× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মার্চ-মে মাসে ঘটতে পারে ‘এল নিনো’, প্রভাব পড়বে না বাংলাদেশে

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:৩২ পিএম

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৩ পিএম

এল নিনোর প্রভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে। চবি : সংগৃহীত

এল নিনোর প্রভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে। চবি : সংগৃহীত

চলতি বছরের মার্চ-মে মাসে একটি এল নিনোর (উষ্ণতাবৃদ্ধিকারী) ঘটনা ঘটতে পারে। এতে আফ্রিকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ুতে প্রভাব পড়বে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের ধরনকে প্রভাবিত করা এল নিনোতে আক্রান্ত হবে না বাংলাদেশ। গত ১ মার্চ ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিকেল ওর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মার্চ-মে মাসে এল নিনোর ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও গত বছরের ২৯ নভেম্বর ডব্লিউএমওর ‘স্টেট অফ গ্লোবাল ওয়াটার রিসোর্স ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনও এ বিষয়ে আভাস দেওয়া হয়েছিল।

নতুন বিবৃতিতে এল নিনোর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনা করা হলেও এটি এল নিনো-সাউদার্ন অসিলেশন (ইএনএসও) নিরপেক্ষ অবস্থার সময়কালের দ্বারা এগিয়ে যাবে। এল নিনোর সম্ভাবনা বছরের প্রথমার্ধে কম থাকলেও এপ্রিল-জুন মাসে ১৫ শতাংশ, মে-জুলাইয়ে ধীরে ধীরে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়। জুন-আগস্টের দীর্ঘসূত্রিত পূর্বাভাসগুলো এল নিনোর বিকাশের ৫৫ শতাংশের অনেক বেশি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।  

এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির গড় তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯০১ সালের পর অর্থাৎ ১২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেখানে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে কয়েক দফায় দাবদাহ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ফলে দেশটির গম, রাইসরিষা ও ছোলার মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে মধ্য ও পার্শ্ববর্তী উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে দাবদাহের শঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এসব অঞ্চলে দাবদাহের ঘটনা ঘটলে গমের ব্যাপক ক্ষতি হবে। দেশটিতে ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৮ শতাংশ কম হয়েছে। 

গত ২ মার্চ বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসও মাসিক পূর্বাভাসে জানায়, মার্চ মাসে ২-৩টি মৃদু বা মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গত ১-৪ মার্চ বাংলাদেশেও ৩৫ ডিগ্রির ওপরে ছিল তাপমাত্রা, যা মার্চ মাসে সাধারণত ৩০-৩২ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। 

এল নিনো বাংলাদেশের আবহাওয়ায় কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে প্রকৌশলী ম ইনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এল নিনো ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমার পর্যন্ত প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশে ওইসময় সাধারণত কালবৈশাখী হয়ে থাকে, বিধায় কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। 

এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এল নিনো একটা ধারণা। যে বছর এল নিনো হয় সে বছর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয়। আর বৃষ্টিপাত কম হলে ভূগর্ভস্থ পানিও কম সঞ্চিত হয়। তবে ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। 

এর আগে ‘স্টেট অফ গ্লোবাল ওয়াটার রিসোর্স ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০০২ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই দশকে গঙ্গার পানিপ্রবাহ কমেছে ব্যাপক হারে। কমেছে গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিও। সেই কাতারে যোগ দিয়েছে সিন্ধু নদের অববাহিকাও। লা নিনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২১ সালে বিশ্বের অনেক স্থানেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। লা নিনাতেই ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়। বছরটিতে বিশ্বে চার শতাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে, যার মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। তাতে প্রাণ গেছে প্রায় ১০ হাজার মানুষের। প্রভাবিত করেছে বিশ্বের ১০ কোটি জনবসতিকে। বছরটিতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রিরও বেশি। সেজন্য বছরটিকে চিহ্নিত করা হয় ইতিহাসের সপ্তম উষ্ণতম বর্ষ হিসেবে। 

লা নিনা বলতে বোঝায় মধ্য ও পূর্ব নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বৃহৎ আকারের শীতলতা। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালনের পরিবর্তনের সাথে মিলিত হয়। এটি সাধারণত প্রভাবিত অঞ্চলে এল নিনোর মতো আবহাওয়া এবং জলবায়ুর বিপরীত প্রভাব ফেলে।

লা নিনার বিপরীত হলো এল নিনো। এতে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের উপরের ভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকের থেকে বৃষ্টিপাত কম হয়। বন্যা এবং খরার প্রাদুর্ভাবও বেশি হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শীতও চলে লম্বা সময় ধরে।

প্রতিবেদনটির ভাষ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর উপরিভাগের ব্যবহারযোগ্য পানির উৎসগুলোকে প্রভাবিত করছে। বিশ্ব উষ্ণায়নে হিমবাহের বরফ গলে নদীতে পানির পরিমাণ বাড়ালেও সময়ের আলোকে সেটি কমছে। এতে প্রভাবিত হচ্ছে উত্তরাখণ্ড ও পাঞ্জাব। 

মাটিতে সঞ্চিত পানির ওপর ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মাটিতে আর্দ্রতার পরিমাণ, ভূগর্ভস্থ পানি, বরফ, গাছপালায় সঞ্চিত পানি, নদী ও হ্রদের পানির পরিমাণ মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতে সঞ্চিত পানির পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম। কোথাও স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম। গঙ্গা ভারত ও বাংলাদেশে প্রবাহিত একটি আন্তর্জাতিক নদী। দক্ষিণ ও পূর্বে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। এক্ষেত্রে এর দুটি শাখা একটি ফারাক্কা বাঁধ থেকে এসে ভাগীরথী ও হুগলী নদী নামে মূলত দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। অপরটি বাংলাদেশ সীমান্তে মহানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নামে গোয়ালন্দ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে।

গত ১ মার্চ বিবৃতিতে ডব্লিউএমওর মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেছেন, ২১ শতকের প্রথম তৃতীয় গভীর লা নিনা অবশেষে শেষ হতে চলেছে। লা নিনার শীতল প্রভাব ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রায় একটি অস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। যদিও গত আট বছরের সময়কাল রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল। এল নিনো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সংমিশ্রণের কারণে ২০১৬ সালটি বর্তমানে রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর।

যুক্তরাজ্যের গত বছরের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০২৬ সাল পর্যন্ত অন্তত এক বছর ৯৩ শতাংশ উষ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা অস্থায়ীভাবে প্রাক-শিল্প যুগের উপরে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর ৫০:৫০ সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান লা নিনা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল। 

ডব্লিউএমওর চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জারি করা একটি নতুন আঞ্চলিক জলবায়ু দৃষ্টিভঙ্গিতে সতর্ক করে জানানো হয়েছিল, হর্ন অফ আফ্রিকার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কারণ আসন্ন মার্চ-মে বর্ষা মৌসুম খারাপ হবে।

এল নিনো এবং লা নিনা ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই ঘটে। কিন্তু এটি মানব-প্ররোচিত জলবায়ু পরিবর্তনের পটভূমিতে ঘটছে, যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরনকে প্রভাবিত করছে এবং আবহাওয়াকে আরও চরম করে তুলছে।

বহু বছরের লা নিনার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবগুলো মূলত এর দীর্ঘ সময়কাল এবং ক্রমাগত সঞ্চালনের অসঙ্গতির কারণে হয়। এটি একক লা নিনা থেকে আলাদা। প্রতি দুই থেকে ১০ বছর অন্তর এবং গড়ে প্রায় চার বছর অন্তর এল নিনোর আবির্ভাব হয়ে থাকে। এই উষ্ণ এল নিনোর আগমনের ফলে শীতল উত্তরমুখী পেরু স্রোতের ঊর্ধ্বগমন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে সেই অঞ্চলের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয়। এছাড়া উদ্ভিদ প্লাংকটনের পরিমাণ হ্রাস পায় বলে মাছের উৎপাদন কমে যায়। এতে পেরু, ইকুয়েডর ও উত্তর চিলির মৎস শিকারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা