প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:১১ পিএম
অমর একুশে বইমেলা ও পুলিশ সদর দপ্তরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বোমা হামলার হুমকির পর নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রবা ফটো
অমর একুশে বইমেলা ও পুলিশ সদর দপ্তরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বোমা হামলার হুমকির পর নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলার প্রবেশদ্বারে কঠোর তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে দর্শনার্থীদের।
পুলিশের দায়িত্বশীলরা বলছেন, আনসার আল ইসলামের চিঠি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। চিঠি দিয়ে জঙ্গি হামলার নজির বাংলাদেশে নেই। তবে জঙ্গিদের এমন হামলার হুমকির পর বইমেলায় বেচাকেনায় প্রভাব পরার শঙ্কায় বিক্রেতারা। তবে শুক্রবার হুমকির কোনো প্রভাব মেলায় পড়েনি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বইপ্রেমীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বৃহস্পতিবার সকালে বইমেলা ও পুলিশ সদর দপ্তরে বোমা হামলার হুমকি দিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদাকে চিঠি পাঠায় আনসার আল ইসলাম। হাতে লেখা এক পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডের পাশে দুটি আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবি জানানো হয়। জঙ্গি সংগঠনটি দাবি করেছে, দেহ ব্যবসাসহ অন্যান্য নারীঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কঠোর। যাত্রাবাড়ীর ওই দুটি আবাসিক হোটেলের বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এবং বইমেলায় লেখকরাও দেহব্যবসার বিরুদ্ধে কোনো বই লেখেননি বলে চিঠিতে দাবি করা হয়।
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের করাচি পুলিশ সদর দপ্তরের মতো বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তরে বোমা মেরে পুলিশ হত্যা করব। এটা করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় আছি। পত্র পাওয়া মাত্রই যদি ওই দেহব্যবসা বন্ধ করা না হয়, তবে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায় বোমা মেরে বইপ্রেমীদের খুন করব।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে দাবি করা হয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় গেলে সন্ত্রাসী হামলায় খুন হন লেখক অভিজিৎ রায়। এর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বহুমাত্রিক লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়। তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর একই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানিতে মারা যান হুমায়ুন আজাদ।
এদিকে বৃহস্পতিবার হামলার হুমকি দিয়ে জঙ্গিদের চিঠি পাঠানোর পর বইমেলার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলার আশেপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট তুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। প্রবেশদ্বারে পুলিশের তল্লাশি ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় আগন্তুকদের শরীর ও ব্যাগ খুলে তল্লাশি করতে দেখা গেছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। এক পুলিশ সদস্য জানান, মেলার শেষের দিকে এমনিতেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এরমধ্যে জঙ্গি হামলার হুমকির পর বেশি সতর্ক অবস্থানে আছেন তারা।
মেলায় একাধিক বইয়ের স্টলে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেচাবিক্রি অনেক ভালো। জঙ্গি হামলার হুমকিতে মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। মেলার ‘প্রভাতি প্রকাশ’-এর বিক্রয়কর্মী মো. হৃদয় বলেন, ’শুক্রবার মেলায় উপস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তাদের বেচাবিক্রিও ভালো হচ্ছে।’ তবে সামনের দিনগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
রাজধানীর উত্তরা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মেলায় আসা এহসানুন জুয়েল সাংবাদিকদের বলেন, ‘জঙ্গি হামলার হুমকির বিষয়টি আমার জানা নেই। মেলায় এসে জানতে পেরেছি।’ রাজধানীর মিরপুর থেকে মেলায় আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হুমকি-ধমকি দিয়ে বইপ্রেমীদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ শুক্রবার দুপুরে তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ’জঙ্গি হামলার চিঠিটি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছুটির দিনে বইমেলার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ধরনের চিঠি আগেও আমরা পেয়েছি। এই চিঠির ওপর ভিত্তি করে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
পুলিশ সদর দপ্তরে নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া অ্যান্ড পিআর মো. মনজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুধু জঙ্গি হামলার হুমকির জন্য নয়, পুলিশ সদর দপ্তরে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সব সময়ই আছে। বইমেলার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।’
জঙ্গি নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’বোমা হামলার হুমকি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উড়ো চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবুও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি।’ আগে থেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর বোমা হামলার নজির নেই উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ’ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হলেও কোথা থেকে এবং কীভাবে পাঠানো হয়েছে সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’