প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:২১ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৫ পিএম
প্রবা ফটো
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেছেন, ১৯৪৭ সালের আগে দেশে কোনো সংবাদপত্র ছিল না। পরে কলকাতা থেকে আজাদ এলো। এর পর পর কয়েকটি পত্রিকা আসে। যদিও সে সময় যারা সাংবাদিকতা করতেন, তারা ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে পত্রিকার আশ্রয় নিতেন। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার বিকাশটা এখনও সে অর্থে ঘটেনি। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সাংবাদিকতার ওপর ডিপ্লোমা এবং মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এ ছাড়াও নানা কোর্স চালু রয়েছে। যদিও বিশ্বের আর কোথাও সরকারি অর্থায়নে সাংবাদিক প্রশিক্ষণ দেয় না।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি (ঢাকসাস) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার শেষ অধিবেশনে প্রধান অতিথির আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকসাস সভাপতি এ জেড ভূঁইয়া আনাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিমের সঞ্চালনায় দুই দিনের কর্মশালা শেষ হয় আজ।
জাফর ওয়াজেদ বলেন, ’বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর সংবাদপত্রের কিছুটা বিকাশ ঘটেছে। একুশ শতকে এসে সংবাদপত্রে আরও বিকাশ ঘটেছে। এটা শুধু শিল্পই নয়, ইলেকট্রনিক, অনলাইন মিডিয়াসহ তথ্যপ্রযুক্তিরও বিকাশ ঘটেছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এসেছে। আগামী দিনে কী হবে আমরা জানি না। তবে আমাদের সাংবাদিকদের তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিকাশ ঘটতে না ঘটতেই পঞ্চম শিল্পবিপ্লব এসে গেছে। এ তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাংবাদিকরা যেন পিছিয়ে না যায়। তাদের অগ্রসর রাখতে পারি। প্রযুক্তি এসে গণমাধ্যমে একটা উলটপালট এসে গেছে। যা আরও হবে। গণমাধ্যমের এ বিবর্তনের সময় নিজেকে যোগ্য করে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ’প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) সাংবাদিকতার ওপর ডিপ্লোমা এবং মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। মাস্টার্স কোর্সের প্রথম পর্ব আছে, এবার আমরা দ্বিতীয় পর্বের জন্য অনুমোদন পেয়েছি। সেখানে আমাদের শুক্র-শনিবারে ক্লাস। যা সম্পূর্ণ পেশাজীবীদের জন্য। সাংবাদিকতা নিয়ে যখন নেতিবাচক ধারণা সবার, এমন সময়ে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির কর্মশালায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীদের দেখে বুকটা ভরে গেছে। সাংবাদিকতায় তাদের এতটা আগ্রহ! এ আগ্রহ আমাদের সময়েও ছিল। যদিও এখনকার শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো সংস্কৃতির চর্চা করেন না।’
ঢাকা কলেজের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ’আমার সৌভাগ্য ঢাকা কলেজে আমি যাদের সঙ্গেই পড়েছি তারাই পরবর্তী জীবনে বিখ্যাত হয়েছেন। আমি সেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের একজন বন্ধু। ৪৯ বছর আগে অমি যখন ঢাকা কলেজে ভর্তি হতে আসি, নোটিশ বোর্ডে দেখতে আসি আমার নাম আছে কি না। আমাদের সময় নোটিশ বোর্ডে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নাম থাকত। যেখানে প্রথম ২০ জনের নাম থাকত। কোন কোন শিক্ষক পড়িয়েছেন তাদের নাম থাকত। এ ২০ জনের নাম পত্রিকায়ও ছাপা হতো। পরবর্তী সময়ে তাদের মা-বাবাসহ তাদের ইন্টারভিউ হতো। এখন এসব উঠে গেছে। আমরা এখন আর মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাই না।’
কলেজ-জীবন থেকে সাহিত্য চর্চার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ’কলেজে ওঠার পর থেকে আমি লেখালেখি শুরু করি। স্কুলজীবন থেকেই চাঁদের হাঁট, কচি-কাঁচা, খেলাঘরে লিখতাম। লিখে লিখে হাত শক্ত করেছি সেই ছোট থেকেই। কলেজ-জীবনে একটি লিটল ম্যাগাজিন বের করি। যার নাম পেন্ডুলাম। যেখানে ঢাকা শহরের প্রায় সব কবির কবিতা ছাপা হয়। এর সুবাধে ঢাকা শহরের কবিদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া এবং তারা কোন পরিবেশে থাকেন, কাছ থেকে দেখেছি। আমাদের শিক্ষক ছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। স্যার ছাত্রদের কাজে লাগাতেন। আমাদের সময় কবিদের আড্ডা হতো নিউমার্কেটের মনিকো নামে একটা চায়ের দোকানে। ওই চায়ের দোকানে যিনি চা দিতেন তিনিও একজন কবি ছিলেন। তিনি কবি রফিক সিদ্দিকী। সেখানে একটা ভালো আড্ডা হতো। বিশেষ করে ছুটির দিনে। আমাদের ছুটি ছিল রবিবার। নিউমার্কেটে তখন বইয়ের দোকানই ছিল বেশি।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ। ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস শিকদার, এএফপি ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম, চ্যানেল আই বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক, দ্য ডেইলি স্টারের সাহিত্য সম্পাদক ইমরান মাহফুজ।
দুই দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মেহসীন-উল হাকিম, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক মঞ্জুরুল করিম, সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি ওবায়েদুল্লাহ রনি, কালের কন্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদাৎ স্বপন, কালবেলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল হক সানী, বিজনেস পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নিয়াজ মাহমুদ, মোজো সাংবাদিক যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ ও এখন টিভির নিজস্ব প্রতিবেদক বেলায়েত হোসাইনসহ আরও অনেকেই।