× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পে ভাস্কর্য নির্মাণ

নকশাতেই ৫ বছর পার

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৬ এএম

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৮ এএম

নকশাতেই ৫ বছর পার

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নানা ইতিহাস। ঐতিহাসিক এই মাঠেই একাত্তরের ৭ মার্চ কালজয়ী ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীপ্ত কণ্ঠে বাঙালি জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর এই উদ্যানেই আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও উদ্যানের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ কাজ শেষ করতে পারেনি সরকার।

২০১৮ সালে বঙ্গন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও এর নকশা চূড়ান্ত ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই। এরই মধ্যে আরেক দফা মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও ইতিহাসবিদরা বলছেন, দুটি ভাস্কর্যের নকশা চূড়ান্ত করতে যদি ৫ বছর পেরিয়ে যায় তাহলে কাজ শেষ করতে কত বছর লাগবে? এ ছাড়া উদ্যানটিতে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান সংরক্ষণসহ বেশকিছু উন্নয়ন কাজ হাতে নিলেও তা চলছে কচ্ছপ গতিতে। প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আক্ষেপ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। 

২০০৯ সালে ২৫ জুন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানটি সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। ওই বছরের ৮ জুলাই আদালত ভাষণের স্থানসহ মোট ৭টি স্থান সংরক্ষণ ও স্বাধীনতা-পরবর্তী নির্মিত, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে না এমন স্থাপনা সরাতে আদেশ দেন। পাশাপাশি রায়ে উদ্যানের ওই অংশটিকে ‘স্বাধীনতা উদ্যান বা লিবার্টি স্কয়ার’ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

রায়ে যে স্থানগুলো চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেওয়া ভাষণের স্থান; ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণের স্থান; একাত্তরের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের শপথের স্থান; ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান; পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান; ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান।

এর পর ২০১৮ সালে ঐতিহাসিক এই স্থানগুলোর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্মৃতি ধরে রাখতে ওই ভাষণের স্থানে ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চ এবং ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি বেদির বঙ্গবন্ধুর ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ১৫ ফুট উচ্চ এবং ৮ ফুট বেদির আরেকটি ভাস্কর্য, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান সংরক্ষণসহ আনুষঙ্গিক বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ পার হলেও এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও আত্মসমর্পণ স্থানের দুই ভাস্কর্যের মডেল চূড়ান্ত ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে ব্যয় বাড়িয়ে আবারও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয়ও বেড়েছে ৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যার ফলে বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। 

ভাস্কর্য স্থাপন ছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাকি কাজগুলো বর্তমানে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচশটি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ কার পার্কিয়ের ছাদ ঢালাইয়ের ভৌত অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ, অন্ডারপাসের ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ, মসজিদের ফিটিংসের কাজের ভৌত অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ, সাবস্টেশন ও জেনারেটর ভবন নির্মাণকাজের ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ, উদ্যান এলাকায় সাতটি ফুড কিওস্ক নির্মাণকাজের ভৌত অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ, ওয়াটার রিজার্ভার ভৌত অগ্রগতি ৮২ শতাংশ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ৬২ শতাংশ। 

ক্ষুব্ধ ইতিহাসবিদরা

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ হয়নি; সরকার করেনি তাই। এখানে শুধু ভাস্কর্য নয়, আরও অনেক কিছু করা উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি। কারণ বাঙালি ইতিহাস ভুলে যায়, ইতিহাস ভুলে খায়, ইতিহাস বিকৃত করে। 

আরেক ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থানগুলো রক্ষা করার দাবি জানিয়েছিলাম অনেক আশা করে। কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি। মৃত্যুর আগে কাজগুলো শেষ দেখে যেতে পারব বলে মনে হয় না। সেজন্য বিষয়টি নিয়ে এখন আমরা কোনো চিন্তা করি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে পদ্ধতিগতভাবে (সিস্টেমিটেকলি) ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এটা আমরা কখনও চাইনি। 

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, শুধু সোহরাওয়ার্দী নয়, সারা দেশেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হেফাজতের আন্দোলনের মুখে পিছু হটে সরকার। স্বাধীন বাংলাদেশে, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকালীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হেফাজতের ভয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন কাজ আটকে আছে, যা খুবই দুঃখজনক। এই সরকারের আমলে যদি ভাস্কর্য নির্মাণ ও শিল্পচর্চার অগ্রগতি না হয়, তা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এদের সঙ্গে সমঝোতা করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়া যাবে না। তাই আমরা চাই দ্রুত এসব ভাস্কর্য নির্মাণ করা হোক। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা যা বললেন

প্রকল্প সম্পর্কে জানতে মোবাইল ফোনে কল করলে প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. হাবিবুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন। তবে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা) আবুল বাকের মো. তৌহিদ বলেছেন, প্রকল্পটির রিভিশন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। অনুমোদন পেলেই বাকি কাজ শুরু হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রথমে কংকিটের ভাস্কর্য নির্মাণ করার কথা ছিল। পরে ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রকল্প সংশোধনী হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ এসব কাজ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ১ বছরের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা