× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি

প্রশাসনে গোপন গুঞ্জন চাপা আতঙ্ক

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ১৩:০৩ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে শোরগোল চলছেই। জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত এই নীতি নিজেদের পক্ষে গেছে এমনটি প্রমাণে মরিয়া দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। অন্য দলগুলোও ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা-বাহাসে পিছিয়ে নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ভিসানীতি নিয়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, রাজনীতি ও কূটনীতি বিশ্লেষক, মানবাধিকারকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মুখর এখন এই নীতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ প্রভাববিষয়ক আলোচনায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি আলোড়ন তুলেছে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও। এ নিয়ে তাদের মধ্যেও চলছে নানা গুঞ্জন। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ অনেকে বিষয়টি নিয়ে চাপে আছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নন।

গত ২৪ মে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না। এ নীতি সরকার সমর্থক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারেন বলে উল্লেখ করেছেন ব্লিঙ্কেন। 

সচিবালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রীর ঘোষণায় বর্তমানদের পাশাপাশি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টিকে বিশেষভাবে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের সংশ্লিষ্টতাই থাকে বেশি।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনিয়মের যে অভিযোগ তোলা হয়; তাতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ করে আসছে সরকারবিরোধী বিভিন্ন পক্ষ। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগও রয়েছে প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বহু কর্মচারীর বিরুদ্ধেও। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, বর্তমান সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতিকে একটি হুঁশিয়ারি বলেই বিবেচনা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে যাদের সন্তানরা পড়াশোনা কিংবা অন্য কাজে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন; সেসব কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেশি। এই ভিসানীতির প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় নানা বিচার-বিশ্লেষণ করছেন তারা। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও কঠোর কোনো পদক্ষেপ আসবে কি না তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন কেউ কেউ। 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেছেন, ‘নতুন ভিসানীতিতে সরকারের কর্মকর্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ভিসানীতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে হয়তো এই নীতিমালা ঘোষণা করেছে তারা।’

কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ কয়েক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এর আগে এত বেশি উৎসাহী ভূমিকায় দেখা যায়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরে দেশের নির্বাচনী, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে সহজেই বোঝা যায়, বর্তমান সরকারকে নানামুখী চাপে ফেলতে একের এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভিসানীতির পর নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও কোনো পদক্ষেপ আসতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় স্বস্তিতে থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এসব ব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না, যুক্তরাষ্ট্র বলছে নির্বাচন প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে এ নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ সুকৌশলে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ নীতির আওতায় পড়বেন। ভবিষ্যতে এর প্রভাব কী হবে তা নিয়ে শঙ্কা থাকাটাই স্বাভাবিক।

সূত্র জানায়, ভিসানীতির কারণে প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় অনেক কর্মকর্তা নড়েচড়ে বসেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন। সবচেয়ে সতর্ক ভূমিকায় রয়েছেন সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকবেন এবং যাদের স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে চাপা আতঙ্কও দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। এদিকে নতুন ভিসানীতি নিয়ে আড়ালে নানা আলোচনা চালিয়ে গেলেও প্রকাশ্যে নীরব ভূমিকায় রয়েছেন প্রশাসনে নিরপেক্ষ বা ভিন্ন মতাদর্শী হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারাও।

দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ভিসানীতির কারণে সরকার চাপে আছে তা বুঝতে পেরে বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টাও হতে পারে। যদিও এতে দেশের কল্যাণের চেয়ে অমঙ্গলের আশঙ্কাই বেশি। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারবিরোধী বা সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। উচ্চপদস্থ যেসব কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্র-সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা