× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিলুপ্তির পথে বন্যহাতি, গুরুত্ব নেই রক্ষায়

আমিনুল ইসলাম মিঠু

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৫ এএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:১১ এএম

বন্যহাতির পাল।

বন্যহাতির পাল।

ডাইনোসরের পর স্থলচরের সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী হাতি। বিশ্বের ১৩টি দেশে টিকে আছে এখনও। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বনভূমি উজাড়, বনের জমি দখল ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে নষ্ট হচ্ছে বন্যহাতির আবাসস্থল, খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং পানির উৎস। এতে বেড়েছে মানুষ-হাতির দ্বন্দ্ব। হাতি রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার এখনও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আজ শুক্রবার (৩ মার্চ) বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এমএ আজিজ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বন বিভাগ চুপচাপ বসে আছে। অথচ সামনে ধানের মৌসুম আসছে শেরপুরে। হাতিগুলো যখন পাহাড় থেকে আবার নেমে আসবে, তখন হাতি-মানুষ সংঘাত দেখা দিতে পারে। এজন্য আগেভাগে পরিকল্পনা থাকা দরকার। তা না হলে হাতি মৃত্যুর ঘটনা আবারও বাড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বেশকিছু প্রকল্প নেওয়া হলেও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের বাজেটে কাটছাঁট হচ্ছে। তার পরও হাতির মতো প্রাণী রক্ষায় কিছু পরিকল্পনা থাকা উচিত। শুধু রাজস্ব খাতের ওপর নির্ভর না করে বৈদেশিক ফান্ডিংয়ের দিকেও নজর দেওয়া উচিত।’

২০২২ সালের ডিসেম্বরে কানাডার মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত জীববৈচিত্র্য সম্মেলন-কপ১৭ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বুনোহাতি সংরক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও হাতি সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এমএ আজিজ বলেন, ‘বাংলাদেশ এমনিতেই জলবায়ুগত সংকটে আছে। এ কারণে হাতির মতো প্রাণীদের খাবার ও পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। আগামী বছর জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে প্রত্যেকটি দেশের জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরতে হবে। এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে অর্থাৎ প্রকল্প প্রস্তাব করা না হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া কঠিন হবে।’ 

বাংলাদেশের শেরপুর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলে বন্যহাতি বিচরণ করে থাকে। এর মধ্যে শেরপুর, কক্সবাজারের টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতি-মানুষের সংঘাত ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি দক্ষিণ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি এবং টেকনাফ অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, দিন দিন বনের এলাকা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কেটে নেওয়া হচ্ছে সংরক্ষিত বনের গাছপালা। এমনকি বনের জমি দখল করে চাষাবাদও করছে বনাঞ্চলের আশপাশে থাকা বাসিন্দারা।

সূত্রমতে, ২০১৫ থেকে ২০২১ দেশে মৃত্যু হয়েছে মোট ৭৬টি বুনোহাতির। ২০২০ সালে ২২টি ও ২০২১ সালে ৩৪টি হাতি মারা গেছে। বাংলাদেশ বন বিভাগ বলছে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে ৫০টির বেশি হাতি মারা গেছে। ব

ন বিভাগের হিসাবে ১৯৯২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১৪১টি বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনায় বন বিভাগের একটি মামলারও রায় হয়নি। হাতি মৃত্যুর ঘটনায় গত ২৯ বছরে ৩৭টি মামলা হয়েছে। মারা যাওয়া হাতিগুলো বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে নয়তো গুলি করে বা বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশে বন্যহাতির ১২টি করিডোর আছে উল্লেখ করেছে প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইইউসিএন)। তাদের জরিপ অনুযায়ী করিডোরগুলোতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বন্যহাতি ছিল ২৬৮টি। 

এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন ৮২টি, চিড়িয়াখানায় তিনটি ও দেশের দুটি সাফারি পার্কে ছিল ১১টি পালিত হাতি। এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কিছু হাতির প্রজনন হয়েছে বলে মনে করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, করিডোরগুলোর অর্ধেকেরই বেশি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এগুলোতে গড়ে উঠেছে লোকালয় এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

২০২১ সালে বন্যহাতির করিডোর রক্ষায় রিট হয় উচ্চ আদালতে। সে সময় প্রাণীটি সংরক্ষণে হাতি চলাচলের এলাকাগুলোতে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছুদিন এ নিয়ে বন বিভাগ থেকে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নেওয়া হলেও পরে সেগুলোও মুখ থুবড়ে পড়েছে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনিরুল হাসান খান বলেন, বাঘ-হাতির মতো প্রাণীগুলো সংরক্ষরণে প্রকল্পনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা সরকারের রেভিনিউ বাজেটের আওতায় আনা উচিত। যেহেতু হচ্ছে না তাই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনাও টেকসই হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন হাতি বা বন্যপ্রাণী রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ তাহলে বাজেট সংকট থাকবে না। সংকট আসার আগেও তো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সুরক্ষা প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজের প্রকল্প পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটির বাজেট ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।’

প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে বন্যহাতির জন্য সোলার ফেন্সিং, জনসচেতনতা ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম আরও সুগঠিত করা যাবে বলে তিনি জানান।

চলতি মাসে ভারতের নয়াদিল্লিতে আইইউসিএনের আয়োজনে হাতি সংরক্ষণে বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ থেকে যোগ দেবেন বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল চট্টগ্রামের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, আগের ব্ছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত অনেকটা কমেছে। কারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। যারা হাতির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। গত অর্থবছর ২৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস ৩ মার্চ হলেও আগামী ৫ মার্চ অনুষ্ঠান করবে বাংলাদেশ বন বিভাগ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন ভবনের হৈমন্তী মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সকলের অংশগ্রহণ বন্যপ্রাণী হবে সংরক্ষণ’।

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলাবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বিশেষ অতিথি থাকবেন উপমন্ত্রী হাবিনুন নাহার।

গবেষকরা বলছেন, দেশে এশীয় বন্যহাতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। কয়েক বছরে মারা গেছে কমপক্ষে ৫০টি। ২০১৬ সালে আইইউসিএন সমীক্ষার মাধ্যমে জানায়, ওই সময় দেশে বন্যহাতি ছিল ২৬৮টি।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীদের দাবি, গত সাত বছরে মারা গেছে অন্তত ৭৬টি, যার ৯০ শতাংশকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, হাতি মারা গেলেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। সংরক্ষণের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনাই নিতে পারছে না সরকার। এতে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে হাতি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা