× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অ্যাডিনোভাইরাসে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত হাজারো শিশু, সতর্ক বাংলাদেশ

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩ ০১:১০ এএম

প্রতিকী ছবি

প্রতিকী ছবি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শ্বাসকষ্ট এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ নিয়ে একের পর এক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। মূলত তারা প্রাণঘাতী অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। প্রায় মাসব্যাপী এর সংক্রমণে সেখানে ৯৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ দিনে কেবল সেখানকার বিসি রায় শিশু হাসপাতালেই ৪৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবারও (৬ মার্চ) মারা গেছে দুই শিশু। তার আগের দিন রবিবার তিন শিশুর মৃত্যু হয়, যা নিয়ে রাজ্যজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এর আগে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অ্যাডিনোভাইরাস কার্যত মহামারির রূপ নিয়েছে। গতকাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যে এখন পর্যন্ত অ্যাডিনো উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি শিশু।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিক্যাবল ডিজিস কন্ট্রোল (সিডিসি) প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাও করেছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে ভাইরাসটি এলে তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে বলে জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

এ ভাইরাসের ভয়ংকর দিক হলো, অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তী সময়ে তারা মারাত্মক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, অ্যাডিনোভাইরাস মারাত্মক হেপাটাইটিসের কারণ হতে পারে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আলাবামা অঙ্গরাজ্যের ৯ শিশু অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর ওই ৯ শিশুর মধ্যে তিনটি মারাত্মক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়, যাদের কেউই আগে কোভিডে আক্রান্ত হয়নি। 

যুক্তরাষ্ট্রের ৯ শিশুসহ ওই বছর বিশ্বব্যাপী ১৬৯ শিশু অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৭ শিশুর যকৃৎ প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়েছিল। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানায়, সম্ভবত অ্যাডিনোভাইরাসের সঙ্গে হেপাটাইটিসের সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

হেপাটাইটিস হলো যকৃতের প্রদাহ, যা সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ হালকা থেকে গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। অবশ্য গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনা তুলনামূলক কম। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এবং শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা বা হৃদরোগ থাকলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে সাধারণ সর্দি বা ফ্লুর মতো উপসর্গ। এ ছাড়া জ্বর, গলাব্যথা, তীব্র ব্রঙ্কাইটিস (শ্বাসনালিতে প্রদাহ), নিউমোনিয়া, কনজেক্টিভাইটিস এবং তীব্র গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস পাকস্থলী বা অন্ত্রের প্রদাহ যা ডায়রিয়া, বমি, বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা সৃষ্টি করে।

চিকিৎসা

এ রোগের কোনো অনুমোদিত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিত্সাও নেই। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে এর উপসর্গ হালকা। বিশ্রাম ও ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ ব্যথার ওষুধ বা জ্বর কমানোর ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি

অ্যাডিনোভাইরাস মোকাবিলায় ইতোমধ্যে রাজ্যের জেলাগুলোর প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালসহ মহকুমা হাসপাতালগুলোয়ও বিশেষ বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও শিশুদের মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। বর্তমানে শিশুদের অ্যাডিনো উপসর্গ শনাক্ত করতে এবং সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ রাজ্যজুড়ে ঘরে ঘরে সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের বিভিন্ন তরঙ্গের সময় একই ধরনের সমীক্ষা চালু করেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। ওই উদ্যোগ কাজে আসায় অ্যাডিনোভাইরাস মোকাবিলায় একই ব্যব্স্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। 

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, কর্মীরা তাদের সমীক্ষার একটি রিপোর্ট তৈরি করবে এবং তাদের সুপারভাইজারদের কাছে সেটি জমা দেবে। সুপারভাইজাররা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে ওই তথ্য পাঠাবে। কর্মীরা অসুস্থ শিশুদের কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সাহায্য করবে। তাদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার বিষয়েও সচেতন করবে।

কলকাতা ছাড়াও জেলাগুলো থেকে অ্যাডিনো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে শিশু ভর্তির হার ক্রমাগত বাড়ছে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২ মার্চ রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যেই রাজ্যের সব স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে সমীক্ষার জন্য একটি ফরম্যাট পাঠিয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমীক্ষা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সমীক্ষা তাদের একটি নির্দিষ্ট ব্লক বা জেলায় কত শিশু অ্যাডিনো উপসর্গে আক্রান্ত সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পেতে সাহায্য করবে। প্রত্যন্ত জেলা থেকে শিশুদের নিয়ে পরিবারের সদস্যরা কলকাতার হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জেলা স্তরেই চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব বলেই দাবি করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। 

রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বিশেষ হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বেসরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ২১৩ জন।

সূত্র : সিএনবিসি, সিডিসি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা