× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাধীনতার রূপকারের জন্মের শুভক্ষণ আজ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ০০:০৭ এএম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

‘ধন্য সেই পুরুষ যার নামের ওপর পতাকার মতো/দুলতে থাকে স্বাধীনতা’- আজ সেই ধন্য পুরুষের, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিন, বলার অপেক্ষা রাখে না বাঙালি জাতিরও এক মাহেন্দ্রক্ষণ, মাহেন্দ্রক্ষণ এ জনপদে বসবাসরত সকল জনগণের; কেননা ১৭ মার্চের সেই খোকাই মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছিলেন তাদের মনে, সংঘবদ্ধ করেছিলেন তাদের নতুন এক রাষ্ট্রের অভিযাত্রায়।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতার জন্মদিনটি সারা দেশে উদযাপিত হবে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্তোলন করা হবে জাতীয় পতাকা। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ উপলক্ষে জাতীয় শিশু সমাবেশ এবং তিন দিনব্যাপী বইমেলাও হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই জাতীয় শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

১৯২০ সালের এই দিনে বাইগর নদের ধারে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহাকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে জীবনের একটি বড় অংশই থাকতে হয়েছে কারাগারে।

বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরবর্তী সময়ের ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং আপসহীন নেতৃত্বের কারণে জনগণ তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ অভিধায় অভিষিক্ত করে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পূর্ব বাংলায় নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করলে অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন, যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইউনেস্কো এ ভাষণকে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিচালনার মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ওইদিন মধ্যরাতে বা ২৬ মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বহু কাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা।

সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরন্তর অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি পরিষদের জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে দেখা যায়, জনগণের চোখে তিনিই ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বিভিন্নমুখী কার্যক্রম নিতে থাকেন। অন্যদিকে যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বিরুদ্ধে শুরু করে ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে ক্ষণজন্মা পুরুষ বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘স্বাধীনতার প্রতীক’। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশি গণমাধ্যমে তাকে অভিহিত করা হয় ‘রাজনীতির ছন্দকার’ হিসেবে। বিশ শতকের কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো তাকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাঁর নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধী বলেন, আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’

শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তাঁর স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।’

তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিত্রিত করলেও কালপরিক্রমায় ওই দেশটিরই অনেকে তাঁকে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাবেক পাকিস্তানি (বেলুচিস্তান) অফিসার মেজর জেনারেল তোজাম্মেল হোসেন মালিক পরে তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘বস্তুত মুজিব দেশদ্রোহী ছিলেন না (পাকিস্তানে তাঁকে সেভাবে চিত্রিত করা হলেও)। নিজ জনগণের জন্য তিনি ছিলেন এক মহান দেশপ্রেমিক।’

আরেকজন সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন পাকিস্তানি জান্তার মুখপাত্র মেজর সিদ্দিক সালিক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ৭ মার্চের ভাষণের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল আশাব্যঞ্জক বাণী শ্রবণ শেষে মসজিদ অথবা গির্জা থেকে তারা বেরিয়ে আসছেন।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা