সাংবাদিক নেতাদের মন্তব্য
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৩৯ পিএম
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:০৫ পিএম
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার এক প্রতিবাদ সমাবেশে কথা বলেন সাংবাদিক নেতারা। প্রবা ফটো
গণমাধ্যমের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির নামে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি পক্ষ করা হয়েছে। নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছোট করা হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এদেশের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নতুন নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শক্তিশালী স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম। কিন্তু এই স্তম্ভকে অপমান করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির নামে। একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হয়েছিল। এবারও হবে। নির্বাচন এলে বাইরের শক্তি দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। এটার কোনো অধিকার তাদের নেই।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ভিসানীতির নামে সংবাদমাধ্যমে মার্কিন চাপের প্রতিবাদে সাংবাদিক সমাবেশে এসব মতামত দেন সাংবাদিক নেতারা। জাস্টিস ফর জার্নালিস্টসের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী চক্র আজও সক্রিয়। তাদের মদদ, সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। এসব ভিসানীতি এদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র মাত্র। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে সবার সচেষ্ট থাকতে হবে। পঁচাত্তরের মতো একটা পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। দেশবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে। এরা নব্য রাজাকার। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে। একাত্তরে মর্কিন ভূমিকা বিতর্কিত ছিল। এখনও তাদের অবস্থানের কোনো বদল হয়নি। বিদেশের মাটিতে বসে দেশবিরোধী প্রচারণার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যখন গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি আসে তখন তো বিএনপি ও তাদের দোসররা কিছু বলে না।
ডিবিসি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ও দৈনিক অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কে যুক্তরাষ্ট্র? তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দেশটি এবার গণমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। এটা রাষ্ট্রদূতের ধৃষ্টতা। সাংবাদিক সমাজের মর্যাদাকে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের শামিল। স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর এ হুমকি অবমাননাকর। এদেশে রাজনীতিবিদরা কীভাবে রাজনীতি করবে, এটা যুক্তরাষ্ট্রের বলে দেওয়ার কিছু নেই। এদেশের রাজনীতিবিদরা দেশের প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাতে সমর্থন দেবে জনগণ। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষ এ দেশের মানুষ চায় না। আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের মায়াকান্নার প্রয়োজন নেই। বন্ধু বন্ধুর মতো থাকো। প্রভুর মতো আচরণ করলে, এটা কেউ সহ্য করবে না। সেটা যতই পরাশক্তি হোক।’
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘বিরোধী দলের আদর্শের মানুষরা সাংবাদিকদের নিয়ে অপপ্রচার করে। সাংবাদিকরা বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করেছে। সাংবাদিকদের মর্যাদা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ছিনিমিনি খেলছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর (ভিসানীতি প্রয়োগ) – এখন তারা বলছে যেকেউ। আমেরিকার তাহলে বিবেচনাটা কী? ঘনিষ্ঠ মিত্র, নির্ভরযোগ্য মিত্র, কৌশলগত মিত্র, প্রয়োজনীয় মিত্র। পাকিস্তান তাদের নির্ভরযোগ্য মিত্র।’
তিনি বলেন, ‘বলা হয় আমেরিকা মুক্ত গণমাধ্যমের দেশ। কিন্তু সেখানেও সাংবাদিক নির্যাতন হয়। পিটার হাস এ ধরনের কথা (বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ) বলতে পারেন না। কংগ্রেস স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইন করতে পারে না। পিটার হাস তার দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। চেতনার বাইরে গেলে। ভিসানীতি তো আছেই। নতুন করে বলার কী আছে। এটা করা হয়েছে চাপ তৈরির জন্য। ভিসানীতিকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। চাপ দিয়ে চাহিদা মতো সংবাদ প্রকাশ করাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি। পেশাদারিত্বের মর্যাদা মাটিতে মেশানো যাবে না। কূটনীতিক নিয়ম মেনে চলতে হবে পিটার হাসকে। তিনি অতিথি, তার কোনো অসম্মান হোক এটা এদেশের মানুষ চায় না।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়া বলেন, ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কথা এলে, একাত্তরে ফিরে যেতে হবে। এরা কখনও এ দেশটি চায়নি। তাদের দেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তারা অন্য দেশ নিয়ে কথা বলে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, সামরিক শাসনের পক্ষে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করে। আমেরিকা রাজাকারের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। ভিসানীতি তাদের নিজস্ব বিষয়। আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। বাঙালি জাতিকে ভয় দেখানো যায় না। আমেরিকা খুব বেশি সফল হবে না। সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণতন্ত্র না থাকলে সাংবাদিকতা থাকে না। সাংবাদিকদের ওপর চাপ দিয়ে, কিছু আদায় করা যাবে না। এদেশের গণমাধ্যম মুক্ত ছিল, মুক্ত থাকবে।’
সাংবাদিক নেতা কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘আমেরিকার নিজস্ব বিষয় এই ভিসানীতি। গণমাধ্যমের ওপর এটা আরোপ করে, পক্ষান্তরে সাংবাদিক ও সাংবাদিকতাকে হেয় করা হয়েছে।’