× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ

দায়সারা তদন্ত রাজউকের

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৮ এএম

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেকটাই দায়সারাভাবে তদন্ত শেষ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সোমবার (১৩ মার্চ) রাজউক চেয়ারম্যানকে দেওয়া দুই পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে ভবনটির ব্যবহার উপযোগিতা নিয়ে নানা সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বিস্ফোরণের কারণ বা ভবনের অনুমোদনের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। 

বিস্ফোরণের দিনই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দুটি কমিটি গঠন করেছে রাজউক। একটি কমিটি ভবনটি ব্যবহারের উপযোগিতা নিয়ে কাজ করবে। অপরটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ‘কারণ অনুসন্ধান’ কমিটির কার্যক্রমও স্থগিত করে দিয়েছে সংস্থাটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কমিটির এক সদস্য প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ কমিটির কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।

ভবন ব্যবহারের উপযোগিতা নির্ণয়ে গঠিত কমিটি ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে

দায় রাজউককেই নিতে হবে

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ ঘটা ভবনটির বেজমেন্টে ছিল গুদাম; একতলা ও দোতলায় স্যানিটারি সামগ্রীর দোকান; তৃতীয় তলায় ‘সুজুতি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান; চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ভবন মালিকের দুই ছেলে ও পরিবার থাকত; পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় থাকত ভাড়াটিয়ারা। 

ভবনটির নকশা রাজউক খুঁজে না পেলেও মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া একটি অনুলিপি সঠিক ধরে নিয়েছে সংস্থাটি। সেই নকশায় ভবনটির পাঁচ তলা পর্যন্ত অনুমোদনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য- এ ভবনের দুই তলা নকশাবহির্ভূততভাবে তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখার কথা থাকলেও পুরোটাই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। 

তবে তদন্ত প্রতিবেদনে এ নিয়ে কোনো কথা নেই। অথচ নকশাবহির্ভূতভাবে ভবন তৈরি করলে সাত বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।

জানতে চাইলে জাতীয় বিল্ডিং কোড প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভবনটি যদি পাঁচ তলা থেকে সাত তলা করে থাকে, তাহলে প্রথমেই রাজউকের কাছে আসা দরকার ছিল। দুই তলা সম্প্রসারণের বিষয়টি রাজউককে না জানিয়ে করা হলেও দায় রাজউকেরই। কেননা নকশাবহির্ভূত ভবন তৈরি হলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাদের।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে যা আছে

গত ৭ মার্চ সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই দিনই ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজউক। দুই কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী রবিবার রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে পাঁচটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। 

তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে- বিশদ প্রকৌশলগত মূল্যায়ন (ডিইএ) না হওয়া পর্যন্ত ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না। একই সঙ্গে তৃতীয় পক্ষ (থার্ড পার্টি) দিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে ডিইএ করাতে হবে। বিশেষজ্ঞ থার্ড পার্টি কর্তৃক ডিইএ সনদসহ সব কার্যক্রম আগামী ছয় মাসে শেষ করতে হবে। 

সাধারণত মেরামত খরচ ৩০ শতাংশের ওপরে গেলে ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেয় রাজউক। এক্ষেত্রে ডিইএ রিপোর্ট পেলেই বোঝা যাবে ভবনটি ভাঙতে হবে, নাকি মেরামত করতে হবে। এই রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সিদ্দিকবাজারের ধসে পড়া ভবনটিতে কেউ বসবাস করতে পারবে না। 

তা ছাড়া ব্যস্ত সড়কের পাশে থাকায় সেখান দিয়ে বাসসহ হালকা যানবাহন চলাচল করার প্রস্তাব করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাসসহ অন্যান্য হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে রাত ১০টার পর থেকে সকাল ৬টার আগ পর্যন্ত বড় ট্রাক বা লরি চলাচল করা থেকে বিরত রাখতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.) গতকাল বিকালে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ব্যবহারে উপযোগিতার বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করতেই এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমরা সব বিষয়েই আলোচনা করেছি। কিন্তু কমিটির সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে ভবন ব্যবহারের উপযোগিতা ছাড়া অন্য কোনো বিষয় এখানে আনা হয়নি। 

কমিটির সদস্য ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ভবনটি ভাঙতে হবে কি না, এ জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। রেট্রোফিটিং কাজ শুরু করার আগে কলামগুলোকে স্ট্যাবল করতে হবে। স্ট্যাবল করার পর বোঝা যাবে ভবনটি টিকবে কি না। এক থেকে দুই মাস বিল্ডিংয়ের মাটি পরীক্ষা করতে হবে। ভবনের প্রত্যেকটা বিম-কলাম চেক করতে হবে। মাটির কোয়ালিটি এবং রডের কোয়ালিটি দেখতে হবে। 

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও রাজউকের জনবল থাকলেও সেই সক্ষমতা তাদের নেই। এ কারণে তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ করতে হবে। তারা গবেষণা করবে এবং নানা বিষয়ে যাচাই করে কাজ করবে।

৭ মার্চ পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ২৪ জন মারা যান। নিচের দুই তলার ৯টি কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ভবনটি টিকিয়ে রাখতে কাজ করছে রাজউক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা