প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩ ১৪:২০ পিএম
আপডেট : ১১ মে ২০২৩ ১৬:২৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ (বৃহস্পতিবার) রাতেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।
এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অফিসে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান, আবদুর রহমান খান প্রমুখ।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়টি আজ মধ্যরাতে প্রবল ও আগামীকাল শুক্রবার সকালে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ১৩ মে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে এবং পরে কিছুটা শক্তি কমে যাবে। ১৪ মে (রবিবার) ভোরে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার উত্তর-উত্তর-পশ্চিম থেকে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের কক্সবাজারের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি অগ্রসর হয়নি। বর্তমানে যেভাবে মুখ করে আছে তাতে খুলনা ও ভারতের উড়িশ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শুক্রবার সকালে এটি উত্তর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে যাবে। তখন কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূলের দিকে যাবে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টির বডির গতি ঘণ্টায় ১৫, ১৬, ১৭ বা ১৮ কিলোমিটার। আজ সকাল ৯টার দিকে গতি কিছুটা কমে এসেছে। তাতে প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতি হচ্ছে ৮ কিলোমিটার। এ গতি থাকলে ১৪ মে রবিবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সাইক্লোনটির গতি এক এবং তার চারপাশের গতি আরেক। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অগ্রসর হওয়ার গতি ঘণ্টায় বর্তমানে ৮ কিলোমিটার। আর তার চারপাশে বাতাসের গতি ৬২-৮৮ কিলোমিটার। বাতাসের বেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার থাকলে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়, ৮৯-১১৮ কিলোমিটার থাকলে প্রবল ও ১১৯-২২০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। আর ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ হলে সেটিকে বলা হয় সুপার সাইক্লোন।
ঘূর্ণিঝড়ে কেমন জলোচ্ছ্বাস হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জলোচ্ছ্বাস জোয়ারভাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেয়ারের সময় হলে জলোচ্ছ্বাস বেশি হবে আর ভাটার সময় হলে কম হবে। তবে ৪৮ ঘণ্টা আগে আমরা একটি মডেল রান করব। তখন বলা সম্ভব কতটা জলোচ্ছ্বাস হবে।
আজিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১১ দশমিক ২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮ দশমিক ০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) ঘূর্ণিঝড় মোখায় পরিণত হয়েছে।
এটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১২ মে (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সমুদ্র সতর্ক সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে।
তাপপ্রবাহ
তাপপ্রবাহ আর কতদিন চলবে- প্রশ্ন করা হলে পরিচালক বলেন, দেশে তাপপ্রবাহ ১২ মে পর্যন্ত চলতে পরে। শুক্রবার থেকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমতে থাকবে। ১৩ মের পর ঢাকায় বৃষ্টি হবে। সাগরে ঝড় তৈরি হলে বৃষ্টিপাত, বাতাসের আর্দ্রতা কমে গিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানা এলাকায় পরীক্ষা চলবে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।