× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

২০২২ সালে ব্যবসায় প্রধান বাধা ছিল দুর্নীতি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৬ পিএম

২০২২ সালে ব্যবসায় প্রধান বাধা ছিল দুর্নীতি

সদ্যবিদায়ি বছরে ব্যবসাক্ষেত্রে দুর্নীতিকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৬৫ শতাংশ উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী মনে করেন, ২০২২ সালে ব্যবসায় তাদের প্রধান বাধা ছিল সেটিই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি রবিবার (২৯ জানুয়ারি) ‘বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশ ২০২২’ এবং উদ্যোক্তা জরিপের বিষয়টি তুলে ধরেন। সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে জরিপের ফল উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডি ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই সময়ে দেশের ৭৪ জন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তার মতামতের ওপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। দুর্নীতির পরই রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংকঋণ পাওয়া, আমলাতন্ত্র, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা, নীতিধারাবাহিকতা না থাকা, কর আইনের জটিলতা, উচ্চ করহারের বিষয়গুলোকে তুলে আনা হয়েছে বাধা হিসেবে। 

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রবন্ধটি উপস্থাপনের সময় বলেন, জরিপে প্রায় সব উদ্যোক্তাই বলেছেন দুর্নীতির কারণেই ২০২১-এর চেয়ে ২০২২ সালে ব্যবসায় অবনমন হয়েছে। দুর্নীতির প্রধান খাতের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন কর পরিশোধে দুর্নীতির কথা। একইভাবে ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে, ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সংযোগ নেওয়া এবং ৭৪ দশমিক ৬ শতাংশ উদ্যোক্তা বলেছেন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ঘুষ বাণিজ্যের কথা। 

সেই সঙ্গে সিপিডির জরিপ বলছে, ৪৪ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ী মনে করেন, ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে অবিরত অর্থ পাচারের প্রভাবে। যেখানে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের বেশ ঘাটতি রয়েছে বলে জানান তারা।

জরিপের ফল প্রকাশের ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুর্বল অবকাঠামোর কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজভাবে পরিচালনা করতে পারেননি উদ্যোক্তরা। সেই সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অর্থের জোগানের সংকট ছিল বড় বাধা। উদ্যোক্তরা ব্যাংক থেকে সময়মতো অর্থ না পাওয়ায় ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। জরিপে দুর্বল অবকাঠামোর বিষয়টি তুলে ধরেন ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী। আর ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং মূল্যস্ফীতির বিষয়টি। ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতার কথা বলেছেন ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ ব্যবসায়ী। ভবিষ্যতে বড় আকারের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি সংকটে ফেলবে ব্যবসায়ী কার্যক্রমকে। এ ছাড়া ঋণজটিলতা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর বৃদ্ধি হুমকিতে ফেলবে প্রতিটি খাতকে। এমনকি ঝুঁকি রয়েছে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও দেখা দেবে নেতিবাচক প্রভাব।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে কর পরিশোধের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হলেও এখনও ২৬ শতাংশ ব্যবসায়ী জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর মূলে রয়েছে পরিশোধ কাঠামোতে নানা প্রতিবন্ধকতা। অটোমেশন বা সহজ পদ্ধতিতে কর পরিশোধের উপায় খুঁজছেন উদ্যোক্তারা।’

বড় এবং ছোট উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনায় সমস্যার কথা তুলে ধরে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বড় উদ্যোক্তাদের এখন বড় বাধা বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে না পাওয়া। এতে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। পাশাপাশি জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। আর ছোট উদ্যোক্তরা অর্থাৎ কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ না পাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনায় বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন। ছোট উদ্যোক্তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণসহায়তার আবেদন করলেও নানা কাগজপত্রের জটিলতায় ঋণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঋণপ্রাপ্তিতে বড় এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য একই নীতিমালা থাকায় নথিপত্রের বৃত্তেই আটকে থাকেন ছোট উদ্যোক্তারা। তাই সবার জন্য খাতভিত্তিক আলাদা নীতির বেশ প্রয়োজন রয়েছে।’

আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ঘাটতির কথা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, দেশে আর্থিক খাতে সুশাসনের বেশ অভাব রয়েছে। ফলে অনেক বড় উদ্যোক্তা ব্যাংকঋণ নিলেও ফেরত দেওয়ার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেন না। এজন্য খাতটিতে সরকারি সুশাসন নিশ্চিত করতে জোর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ না বাড়ার পেছনে কর কাঠামোর জটিলতা, দুর্বল অবকাঠামো এবং অদক্ষ লোকবলকে দায়ী করা হয়। প্রায় ৫৩ শতাংশ ব্যবসায়ী দাবি করছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশে এলেও বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণে আগ্রহ দেখান না। কোনো অভিজাত হোটেলে অবস্থান করে কয়েকটি জায়গা ঘুরে আবার দেশে ফিরে যান। এক্ষেত্রে রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কার্যকারিতা কম থাকা। পাশাপাশি অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল আর্থিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। 

সিপিডির পরিচালক বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করা। সে লক্ষ্যে যাওয়ার আগে প্রয়োজন ডিজিটাল বাংলাদেশ কতটুকু হলো, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ। নিয়মিত পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখার আবশ্যকতা রয়েছে কোথায় ঘাটতি ছিল এবং আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেত। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবশ্যই নজর দিতে হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রভাব এখনও ফুটে ওঠেনি। তাই সরকারকে মনোযোগী হতে হবে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর।’

সংবাদ সম্মেলনে গোলাম মোয়াজ্জেম প্রকল্প এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন। সেক্ষেত্রে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে খরচ কমিয়ে প্রয়োজনীয় প্রকল্পে মনোযোগী হতে। বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করেও ভর্তুকি কমাতে পারে। সরকারকে এলএনজি আমদানি করতে হয়। আমাদের পরামর্শ এলএনজি আমদানি না করে বিকল্প উৎস হতে অর্থাৎ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা এবং গ্যাস উত্তোলন করে যাওয়া। এতে চাপ কমবে গ্রাহকের ওপর।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, প্রোগ্রাম সহযোগী জেবুন্নেসা ও চৌধুরী ফারিয়া।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা