিল বই। 

মেলায় নিয়মিত আসেন তরুণ পাঠক নিশাত বিজয়। তিনি বলেন, ‘দুদিন সময় বাড়ায় আরও কিছু বই ঘেঁটে দেখার সুযোগ হলো। মেলাতে আসলেই ২-১টা বই কেনা হয়। পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হয়। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই আসেন।’ সাবরিনা চৌধুরী নামে আরেকজন বলেন, ‘দেখতে দেখতে বইমেলার এক মাস পার হয়ে গেল। মেলার সময় বাড়ায়, আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না।’

 মেলায় এসেছে কবি সাদিয়া নাজিবের কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্য দেবালয়ের শঙ্খ’। বইটি প্রকাশ করেছে সৌম্য প্রকাশনী। তিনি বলেন, ‘নানা কারণে এবার বই বের করার ইচ্ছে ছিল না। শেষমেশ পাঠকদের অনুরোধে হলো। সময় বাড়ায় ভালো হলো, বইটিও পাঠকরা মেলায় পেলেন। কবিতায় প্রেম-বিরহের পাশাপাশি নারী জাগরণ, সচেতনতা, বঙ্গবন্ধু ও দেশের জাগরণের কথা বলেছি। নারীরা অচলায়তন ভেঙে কীভাবে বেরিয়ে আসবে, সেই বিষয়ে অনুপ্রেরণার চেষ্টা করেছি।’

বাড়তি সময়ে বইমেলায় বিক্রি প্রসঙ্গে দাঁড়িকমা প্রকাশনীর প্রকাশক আলমগীর রুমি বলেন, ‘তরুণদের প্রকাশনাগুলোতে ছুটির দিনেই বই বিক্রি বেশি হয়। ছুটির দুই দিনে মেলা বাড়ায় ভালোই বই বেচাকেনা হচ্ছে।’

কথা প্রকাশের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ইউনুছ আলী বলেন, ‘বেইলি রোডের দুর্ঘটনার কারণে সকালে উপস্থিতি কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। বিকালে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই সিরিয়াস পাঠক। তারা তালিকা ধরে ধরেই বই কিনেছে।’

প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘সব মিলিয়ে এবার মেলা ভালো হয়েছে। শুরু থেকেই জমজমাট ছিল। বাড়িত দুই দিনের প্রথম দিনেও পাঠকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।’

আগামীবার মেলা কোথায় হবে- তা নিয়ে শঙ্কা 

অন্যদিকে এবার মেলায় বিদায়ের পদধ্বনি সঙ্গে সঙ্গে আগামীবার মেলা কোথায় হবে- তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির অংশ হিসেবে মার্চ মাস থেকে কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চাইছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। আগামী বছর তারা বইমেলার জন্য উদ্যানের জায়গা বরাদ্দ দেবে না বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েও দিয়েছে। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, বইমেলা কোথায় হবে। মেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়া হবে- এমন গুঞ্জনও চাউর হয়েছে।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সহসভাপতি ও বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল পাল বলেন, ‘বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেশের সেই হৃদয়প্রাঙ্গণ, যেখানে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা। তাছাড়া বাঙালির নানা ন্যয়সংগত সংগ্রাম, প্রতিবাদ ও অর্জনের সূতিকাগারও এই এলাকা। এ-ই সেই পবিত্র ভূমি, যেখানে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতিকে শুনিয়েছেন তাঁর অমর বাণী। সব মিলিয়ে বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ, বুয়েট বাঙালি জাতির উজ্জ্বলতম সাংস্কৃতিক তীর্থবলয়। তাই এখানেই মেলার আয়োজন হওয়া উচিত।’

অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই বইমেলা শুরু হয়েছিল। এটা বাঙালি সংস্কৃতি ও নবজাগরণের মেলা। এখানে শুধু বই কেনা-বেচা নয়, মানুষের সাংস্কৃতিক উৎসবের মিলনমেলাও হয়।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘গণপূর্ত তো এবারও মেলার আগে জায়গাটি বরাদ্দ দিতে আপত্তি করেছিল। পরে সার্বিক বিবেচনায় অনুমতি দিয়েছে। আগামী বছর অনুমতি দেবে না বলছে। পরে হয়তো দিতেও পারে। এটা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ অনুমতি না পেলে কোথায় হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি না পাওয়া গেলে মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, বইমেলা বাংলা একাডেমিতেই থাকুক। এই বইমেলার সঙ্গে একুশের চেতনা, শহীদ মিনার এবং বাংলা একাডেমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’ 

নতুন বই

বইমেলার বাড়তি দিনে গতকাল এসেছে ২১৯টি নতুন বই। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে পাঠক সমাবেশ এনেছে সরকার আমিনের প্রবন্ধ ‘কবিতার চিত্রকল্প’। নান্দনিক এনেছে ধ্রুব এষের গল্পগ্রন্থ ‘পৃথিবীর সব কুকুর ও জোনাকি’ ও হায়াৎ মামুদের প্রবন্ধ ‘বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই’। গ্রন্থিক প্রকাশন এনেছে পুলিন বকশীর দর্শনবিষয়ক ‘রুমি এবং নারী’ ও তোফায়েল আহমেদের রাজনীতিবিষয়ক ‘সংস্কার সংলাপ : রাষ্ট্র নির্বাচন, শাসন-প্রশাসন ও সংবিধান’। ক্রিয়েটিভ ঢাকা এনেছে সাকিরা পারভীনের কাব্যগ্রন্থ ‘তুমিই ঠিক তোমার নও’। এ ছাড়া সাজ্জাদ আরেফিনের সম্পাদনায় প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা-পরিচয়’ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। সনৎকুমার সাহার ‘অর্থনীতির ন্যায়-অন্যায়’ প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। নাজমুল হক তপনের ‘ছোটদের মেসি’ এনেছে কিন্ডার বুকস। শেখ মেহেদী হাসান সম্পাদিত ‘বঙ্গমাতা : সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’ প্রকাশ করেছে জিনিয়াস। স্বকৃত নোমানের ‘মুসলিম মনন ও দর্শন : অগ্রনায়কেরা’ বের করেছে রোদেলা প্রকাশনী। উজ্জ্বল মেহেদীর ‘জলজোছনার জলোপাখ্যান : মউজ, মজে মউজ’ প্রকাশ করেছে নাগরী। সৌম্য প্রকাশ করেছে সাদিয়া নাজিবের ‘শূন্য দেবালয়ের শঙ্খ’। 

আজ শেষ হবে প্রাণের মেলা

আজ বইমেলার সমাপনী দিন। এদিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৫টায় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। 

সমাপনী অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা