× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সপ্তাহ ঘুরলেই বাড়ছে মাছ-মাংসের দাম

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫২ এএম

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১০:২০ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

মুরগির বাজারে অস্থিরতাটা কাটছেই না। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তিন মাসে প্রকারভেদে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এমন দাম বৃদ্ধিতে একদিকে বিক্রি কমেছে বিক্রেতাদের, অন্যদিকে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের। তবে রমজানে মুরগির দাম আর বাড়বে না বলে দাবি কৃষিমন্ত্রীর। 

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার সাদা মুরগি ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০ টাকা। একইভাবে দাম বেড়ে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা দরে, যার দাম গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০ টাকা। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬৩০ টাকায়।

তিন মাসের বাজারদর বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময়ে সাদা ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৭০ টাকা। আর দেশি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০ টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও মার্চের ১৬ তারিখে এসে তার বাজারদর দাঁড়িয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। একইভাবে ২৭০ থেকে ২৯০ টাকার সোনালি মুরগির দাম উঠেছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। আর ৫২০ থেকে ৫৭০ টাকার দেশি মুরগির দাম এখন ৬৫০ টাকা পর্যন্ত।

মুরগির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের জননী মুরগি হাউসের বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, মুরগির সরবরাহ কম। সরবরাহ না বাড়া পর্যন্ত বাজার ঠিক হবে না। ১৫০টা মুরগি অর্ডার দিলে হাতে পান ১১০টা। এভাবে কম পেলে বাজারে সংকট তৈরি হয়। আর সংকট তৈরি হলে দাম এমনিতেই বাড়তে থাকে।

মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের বিক্রেতা লিটন মিয়া বলেন, ‘মুরগির দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ায় তো বিপদেই আছি। আগের মতো বেচাকেনা নেই। আগে দাম কম থাকায় একজন ক্রেতা একসঙ্গে ৩-৪টা মুরগি নিলেও এখন নিচ্ছে একটা করে। বেচাকেনায় মন্দা, বাজার ঠিক হওয়া দরকার। আমরা কম দামে মুরগি পামু, কম দামে বিক্রি করব; এটাই চাওয়া আমাদের।’

মুরগির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, ‘মাছ-মাংস খাওয়ার কি আর উপায় আছে? যে দাম, এই দামে কেনা যায় না। রিকশা চালাই, যা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না। পোলাপানের পড়ার খরচ, বাসাভাড়া এসব দিয়ে কীভাবে যে চলি, তা একমাত্র আমিই জানি। খামুটা কী, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়তি। মুরগির কেজি যদি হয় ২৬০ টাকা, তবে মাংস বলতে কিছু খাওয়ার থাকে? হায়রে দাম, আর কত বাড়বি?’

রাজধানীর বাজারগুলোতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা দরে। তিন মাস আগে গরুর মাংস ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। তিন মাসের ব্যবধানে খাসির মাংসের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।

প্রতিডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায় ও সাদা ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। প্রতিহালি (৪টি) ডিম (লাল ও সাদা) বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা দরে। তিন মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে ২ টাকা পর্যন্ত। তবে গত মাসে ডিম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজারে সরবরাহ সংকটে কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মাছের দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশের দাম। আকারভেদে ইলিশের দাম কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ওজনভেদে ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আকারভেদে পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২১০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কৈ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৭০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিন মাসের ব্যবধানে পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই ও সিলভার কার্প মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।

মাছের দামের বিষয়ে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া বাজারের বিক্রেতা আল আমিন বলেন, মাছের সরবরাহ কিছুটা কমেছে, তাই দাম বাড়তি। কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্তও বাড়ছে। বাজারে মাছ যত আসবে, তত দাম কমবে।

কারওয়ানবাজারের নিয়মিত ক্রেতা রহিজ উদ্দিন বলেন, মাছের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, আবার কমে যায়। এখন দেখছেন ইলিশের দাম বাড়তি। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম তাই দাম বাড়তি।

এদিকে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাজারে প্রতিকেজি শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে।

কিছুদিন পর শুরু হবে রমজান। কিন্তু এখনও স্বাভাবিক হয়নি চিনির বাজার। আগের বাড়তি দর অর্থাৎ ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে খোলা চিনি। সরবরাহ কম রয়েছে প্যাকেটজাত চিনির। এ ছাড়া রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ ছোলার দাম এক বছরের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গত বছর ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে।

মুরগির দাম নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মুরগির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার। রোজার সময় মুরগির দাম আর বাড়বে না। পোলট্রি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সজাগ থাকবে। তবে বাজারে ইতোমধ্যে অনেক দাম বেড়েই আছে। এই অস্বাভাবিক দাম রাতারাতি কমে আসবে না।

গতকাল রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোলট্রি শোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওয়াপসা-বিবির সভাপতি মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এমদাদুল হক তালুকদার, বিএলআরই-এর মহাপরিচালক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মুরগির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তবে বাজার স্বাভাবিক হতে কয়েক মাসের মতো অপেক্ষা করতে হবে।

দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, বাজারে সরবরাহ সংকটের কারণেই মূলত মুরগির দাম বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খামারিরা লোকসানে রয়েছে, অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে, নতুন বাচ্চা তোলেনি। যার ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ অনেক কমেছে। এ ছাড়া মুরগির খাবারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এসব কারণে বাজার অনেক চড়া, মানুষ কিনতে পারছে না।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ভোক্তা, উৎপাদক, খামারি, ব্যবসায়ীসহ সবার স্বার্থ সুরক্ষায় একটি শক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতিমালা থাকা দরকার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা