আমিনুল ইসলাম মিঠু
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ২৩:০৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বিমানের টিকিট চূড়ান্ত ছিল। এর পরও বাংলাদেশ থেকে ৮২৩ হজযাত্রীর হজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নগদ সৌদি রিয়ালসহ তিন হজ এজেন্সির দুই মালিককে দেশটির পুলিশ আটক করায় হজ মিশনে আবারও বিপত্তি দেখা দিয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, এই ৮২৩ জনের বিমান টিকিট আরও ১০ দিন পিছিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে মন্ত্রণালয়।
অনিশ্চয়তায় পড়া হজযাত্রীদের আগামী ১ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে হজ পালনের উদ্দেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হজ এজেন্সির দু’জন মালিককে নগদ ৯ লাখ সৌদি রিয়ালসহ দেশটির পুলিশ আটক করেছে। তারা হলেন- মাহমুদুর রহমান এবং তার ছেলে সাদ বিন মাহমুদ। তাদের তিনটি এজেন্সি- ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলসের ২৯৭ জন, কবা এয়ার ইন্টন্যাশানালের ২৯৫ জন এবং আহসানা মালয়েশিয়া হাজ মিশনের ২৩১ জন, অর্থাৎ মোট ৮২৩ জনের হজ যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১ জুন এসব হজযাত্রীর সৌদি আরব পৌছোনোর কথা ছিল। এক্ষেত্রে তাদের জন্য বাড়িভাড়াসহ অবশিষ্ট প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন। তাই ওই তিনটি এজেন্সির হজযাত্রীর বিমান টিকিট সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সহযোগিতাসহ বিমান টিকিটের তারিখ ন্যুনতম ১০ দিন পিছিয়ে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হজ অফিস বলছে, তিন এজেন্সির দুজন মালিক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে হজ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য টাকাগুলো বহন করেছিল। তবে সৌদি পুলিশ মনে করছে, টাকাগুলো যথাযথ ব্যবস্থাপনায় দেশটিতে যায়নি। এক্ষেত্রে মুদ্রাপাচারজনিত কোনো বিষয় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ওই দুই এজেন্সির মালিককে আটক করে পুলিশ।
জানতে চাইলে হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, টাকাগুলো হজযাত্রীদের ব্যবস্থাপনার জন্য নিয়েছিল তারা। যথাযথ ব্যাংকিং কার্যক্রম ছাড়া এ দেশ থেকেও টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যেহেতু মালিকেরা আটক হয়েছেন, তাই তাদের হজযাত্রীদের পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ১০ দিন পিছিয়ে বিমান টিকিট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ওই দুজন মালিক দ্রুত ছাড়া পেয়ে ফিরে আসবেন এবং হজযাত্রীদের পাঠানোর কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
হজ পরিচালক বলেন, ‘আটককৃতরা নিজেরাই মুক্তি পেয়ে চলে আসবে। সৌদি আরবে আমাদের যারা আছেন, তারাও চেষ্টা করছেন ওই দুজনকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে।’ টাকাগুলো অবৈধ পথে গিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, টাকাগুলো ব্যাংকিং চ্যানেলে ওখানে গিয়েছে। বাংলাদেশ দেশ থেকে সৌদি আরব গিয়েছে ওদের ব্যাংকিং প্রসেসে, যদি অবৈধ হতো, তবে ব্যাংক তো টাকা রিসিভ করতো না। তবে হজ এজেন্সির মালিক যদি ছাড়া না পায় তবে ৮২৩ হজযাত্রীর হজ পালনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য জানাতে পারেনি হজ অফিস।
হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৬ মে) পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১৪ হাজার ৬৩৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। শুক্রবার আরও ১২টি ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করেছে বিমান বাংলাদেশ, সাউদিয়া এবং নাস এয়ারলাইন্স।
হজযাত্রীর ব্যাগে জর্দার কৌটা, বিপাকে এজেন্সি
গত ২৩ মে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাত্রা করার আগে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষার সময় জর্দার কৌটা পায়। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রার ক্ষেত্রে লাগেজে জর্দার কোটা বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু অনুমোদিত বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ পরিচালনাকারী এজেন্সি লাকী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের হজযাত্রীদের লাগেজে জর্দার কোটা পাওয়া যায়। এ নিয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
হজ এজেন্সি লাকী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তার এজেন্সির ফ্লাইট ছিল ২২ তারিখ সকাল ১০ টায়। কিন্তু কারণ দর্শানোর নোটিশে ২৩ তারিখের ফ্লাইটের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নোটিশে যাত্রীর নাম এবং পাসপোর্ট নম্বরও উল্লেখ ছিল না। তাই সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রবিবার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিষয়টির জবাব দেবেন।
তিনি বলেন, ফ্লাইটের আগে যেসব ট্রেনিং হয় সেখানে হজযাত্রীদের কী নিতে পারবেন, কী করতে পারবেন, কী পারবেন না ইত্যাদি বিষয়ে জানানো হয়। এখন যাত্রার দিন তো কোনো যাত্রীর লাগেজ তো চেক করা যায় না।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ মে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার প্রথম ফ্লাইট শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে হজযাত্রীদের শেষ ফ্লাইট আগামী ২২ জুন যাবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে মোট যাত্রীর অর্ধেক ৬১ হাজার ১১১ জন হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান। বাকি হজযাত্রী নিবে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাই নাস। হজের আগে বিমান ২১ মে থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ১৬২টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এছাড়া হজ শেষে ২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৬৮ টিসহ মোট ৩৩০ টি হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বিমান গত বছরের মতো এবারও ঢাকা থেকে জেদ্দা ও মদিনায় ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি চট্টগ্রাম এবং সিলেট থেকেও জেদ্দায় ও মদিনায় ফ্লাইট পরিচালনা করবে।