হৃদরোগের চিকিৎসায় দেশ এখন স্বনির্ভর : প্রধানমন্ত্রী

সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে হৃদরোগের চিকিৎসাসেবাকে স্বনির্ভর করে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, তার সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে আগের চেয়ে সাশ্রয়ী করেছে। এই সেবা প্রতিটি দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে প্রায় স্বনির্ভর করে তোলা হয়েছে। দেশ এখন হৃদরোগের চিকিৎসায় প্রায় স্বাবলম্বী। এই রোগের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ চিকিৎসার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। সেজন্য দেশে দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত তৃতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রচারিত পূর্বে-রেকর্ডকৃত এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেসব রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হতো, সেসব রোগের চিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন কিডনি, লিভার, বাইপাস, নিউরো সার্জারি এবং বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এখন বাংলাদেশে সফলভাবে চিকিৎসা হচ্ছে। দেশের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা এখন সফলভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন, যার সুফল জনগণ পাচ্ছে। ফলে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটি সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি সম্পূর্ণ কার্ডিওলজি ও কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের মাধ্যমে আরও দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরির সুযোগ রয়েছে। বিএসএমএমইউতে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশ্বমানের কার্ডিওভাসকুলার অব সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে।’

প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ১৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো হৃদরোগ। বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ২৭ শতাংশ। প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে, প্রতি ৫ জন যুবকের মধ্যে ১ জন হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান এবং ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হৃদরোগীদের চিকিৎসা-সুবিধা উন্নত করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর আমাদের নজর দিতে হবে।’

স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১টি স্নাতকোত্তর সুপার বিশেষায়িত হাসপাতাল, কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যানসার হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি সারা দেশে ৬০০টির বেশি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১৮ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। হাসপাতাল থেকে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সারা দেশে ৪৩টি হাসপাতালে টেলি-মেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে, যেখানে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এ ছাড়া ৫ লাখ অটিস্টিক শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১০৩টি সেবাকেন্দ্র রয়েছে। আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশকে পোলিও ও ধনুষ্টংকারমুক্ত (টিটেনাস) দেশ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও।’

শেখ হাসিনার সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ৫০টি। সেখান থেকে এখন ১১৫টিতে দাঁড়িয়েছে। মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা এখন ১০ হাজার ৭৮৯-এ দাঁড়িয়েছে, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ২ হাজার ৫০টি। ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ১৩টি।’

বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করবে এবং ইতোমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ৩ বছরে ১০ হাজার চিকিৎসক এবং ১৫ হাজার নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাস্থ্য খাতের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যার ভিত্তিতে বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য আইপিজিএমআর এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমাদের সরকার ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে আইপিজিএমআরকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বৈজ্ঞানিক কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এবং ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সের চেয়ারম্যান ডা. রাজেশ এম ডেভ।

বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।