× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজার মনিটরিং কমাতে চায় অর্থ বিভাগ

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১১:০৩ এএম

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৩:২১ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্যমূল্য। বাজার মনিটরিং কঠোর করেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে এই মনিটরিং বাড়ানোর কথা, সেখানে তা কমানোর পরামর্শ দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বলা হচ্ছে, সরকারের অর্থ ঘাটতির কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং কর্মদিবস এবং পরিবহন খরচ কমানো প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং টিমের পরিবহন খরচ চেয়ে অর্থ বিভাগের দ্বারস্থ হলে অর্থ মন্ত্রণালয় এ মতামত দেয়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দৈনিক ব্যবহারভিত্তিক মাইক্রোবাসের ভাড়ার জন্য ভাড়া, ফুয়েল, ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ আনুমানিক প্রতিটি মাইক্রোবাসের ভাড়া প্রতি মাসে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩৮ টাকা- এ কথা জানিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগে এ বিষয়ে সম্মতির জন্য চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে অর্থ বিভাগ এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়।

এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাজার মনিটরিংয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় মনিটরিংয়ের কর্মদিবস কমিয়ে এবং নিয়োজিত গাড়িগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে হলেও প্রতিটি মাইক্রোবাসের ভাড়া হিসাবে মাসে ন্যূনতম ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা অনুমোদনের অনুরোধ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ বিভাগ বাজার মনিটরিং কর্মদিবস ও পরিবহন খরচ কমিয়ে আবারও একটি প্রস্তাব দিতে বলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা বলেছি, জনস্বার্থে পণ্যের বাজারদর মনিটরিং টিমের তদারকি বাড়ানোর অন্য কোনও বিকল্প নেই।

আমরা আরও জানিয়েছি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) ৭২০টি বাজার মনিটরিং করার কথা রয়েছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ২১৪টি বাজার মনিটরিং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নথি থেকে জানা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখতে প্রতিদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪টি বাজার মনিটরিংয়ের জন্য দুটি মাইক্রোবাস ভাড়ার জন্য অর্থ খরচের সম্মতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় এক পত্রের মাধ্যমে এতে অসম্মতি জানায়। ওই চিঠিতে অর্থ বিভাগ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের বরাদ্দ অনুযায়ী ৯০ হাজার টাকায় প্রতিটি মাইক্রোবাস ভাড়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু চলতি বাজারে ফুয়েল চার্জ, ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ একটি মাইক্রোবাস মাসে ৯০ হাজার টাকায় ভাড়া করাও প্রায় অসম্ভব বলে নথিতে উল্লেখ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, সরকারের বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করলে এত টাকার প্রয়োজন পড়ে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিতে হয় না।

খরচ কমানোর নামে সরকারের মূল কার্যক্রমে টাকা দিতে না দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এভাবে সরকারের কৃচ্ছ্র সাধন কার্যক্রম কোনওভাবেই সফল হবে না। যদি এতটাই কৃচ্ছ্রতার প্রয়োজন হয় তাহলে সব এমপি-মন্ত্রী সরকারের অর্থের যে অপচয় করছেন, সেটা কমায় না কেন?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আসন্ন রমজান মাসে উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিশেষত ঢাকার উভয় সিটি করপোরেশন এলাকায় বাজার মনিটরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভৌগোলিকভাবে ঢাকা একটি মেগাসিটি।

ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ। জনসংখ্যা বিচারে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর।

প্রস্তাবে বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য স্থিতিশীল রাখার ওপর জনজীবনের স্বস্তি অনেকাংশে নির্ভর করছে। বাজার মনিটরিং করার মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটিই নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত টিম মাঠে রাখার প্রয়োজনে মাইক্রোবাস ভাড়া করার বিকল্প নেই।

তাছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতিতে নানা কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তখন থেকে জনস্বার্থে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যত অসুবিধাই থাকুক, রমজানে মনিটরিং ব্যবস্থা বহাল রাখা হবে। তবে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারও সুবিধা নেওয়া উচিত নয়। এ সময় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কঠোর মনিটরিং করা হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে টিসিবির ওএমএস কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

এদিকে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে কিছু মৌলিক পণ্যের বাজার মনিটরিং জোরদার করতে মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে।

কমিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার পর্যবেক্ষণ ও পণ্য আমদানি তদারকির জন্য একত্রে কাজ করছে। কমিটির প্রধান কাজ হচ্ছে পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও আমদানি পর্যবেক্ষণ করা, যাতে আসন্ন রমজানে ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারেন।

সারাবছর বাজার মনিটরিংয়ের জন্য উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির ছয় মাস করে বাজারে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করার কথা। প্রতিটি কমিটিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রতিনিধি রয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সারাবছরের জন্য গঠিত এ রকম ১৪টি মনিটরিং টিম মূলত রোজার সময়ই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

বাজার মনিটরিংয়ের জন্য ইতোমধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই ১৪টি টিম গঠন করেছে। ১ জানুয়ারি থেকে টিমগুলো ঢাকা শহরের দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার পরিদর্শন শুরু করেছে।

গত বছর বাজার মনিটরিং বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিনির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রিয়েল টাইম ডেটা অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের সবশেষ চাহিদা, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের হার, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহের চালচিত্র পাওয়া সম্ভব।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা