× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইভিএম ক্রয় প্রকল্পে হঠাৎ গতি, উঠছে একনেকে

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৩২ এএম

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:০১ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের আগ্রহ দেখালেও বিপুল ব্যয়ের মুখে সেই প্রকল্পে চলছে বেশ ধীরগতি। জনমনে এ নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। ওদিকে চলতি জানুয়ারির মধ্যে বাজেট না দিলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে না বলে আগেই জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার কমিশনার মো. আলমগীর।

এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল বুধবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ইভিএম প্রকল্পটি উঠতে পারে বলে খবর মিলেছে। তবে একনেকে ওঠার আগের প্রস্তুতি এখনও শেষ হয়নি। এখন কেবল প্রধানমন্ত্রী চাইলে প্রকল্পটি একনেকে উঠবে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ইভিএম প্রকল্পের এখনও প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়নি। প্রকল্পটি যে পর্যায়ে আছে, সেই পর্যায়ের প্রকল্প সাধারণত একনেকে ওঠে না। মোসাম্মৎ নাসিমা বলেন, ‘তবে প্রধানমন্ত্রী যদি চান তাহলে দেখা যাবে।’ এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘ইভিএম প্রকল্প দ্রুতই একনেকে তোলা হবে।’

ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা জনবল খাতে ১৩০০ জন চেয়েছিলাম, কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ জন বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা গাড়ি কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সুতরাং ইভিএম প্রকল্প একনেকে উঠবে কি না তা বলা যাচ্ছে না।’

নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়ার জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করেছে। দুনিয়াব্যাপী মন্দার মুখে যেখানে ডলারের অভাবে নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে এই বিপুল ব্যয় নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। তবে পিইসি সভা না হলেও পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্যের নেতৃত্বে দফায় দফায় ইভিএম প্রকল্প নিয়ে মিটিং চলেছে বলে খবর রয়েছে। খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে হচ্ছে এসব মিটিং।

পরিকল্পনা কমিশনের এক বিশেষ সূত্র বলছে, ইভিএম প্রকল্পের সারসংক্ষেপ সোমবার পরিকল্পনামন্ত্রীর বাসায় গেছে। আগামীকাল বুধবার একনেক সভার কার্যতালিকায় ইভিএম প্রকল্পটি না থাকলেও টেবিলে উঠতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা অপেক্ষায়।

সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও পেশাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। একই ধরনের নতুন প্রকল্প নিতে হলে আগের প্রকল্পের সঙ্গে তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রয়োজন। এখানে তা এখনও হয়নি। এ নিয়ে আপত্তি ছিল পরিকল্পনা কমিশনেরও। অবশ্য নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিতে তড়িঘড়ি করে মধ্যবর্তী মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার এই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় গত ১৯ অক্টোবর। প্রকল্পটির নাম ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’। প্রকল্পের পুরো টাকা সরকার জোগান দেবে। প্রকল্প প্রস্তাবে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায় দুই লাখ ইভিএম কেনা এবং এগুলো বিভিন্ন জায়গায় আনা-নেওয়ার জন্য ২৬৪ কোটি টাকায় ৫৩৪টি ডবল কেবিন পিকআপ কেনার কথা বলা হয়েছে। আর রাখার জন্য ৩৭০ কোটি টাকায় ১০টি গুদাম নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়। এর বাইরে ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রচারে ২০৬ কোটি টাকা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ভাড়ায় ১৩২ কোটি টাকা এবং অন্য আরও খাতে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি আসার পরে বেশ কিছু আপত্তি তুলে ধরে। গত ৯ নভেম্বর আপত্তির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জবাব জানতে চিঠি দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন গত রবিবার আপত্তির জবাব দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একটি আপত্তি ছিল গাড়ি কেনা নিয়ে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অর্থনৈতিক সংকটে এত গাড়ি কেনা যাবে না। প্রয়োজন হলে ভাড়া করা যেতে পারে। জবাবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, বাংলাদেশে এত বিপুলসংখ্যক গাড়ি ভাড়া দেওয়ার মতো কেউ নেই। তাছাড়া ইভিএম স্থানান্তরের জন্য জরুরি ভিত্তিতে গাড়ির প্রয়োজন হতে পারে। সে জন্য গাড়ি কেনা তাদের জন্য জরুরি।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষার বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক বলছেন, সমীক্ষা করতে গেলে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। তাই সমীক্ষা করা হয়নি। এদিকে মধ্যবর্তী মূল্যায়ন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। নির্বাচন কমিশন গত ২৯ ডিসেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম নেওয়া ইভিএম কেনার প্রকল্প চলমান। এটি ২০২৩ সালে শেষ হবে। এই প্রকল্পের ইভিএম দিয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০টি নির্বাচন সফলভাবে শেষ হয়েছে। তাই প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় ইভিএম সংক্রান্ত নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইভিএমের দাম নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশনের প্রকল্পে প্রতিটি ইভিএমের একক দর ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে নেওয়া প্রথম প্রকল্পে প্রতিটির দর ছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা।

প্রতিটির দাম ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা বা ৬২ শতাংশ বাড়িয়ে ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, ডলারের দাম ও শুল্ক-কর বেড়েছে। এ কারণেই বেশি দাম পড়ছে। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে যখন ইভিএম কেনে তখনও দাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ওই সময় ভারতের ইভিএম ক্রয়মূল্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ইভিএম ক্রয়মূল্যের পার্থক্য তুলে ধরা হয়। ভারতের নির্বাচন কমিশন ইভিএম কিনেছিল ১৭ হাজার রুপিতে, যা তখন বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ হাজার ২৫০ টাকার সমান ছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) নির্বাচন কমিশনের জন্য যে ইভিএম তৈরি করেছিল, তার প্রতিটির দাম পড়েছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কিছু ভিন্নতা থাকলেও ২০১৮ সালে কেনা ইভিএমের দামের বিশাল পার্থক্যকে তখন অস্বাভাবিক বলেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা