জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মানে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ সংবলিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদায় নেওয়ার আগের দিন গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে ঘটা করে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে এই কার্ড তুলেও দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এ কার্ড দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানান জটিলতায় কাউকে আর এই কার্ড দেয়নি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ায় আবারও এই কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। তবে এবার নিজ উদ্যোগে এসব কার্ড দেবে না ইসি। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আবেদন আসার পর সেই আবেদন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় তালিকা দেখে সম্মতি দিলেই সেই কার্ড বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পৌঁছে দেবে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এই বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্টকার্ড দেওয়ার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া গেছে। শিগগিরই এই কার্ড দেওয়া শুরু হবে। কবে থেকে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত স্মার্টকার্ড প্রিন্ট বন্ধ আছে। প্রিন্ট শুরু হলেই কার্যক্রম শুরু হবে।
হুমায়ূন কবীর আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্টকার্ডের জন্য আবেদন পাওয়ার পর আমরা সেটি যাছাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় তালিকা দেখে নিশ্চিত করার পর তা প্রিন্ট দেব।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ শব্দটি ব্যবহারের বিধান করে ২০২০ সালে গেজেট প্রকাশ করে। ওই গেজেটে বলা হয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮-এর ধারা ২(১১)-এ মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এনআইডি দেখেই যাতে সবাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের চিনতে পারেন, সেই জন্য জাতির সূর্যসন্তানদের সম্মানে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ সংবলিত এনআইডি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় নূরুল হুদা কমিশন। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর কমিশনের ৯২তম সভায় বিষয়টি নিয়ে প্রথম নথি উপস্থাপন করা হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নমুনা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখাটি এনআইডির কোন অংশে লেখা থাকবে, এর জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপ করার প্রয়োজন হবে কি না পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। এই বিষয়ে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি ২১ ডিসেম্বর বৈঠক করে। ওই সভায় স্মার্টকার্ডে যে চিপটি রয়েছে, তার নিচে বীর মুক্তিযোদ্ধা কথাটি লেখার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সঙ্গে এই বিষয়ে পরামর্শ করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে টেকনিক্যাল কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। মহাপরিচালক এটি কমিশনে পেশ করলে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা সংবলিত স্মার্টকার্ডটিতে অনুমোদন দেয় কমিশন।
এরপর প্রাথমিকভাবে ১০০ কার্ড প্রিন্ট দেওয়া হয়। গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ ৬৮ জনের হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া হয়।
প্রথমেই বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা সংবলিত স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীরউত্তম মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরের হাতে। এ ছাড়া সেদিন মোহাম্মাদ আবু হাফিজ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এসকে হাবিবুল্লাহ, মো. ওয়ালিয়ার রহমান, তিমির নন্দী, রানা দাশগুপ্তসহ অনেকের হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েই বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্ডকার্ড বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেয় বিদায়ী কমিশন। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও ইসির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। যার কারণে এই স্মার্টকার্ড প্রিন্ট নেওয়া যায়নি। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বৈঠকেই বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্টকার্ড প্রিন্টের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ায় সেই জটিলতার নিরসন হয়েছে। এখন আবেদন মন্ত্রণালয় থেকে যাছাই করে এই কার্ড দেবে কমিশন।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.